আমরাই বিচারক..

প্রায়শই আমরা একজন মানুষের তাৎক্ষনিক কর্মকান্ড দেখে বা লোকমুখে কিছু শূনে মন্তব্য জুড়ে ফেলি। একে অন্যের সাথে কানাঘুষা করি। ঐ লোকটির কর্মকান্ডের নেপথ্যে কি আছে বা কেনই বা লোকটি এই ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত হলো তা কখনোই জানার বা বুঝার ইচ্ছা পোষন করিনা।

অথচ প্রতিনিয়ত আমরা তাই করে যাচ্ছি। কারো সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে, লোক মুখের কথা শূনে, বা নিজের চোখে বিস্তারিত না দেখে লোকটির উক্ত কর্মকান্ড ভালো বা মন্দ বিশেষন দিয়ে দিচ্ছি। অমুক খারাপ, অমুক ভালো, লোকটা ভালো না, তাকে দিয়ে সমাজের কোন উন্নয়ন হবেনা, সে ধর্ম কর্ম মানে না, নিজের স্বার্থে হারাম কাজকে হালাল করছে, লোকটি পশুর চেয়েও খারাপ – ইত্যাদি ইত্যাদি, কত্তো কত্তো বিশেষন। লোকটির ভালো মন্দ বিচারের দায়িত্ব যেন আমাদের উপরেই পড়েছে, বিচার করে ফেলছি, যেন আমরাই বিচারক।

অর্থাৎ আমরা চোখে যা দেখি আর লোকমুখে যা শুনি, তা দিয়েই মানুষকে বিচার করে ফেলছি। অথচ আমরা জানিও না তাদের অন্তরের অন্তস্থলে কী চলে বা কি আছে। যা কেবলমাত্র বান্দা আর তার মহান রবই (সৃষ্টিকর্তা) জানেন।

উসমানীয় সালতানাতের ঘটনা। সুলতান মুরাদ-৪ এর শাষনামল। সুলতান মুরাদ-৪, যিনি সেপ্টেম্বর 10, 1623 থেকে ফেব্রুয়ারী 8, 1640 পর্যন্ত সালতানাত পারিচালনা করেছিলেন।

সুলতান মুরাদ প্রায়ই ছদ্মবেশে তার সালতানাতের জনগনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বের হতেন। প্রায় সময়ের মতোই এক সন্ধ্যায় তিনি বের হলেন। ঘুরতে ঘুরতে এক জনবহুল স্থানে এসে দেখলেন, এক লোক রাস্তায় মরে পড়ে আছে। তার চারপাশে মানুষে গিজগিজ করলেও কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না মৃত লোকটিকে নিয়ে বা তার সৎকারের জন্য।

সুলতান আশেপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘লোকটা মরে পড়ে আছে, তবুও কেউ এগিয়ে আসছে না কেন? লোকটির পরিবারের কি কেউ নেই?’

‘আরে এ তো একজন ব্যাভিচারী, মদ্যপ কুলাঙ্গার!’ উপস্থিত লোকগুলো বলে উঠল।

‘যাই হোক, সে তো আমাদের নবি (সাঃ)-এর উম্মাতেরই একজন, নাকি? এখন আমাকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন’- সুলতান বললেন।

লোকদের সহায়তায় সুলতান মৃত লোকটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলেন। এরপর সবাই চলে গেল। সুলতান থেকে গেলেন তার সহযোগী সমেত ।

লোকটির স্ত্রী মৃতদেহকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় থাকবেন! হে আল্লাহর বান্দা, ও আমার প্রিয়তম স্বামী, আমি তো দেখেছি আপনি সবসময় কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন!’

সুলতান স্ত্রী মহিলাটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘উপস্থিত জনতার কাছে যা কিছু শুনলাম, এরপরও সে নিষ্ঠাবান হয় কীভাবে ? যেখানে দুশ্চরিত্রের জন্য সে এতটাই ঘৃণিত যে ,তার মৃত্যু নিয়েও কারো মাথা ব্যথা ছিল না ?’

লোকটির স্ত্রী জবাব দিলেন, ‘আমি জানতাম এমনই হবে। তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় যেতেন ও তার সামর্থ অনুযায়ী পয়সায় যতটকু সম্ভব হতো, ততটুকু শরাব কিনে ঘরে নিয়ে আসতেন। এনেই সেগুলো নর্দমায় ফেলে দিতেন। বলতেন, ‘আমি আজ মুসলিমদের অল্পখানি বাঁচিয়ে দিলাম।’

তিনি কোনো পতিতাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন এবং ভোর পর্যন্ত তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। তিনি বলতেন, ‘আজ আমি এক তরুণীকে এবং ঈমানদার কোনো যুবককে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচালাম।’

লোকেরা তাকে শরাব কিনতে ও পতিতালয়ে যেতে দেখত এবং এই কারণেই তারা তাকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলতো এবং ঘৃনা করতো।

আমি একদিন তাকে বললাম, ‘আপনি মারা গেলে না কেউ গোসল করানোর থাকবে, না কেউ জানাজা পড়তে আসবে। কবর দেওয়ার জন্যও তো কেউ থাকবে না।’

তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘ভয় পেয়ো না, ঈমানদারদের সুলতান আর সকল ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই আমার জানাজায় উপস্থিত থাকবেন।’

সুলতান এই কথা শুনে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কারণ আমিই সুলতান মুরাদ। আগামীকাল আমরা তাকে গোসল করিয়ে, জানাজা পড়ে সম্মানের সাথে কবর দিয়ে আসব।’

এমনই হলো। স্বয়ং সুলতান মুরাদ, রাজ্যের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সকল ধর্মপ্রাণ ও এলাকার জনসাধারণ সবাইই তার জানাজায় অংশগ্রহণ করল।

তাই আমাদের উচিত ভেবে চিন্তে, সত্য জেনে কারো সম্পর্কে কিছু বলা বা মন্তব্য করা। পাছে না আমরা গুনাহের ভাগিদার হয়ে যাই। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে :  

‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।’

পরিশেষে : আল্লাহ আমাদের অনুমান করে কথা বলা থেকে হেফাজত করুক। আমিন।

আরো পড়ুন :




”সাধনা ঔষধালয়, ঢাকা” একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানের নাম সাধনা ঔষধালয়ঢাকা। একটি আয়ুর্বেদ ঔষধের প্রতিষ্ঠান। আজকের দিনে বড়ই বেমানান এই নাম আর এই প্রতিষ্ঠান, আর এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের পথ্য। 

সাধনা প্রতিষ্ঠানের দোকান বন্ধ। অথচ কর্মচারীদের এখনও বসিয়ে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে মাহিনা সারা ভারতবর্ষে একটি বিরল ঘটনা।

এ এক ইতিহাস। ১৯০৫ সাল।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন।  চারিদিকে তখন স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ার। বিদেশি পণ্য বয়কট করার আহবান।

দেশিয় শিল্প গড়ে তুলতে নেমে পড়লেন একদল উদ্যোগী বাঙালি যুবক। একের পর এক গড়ে উঠল দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এইচ বোসের কলের গান, কেশতেল, দেলখোশ সুবাস, সি কে সেনের জবাকুসুম, বেঙ্গলপটারি, বেঙ্গল গ্লাস ফ্যাক্টরি, পি এম বাকচির কালি, সুগন্ধি, মোহিনী মিলের কাপড়ের কারখানা, সেন রেলের সাইকেল কারখানা এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যাল আরো কত কত শিল্প।

আর এই পথ ধরেই এক উদ্যমী বাঙালি যুবক গড়ে তুললেন ঢাকায়, সাধনা ঔষধালয়।

সাধনা ঔষধালয়, ঢাকা
সাধনা ঔষধালয়, ঢাকা

নাম যোগেশচন্দ্র ঘোষ। সেই আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে এম এ। ভাগলপুরে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মাস্টারমশাই আচার্য পি সি রায়ের অনুপ্রেরণায় গড়ে তুললেন আয়ুর্বেদ ঔষধের কারখানা। নাম রাখা হলোসাধনা ঔষধালয়, ঢাকা”।

অচিরেই এই প্রতিষ্ঠানের নাম ঢাকা ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা ভারতে সুভাসচন্দ্র বসু, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই প্রতিষ্ঠানের ওষুধ ব্যবহার করতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জ্বর হলেই এই প্রতিষ্ঠানের ওষুধ খেতেন।

Prafulla Chandra Ray, Ashrafuddin Ahmad Chowdhury, Netaji Subhas Bose and poet Kazi Nazrul Islam at Sadhana Aushadhalaya (1924)

সেই সময় প্রায় চারশোর বেশি শাখা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। পণ্য রফতানি হত আমেরিকা, চীন, ইরাক, ইরান, আফ্রিকার দেশে।

তারপর এল সেই দিন ! ১৯৭১ সাল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

যোগেশচন্দ্র তার পরিবারের সকলকে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতায় । শত বলা সত্বেও বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেন না তিনি। বললেন, মরলে এখানেই মরবো। তবু এদেশ ছেড়ে কোথাও যাবো না। ফলে যা হবার তাই হল।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস। সশস্ত্র খান সেনেরা কারখানায় এলো। গুলি করে খুন করল যোগেশচন্দ্র ঘোষকে। বর্বর খান সেনারা থামিয়ে দিতে চাইলো মাকে ভালোবাসার এক দুর্বার সন্তানকে। তার কর্মকান্ডকে। তার দেশ প্রেমকে। মানবপ্রেমকে। 

ফ্যাক্টরি বন্ধ হল না। কারণ সাধনা ঔষধালয়ের প্রডাক্টের চাহিদা তখনও ভারতজুড়ে।

একশো তিরিশটা দোকান চলছে সাড়া ভারতে। কলকাতায় তিরিশটা শাখা। দাক্ষারিস্ট, চ্যবনপ্রাশ, সারিবাদি সালসা, জ্বরের ওষুধ, বিউটি ক্রিম আরো কত প্রডাক্টের তখনও হেভি ডিমান্ড। 

১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোম্পানি চার কোটি টাকা লাভ করলো।

তারপর ২০০৮ থেকে ২০১২ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় আধুনিকী করণের অভাবে। অনেক দোকান তবু খোলা ছিল।

কিন্তু যোগেশচন্দ্রের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের বেতন দেওয়া বন্ধ হল না।

তাদের চলবে কিভাবে?

সারা ভারতবর্ষে এই ঘটনা এক বিরল দৃষ্টান্ত। যেখানে মালিকরা শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, গ্র্যাচুয়াটির টাকা মেরে দেয় সেখানে যোগেশচন্দ্ররা ব্যতিক্রম তো বটেই। কারন সাধনার জন্মই হয়েছিলো মানব সেবার জন্য।

সব মালিক যদি এরকম হত !

এই কোম্পানির জীবিত একমাত্র বংশধর হলেন শীলা ম্যাডাম। তিনিই উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে কোম্পানির মালিক। তিনি বিবাহ করেননি। তিনি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে থাকেন। এই কোম্পানির বর্তমানে কিছু দোকান এখনও খোলা আছে। অনেক ওষুধই নেই। বিক্রি একরকম নেই।

কর্মচারীরা বলেন আজকের দিনে ৩৪ টাকা কিংবা ৫৫ টাকায় কোন ওষুধ পাওয়া যায়? দাম বাড়ানো দরকার। কিন্তু শীলা ম্যাডাম অনড়। তিনি বলেন অল্প লাভ রেখে গরীব মানুষের পাশে একটু দাঁড়ালে ক্ষতি কি? অত টাকা করে কী লাভ? যতদিন পারে চলুক।

টিমটিম করে জ্বলছে শতবর্ষের বেশি প্রাচীন সাধনা ঔষধালয়। এখনও কলকাতা রাজ্যের বুকে দুএকটা রঙচটা সাধনা ঔষধালয়ের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, সাধনা ঔষধালয়, ঢাকাএকটি আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান। একটি মানব সেবার রঙিন সাইন বোর্ড।

হয়তো কালের নিয়মে একদিন হারিয়ে যাবে এই প্রতিষ্ঠান। শুধু জেগে থাকবে এক দেশপ্রেমিক বাঙালির স্বপ্ন, সাধনা ঔষধালয়।

শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিবা জানাতে পারি আপনাকে যোগেশচন্দ্র ঘোষ মহাশয়।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া/আনন্দ বাজার পত্রিকা




ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়..

খুব কষ্ট পাই, যখন দেখি রক্তের ভাই-বোন, কাছের আত্বীয়-স্বজন, একসাথে বেড়ে উঠা বন্ধু-বান্ধব, আশে পাশের পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে ।
..মোহাম্মদ শওকত আকবার




জ্ঞানের বিস্ফোরন ও মূর্খের দৃষ্টিভঙ্গি..

জ্ঞানের বিস্ফোরন হচ্ছে যতো আমরা ততোই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি, বদলে যাচ্ছি। মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, ধর্ম – বিলিন হচ্ছে আমদের ভেতর থেকে। আমরা এক গভির অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি দিনের পর দিন।

মুঠোফোন ও সোশাল মিডিয়া :

”মুঠোফোন” আর ”সোশাল মিডিয়া একটির সাথে আরেকটি যেনো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ব্যতিত আরেকটি যেনো অচল, অসাড়। এই দুইটি মাধ্যম একত্রিত হয়ে বর্তমানে আমাদের নিত্য প্রয়োজনিয় ও ব্যবহার্য ”মাধ্যম” হয়ে দাড়িয়েছে। আনন্দ বিনোদন, ব্যবসা বানিজ্য প্রতিটি সেক্টরেই এদের বিচরন, সর্বত্রই এদের ব্যবহার। এদের উপকারিতা বর্ননা করেও শেষ করা যাবে না।

সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা আজ মুহুর্তেই জানতে পারছি দেশ বিদেশের খবরাখবর, ইতিহাস-ঐতিহ্য, টেনকোলজির সর্বশেষ আদোপ্যান্ত। আনন্দ, বিনোদন, কান্না, হাসি, কষ্ট, বেচা কেনা, পর্নগ্রাফি, জ্ঞান বিজ্ঞান, আলোচনা সমালোচলা, রাজনিতি, অর্থনিতি, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্তৃতি – সকল কিছুই.. । এত্তো এত্তো উপকারি একটি মাধ্যমকে আজ আমরা একদম ফেলনা, খেলনা, যন্ত্রনা, বিরক্তিকর বানিয়ে ফেলেছি। (আমার এই আর্টিকেল শুধুই আমার দেশের বাংলা ভাষা ভাষির জন্যই রচিত) ।

একি খেলা চলছে হর্দম :

ব্যস্ত, সবাই ব্যস্ত.. প্রচার প্রসার, নিজেকে জাহির করার মানসে। আজ সবাই অভিনেতা, ব্যবসায়ি, উপদেষ্টা, জ্ঞানি, ডাক্তার, কবিরাজ, সকলেই ধর্মের দায়ি। বাদ নাই কিছুই। কারো তৈরি করা কিছু দেখার বা শুনার মতো সময় নেই কারোরই। সবাই দেখাতেই ব্যস্ত.. ব্যস্ত প্রচার আর প্রশারের জন্যি।

আমার একটি বদনা আছে, আমি অমুক ব্রান্ড হতে একটি জাংগিয়া কিনেছি, আমার বাল কাটার মেশিন টা সূদুর মরুভুমির দেশ দুবাই হতে আমদানী করা, আমি সর্বদা মানুষের উপকারের জন্যি আইক্কা ওয়ালা বাশ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে দৌড়াচ্ছি, আমার মতোন এই সমাজে বড় কোনো দাতা নাই, আমার মতোন এমন পতিভক্তি কারো নাই, স্বামী সন্তান, শ্বশুর শ্বাশুরি লইয়া এই প্রথিবীতে আমার মতোন সুখি কেউ নাই। আমার মতোন জ্ঞানি নাই কেউ, আমি সবজান্তা শমসের… আমার অমুকটাই সবার চাইতে উৎকৃষ্ট.. সকলেরটা নিকৃষ্ট.. আবার ঠিক উল্টোটাও আছে। কাকে কে ছোটো করে দেখবে, কার পোষ্টে কে একখানা জব্বর উত্তর দিয়ে ধরাশায়ি করবে, এক বিকৃত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করছি প্রতিনিয়ত। হিনমন্যতায় ডুবে যাচ্ছি দিনের পর দিন।

ভাইরাও নামক ডিজিস :

ভাইরাও (শওকত বিডির ভাষায়, নিজেকে প্রচারের আরেক নাম) হবার নতুন আজিব এক কর্মশালা ছুটে চলছি অনন্তর । কেউ থেমে নাই, দাদা, দাদি, নানা নানি, বাবা, মা। আর সন্তান.. কেমন যেনো একখানা জগা খিচুরি মার্কা সময় অতিবাহিত করছি সকলেই। প্রযোজক, পরিচালক, ফটোগ্রাফার, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটর, স্ক্রিপ্ট রাইটার, আমরা সকলেই। তৈরি করছি ভিডিও।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে :

কিরুপে চুলায় ভাত রান্না করতে হয়, তা নিয়ে ব্যতি ব্যস্ত আমাদের দাদিমা, আলু ভর্তার রেসিপি নিয়ে গলদঘর্মা আমাদের জননি, কিরুপে কেশবতি কন্যারা কৃষ্ঞ কেশে তৈল মেখে সিথি কাটবে, তার একটি সর্ট কোর্স শিখাতে সকাল সন্ধ্যায় ব্যস্ত বইন আমার, শেভ করার ভিডিও বানাতে ব্যস্ত আব্বাজান, আর দাদাজান ব্যস্ত দু একটা ওয়াজ নসিহত সংগ্রহ করে ভিডিও বানাতে, বড় বৈদি ব্যস্থ কিভাবে শাড়ি ছায়া পড়তে হয়, তা শিখাতে, বুয়াও ব্যস্থ কোন বাসার স্যার মেডাম ঝগড়া কাজিয়ায় লিপ্ত তা রেকর্ড করে ভিডিও তৈরিতে। বড়ই ব্যস্ত সকলে.. সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
কেউ থেমে নেই।

হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা :

ছোটো ছোটো বাচ্চারা বিস্রি বিস্রি যতসব অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও তৈরি করে প্রচার করছে। সেলিব্রেটি হতে নিজেদের উজার করে দিচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে লাজ-শরম। এটাইতো স্বাভাবিক। তারাতো আমাদের কাছ থেকেই শিখছে এসব।

ভিডিও বানাতে হবে, ভাইরাও হতে হবে। ভিউ বাড়াতে হবে। কেউ তা প্রত্যক্ষ করুক আর নাই করুক, কিঞ্চিত ডলার খরচ করে, জোড় করে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তার ভিউর সংখ্যা বাড়াতেই হবে। কি থুইয়া যে কি সৃষ্টি করছি, কেউ কিছুই বলতে পারছি না। ভৈরবি নৃত্য করছি একযোগে।

জ্ঞানের বিস্ফোরন চতুর্দিকে :

জ্ঞানহিন (?) লোক একটি চ্যানেল খুলে মোটিভেশনাল স্পিসের জনক সেজে এখান থেকে কিছু ওখান থেকে কিছু কাট ছাট করে কপি পেষ্ট মেরে প্রতি নিয়ত মোটিভেশনাল স্পিস দিয়ে যাচ্ছে। এটা করিও, ওটা করিওনা, নিজের অধিকার আদায় করে নাও, না বলতে শিখো। কি দিয়ে যে কি হবে স্পিকার মহাশয় নিজেই জানেন না। ভিন্নধর্মী কিছু করতে হবে-তাই যেনো সকলের মন বাসনা। কিছু হোক আর না হোক, সমাজে তা চুলুক আর নাই চলুক, তাকে করতেই হবে।

জব্বর মিয়া, জুম্মার নামাযের সময় রাস্তার সস্তা দোকানে বসে টিক টিক ভিডিও দেখে আপ্লুত হওয়ার পাশাপাশি বিড়ি ফুকতে ফুকতে ”জুম্মা মোবারক” লিখে তার হোয়াটস আপ গ্রুপে পোষ্ট মেরে দিচ্ছে। ।

কবির মিয়া, জুম্মার খুতবায় তার পিচ্ছি পোলার লগে একখানা সেল্ফি তুলে, ফেসবুকে পোষ্ট করে ক্যাপশণে লিখছে, ”আমরা বাপ বেটা এখন অমুক মসজিদে, জুম্মার খুতবায়”।

সোলায়মান খান, কাবা ঘরের সামনে দাড়িয়ে সেলিফি তুলে কেপশন দিচ্ছে – ”হজ্ব করছি। এইবার নিয়ে দুইবার হজ করলাম”।

মদ্যপ মাতাল দেলু মিয়া, একখানা টুপি মাথায় রাস্তার ভিখেরীর সাথে সেলফি তুলে কেপশন দিচ্ছে : ”গরিবের প্রতি সদয় হোন”। কত্তো কত্তো কি ?? বাদ নাই কিছুই। হর্দম চলিতেছে!

বদলে যাচ্ছি আমরা :

দিন যতোই অতিবাহিত হচ্ছে, আমরা ততোই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি, বদলে যাচ্ছি। মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, ধর্ম – বিলিন হতে বসেছে আমদের ভেতর থেকে। আজ মানুষে মানুষে বেড়েছে ভেদাভেদ। মানসিক রোগি হচ্ছি দিনের পর দিন। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে ভুলে যাচ্ছি নিজেকেই নিজে, নিজস্ব স্বত্তাকে। ভেতরে ভেতরে ক্ষয় হচ্ছে হৃদয়ের স্পন্দন।

মূর্খের মতাদর্শ :

ঠিক আছ মেনে নিলাম, এটা সময়ের দাবি, কিন্তু তাই বলে কি আমরা মনুষ্য সমাজ থেকে বের হয়ে গিয়েছি? যদি তা নাই হয়, তাহলে একজন পরিপুর্ন মানূষ নিজের গুন কির্তন করে এভাবে ? কিভাবে পারে নিজেকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপনা করতে পারে? ধর্ম হতেও যদি বের না হয়ে থাকি, তাহলে কিভাবে একজন মানুষ ধর্মের শিক্ষা উপেক্ষা করে নিজের ইবাদত বন্দেগির কথা লোক সম্মুকে এভাবে প্রচার করতে পারে ? এটা কি লোক দেখানো ইবাদত নয় ? কোনো ধর্মে কি লোক দেখানো ইবাদতের কথা উল্লেখ আছে?

নিজে কিভাবে জিবন যাপন করছি, কি খাচ্ছি, কি ক্রয় করছি, কিভাবে সংসার নামক নাট্যমঞ্চে অভিনয় করে যাচ্ছি, তা গর্ব করে অন্যদের জানানো কি ঠিক হচ্ছে ? আমার মাস্তিস্কে এটা খেলে না। হয়ত আমি মুর্খ বলিয়াই এত্তো এত্তো জ্ঞানের বিষয় উপলব্ধি করতে পারিনা । হয়তো আমারই ব্যর্থতা।

তবে যতটুকু বুঝি, এইসব লোক দেখানো কর্মকান্ড আদৌ ঠিক নয়। আমাদের এইসব লোক দেখানো কর্মকান্ড হতে বের হয়ে আসা উচিত। এখই সময় আমাদের সংশোধনের। নচেৎ যেরুপ মিথ্যায় অবগাহন করছি আমরা, সেই মিথ্যা নিয়েই হবে জিবনের যবনিকাপাত।

তাই আসুন সোশাল মিডিয়ার প্রকৃত ব্যবহার শিখি। আর হিনমন্যতার রোগ থেকে নিজেদের রক্ষার্থে মিথ্যে, লোক দেখানো যত রকম অপকর্ম আছে তা হতে নিজেদের মুক্ত করি। সত্যিকারভাবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখি, অন্যের প্রাপ্য সন্মান দেই। সমাজ, দেশ, জাতি, ধর্মকে ভালোবসি।




ব্যবসার নাম প্রতারনা

ব্যবসার নাম প্রতারনা, (Business name is fraud) : এই ব্যবসাখানা কবে, কখন যে শুরু হইয়াছিলো, তাহা কহিতে পারিব না। তবে ইহাকে যে সুপ্রাচিন কাল হইতেই এক শ্রেনীর মনুষ্য টিকাইয়া রাখিয়াছে যুগের পর যুগ, ইহাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই। ইহা অতীতেও ছিলো, এখনো আছে আর ইহা ভবিষ্যতেও থাকিবে। হয়তো ইহা পৃথিবি নামক গ্রহ খানা যতদিন বাঁচিয়া আছে, মনুষ্যকুল যতদিন বিদ্যমান ততদিনই ইহা জিবিত থাকিবে।

যুগের সাথে খাপ খাইওয়াতে না পারিয়া এই রকম বহু ব্যবসাই আজ পৃথিবি হইতে বিলিন হইয়া গিয়াছে, বিদায় লইয়াছে। কিন্তু এই ব্যবসা খানা এখনো বহাল তবিয়তে স্বগর্বে পৃথিবির বুকে টিকিয়া আছে তার নিজস্ব স্বকীয়তায়।

যুগে যুগে ইহা কেবল ধরন বদলায়, হয় যুগপোযোগি। ইহার আষ্টেপৃষ্টে  চুনকাম করাইয়া, গতরের লেবাস পরিবর্তন করিয়া ইহাকে জাতে উঠানোর মতোই জাতে উঠানো হয়, করা হয় আধুনিকায়ন।

এই ব্যবসার খপ্পরে পড়িয়া যুগে যুগে মানুষ নি:স্ব হইয়াছে। সর্বশান্ত হইয়াছে। শুধু যে সর্বশান্ত হইয়াছে তাহাই নয়, এই ব্যবসার রোষানলে পতিত হইয়া মরনব্যাধি রোগে মরিতেছে মনুষ্যকুল। আর এই ব্যবসাখানা বহাল তবিয়তেই আছে আমাদের সমাজে, মনুষ্য কুলের মাঝে। দেশে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারনা, এম এল এম সিষ্টেমে প্রতারনা, বিদেশে ভর্তি লইয়া প্রতারনা, এসব পূর্বেও ছিলো এখনো আছে। এইসবের সাথে সংযোগ হইয়াছে নতুন নতুন ক্যাটাগরি। নতুন নতুন প্রক্রিয়া। বর্তমান সময়ে সংযুক্ত হইয়াছে অনলাইন (?) ব্যবসার প্রতারনা, ইমু বা বিকাশ হ্যাক করিবার মতোন অত্যাধুনিক নতুন নতুন আইটেম, গ্যাসের সিলিন্ডারে পানি আর বালু ভর্তি করিয়া করা হইতেছে প্রতারনা, মরিচের গুড়ো তৈরিতে ব্যবহার করিতেছে ইটের কনার মিহি গুড়া, নোংরা পানি আর কিছু ক্যামিকেল দিয়ে তৈরী হচ্ছে দুধ। মরা পচা মাছ রাসায়নিকের মিশ্রনে সজিব সতেজ রাখা হইতেছে দিনের পর দিন। কাঁচা ফলে ক্যামিকেল মিশাইয়া হইতেছে পাঁকানো। পচা ফলমুল আর বিষাক্ত ক্যামিকেলে তৈরী হচ্ছে নিস্পাপ শিশুদের খাবারের জুস। ময়দার মিশ্রনে তৈরী হচ্ছে ঔষধ। নোংরা, বিষাক্ত পানি ভরিয়া বোতলজাত করা হইতেছে খাবারের পানিয়। তৈরী করা হচ্ছে প্লাষ্টিকের ডিম। লিখিতে লিখিতে পাতা ভরিয়া যাইবে, তবুও এই ব্যবসার উদাহরন শেষ হইবে না।

যাহা হউক, প্রতারনা নামক এই ব্যবসার যাতাকলে নি:স্ব হইতেছি আমরা। সর্বশান্ত হইতেছি দিনের পর দিন। যুগের পর যুগ। চটকদার বিজ্ঞাপন পরিবেশন করিয়া এই ব্যবাসাখানাকে দিনের পর দিন লালন পালন করিতেছে এক শ্রেনীর নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের মতোই দেখিতে মনুষ্যরুপি ”জানোয়ার”। তাহারা দেখিতে ১০০% মানুষের মতোই তবে তাহাদের হৃদপিন্ড পশূর মতোই হিংস্র। সেখানে মায়া নাই, মমতা নাই, কোনো বোধও নাই। তাহারা প্রতারক। প্রতারনা নামক ব্যবসার কর্নধার।

হে আল্লাহ; আমাদের বোধ দাও, আমাদের কলুষিত মনকে তোমার অশেষ রহমতের পানি দ্বারা তুমি নিজে পরিস্কার করিয়া দাও। আমরা যেনো প্রকৃত মানুষ হইতে পারি। ধর্মের শিক্ষায় যেনো শিক্ষিত হইতে পারি। অন্ধকার হইতে যেনো বাহির হইয়া আসিতে পারি। আমিন!




মোখা নিয়ে ”মূর্খ মগা”র জবানবন্দি

নিজেকে এতোদিন চ্যাম্পিয়ন মুর্খ বলিয়াই ভাবিতাম। মূর্খদের সেরা মূর্খই মনে করিতাম। জানিতাম আমার মাথায়ই বুঝি, গোবর (প্রসাদ, ইন্ডিয়ায় যাকে প্রসাদ বলা হয়) নামক ওই পদার্থগুলোতে ভরপুর। দিন যতোই যাইতেছে, ততোই দেখিতেছি, এই দেশের আরো বহু সংখ্যক মনুষ্য মূর্খামিতে আমার থেকেও সেরা। উহারা চ্যাম্পিয়নের চ্যাম্পিয়ন। উহাদের জগতে আমি এইমাত্র ভুমিষ্ট হওয়া মুর্খ শিশু। উহাদের আছ বড় বড় ডিগ্রি। উহার দেশের নেতা। দেশ ও জাতির সংস্কারক।

মূর্খের জবানবন্দি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান

তাহাদের মাথায় টনে টনে গোবরে পরিপূর্ন। সেই বিচারে আমার মাথায় তাহাদের গোবরের ১০০ ভাগের ১ ভাগ। তাহাদের মাথা কাচা গোবর, পাকা বা শুকনো গোবর, পুরানা গোবর এ টইটুম্বুর।

যদি তাহাই না হইতো, তাহা হইলে ঘুর্নিঝড় মোখা পরবর্তি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান যাহা কহিলেন, তাহা কি একজন বুদ্ধিমান জ্ঞানী, হাই প্রোফাইলের শিক্ষিত লোক কহিতে পারে ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেক আমল আর পরহেজগারির কারনেই মোখা অন্য দিকে ডায়ভার্ট হইয়াছে। নাউজুবিল্লাহ।

এতো বড় একটা দুর্জোগ থেকে মহান আল্লাহ রাহমানির রাহিম আমাদের রক্ষা করিয়াছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে আমাদের সমগ্র জাতির শোকরিয়া আদায় করা দরকার। আর উনি কিনা অতিরঞ্জিত একখানা ফালতু কথা কহিয়া বিতর্কিত হইলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে করিলেন প্রশ্নবানে জর্জরিত।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি একবারো উনাকে এই কথা কহিতে বলিয়াছেন? বলেন নাই। চাটুকারদের কাজ চাটাচাটি, বিশেষ করে পা চাটা। আর এই লোক তাহাই সম্পন্ন করিয়াছেন।

এই প্রতিমন্ত্রীর কথার প্রতিত্তোরে আমাদের সন্মানিত প্রধানমন্ত্রীকে লইয়া সোশাল মিডিয়া সয়লাব হইবে বিভিন্ন প্রশ্নে । প্রশ্নবানে বিদ্ধ হইবেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হাজারো ট্রলের জন্ম দিবে এই প্রসঙ্গ ।

একজন চ্যাম্পিয়ন মুর্খ প্রতিমন্ত্রী আমাদের সন্মানিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কতটুকু খাটো করিয়াছে তাহা সে নিজেও জানে না। আর এই মূর্খদের মূর্খামির জন্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয় খেসারত.. একের পর এক..

প্রতিমন্ত্রীর এই উদ্ভট বক্তব্যের প্রসঙ্গখানা আমাদের আলেম ওলামা সমাজ কতদূর টানিয়া লইয়া যায়, তাহাই এখন দেখিবার বিষয়। ইতিপূর্বে আমরা এইরকম বহু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্যের জেড় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীতে দিতে দেখিয়াছি। অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করিয়া উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। এবারও হয়তো এই মূর্খের বক্তব্য লইয়া অতি শিঘ্রই তিনি মুখ খুলিবেন, জাতি আজ প্রধানমন্ত্রীর মুখখানার দিকেই চাহিয়া রহিলো..

???

হে আল্লাহ্, আপনি তো পরম করুনাময়। আমাদের প্রতি করুনা করুন। এই সব জ্ঞানী মূর্খদের পাপের শিক্ষা আমাদের দিয়েন না। আমাদের দেশ, জাতীকে আপনি রক্ষা করুন। আসমানী বালা আসমানে উঠিয়ে নেন, আর জমিনি বালা জমিনে ধ্বংস করে দেন। আমাদের প্রতি সদয় হোন।

আমাদের মতো সকল মূর্খদের আপনি হেদায়াত দান করুন। আমিন।




এ্যালার্জির নাম মোল্লা..

এ্যালার্জির নাম মোল্লা বা হুজুর। আমাদের সমাজে এক প্রকারের মনুষ্য শ্রেনি মোল্লা বা হুজুরদের লইয়া প্রচন্ড রকম এ্যালার্জিতে ভোগেন। আর উহাই মোল্লা বা হুজুর এ্যালার্জি নামে অভিহিত। ”The name of the allergy is Molla“. উহারা মোল্লা, উহারা হুজুর, উহারা মাদ্রাসায় পড়ে, উহারা এতিমখানায় থাকিয়া লালিত পালিত হইয়াছে, উহাদের শরিরে শুধুই গন্ধ, উহারা মানুষের বাড়িতে খায়.. ইত্যাদি ইত্যাদি।।

উহারা মুর্খ, উহারা বলদ, উহারা ধর্ষক, উহারা নিজের জন্যি হারাম কর্মকে হালাল করিয়া থাকে, উহারা সমাজের কিট, উহারা সমাজে চলার অযোগ্য। উহারা মোল্লা, উহারা হুজুর..

এ্যালার্জির নাম মোল্লা এজন্য যে, উহারা আল্লাহ তায়ালার আসমানি কিতাব অধ্যয়ন করিয়াছে, উহারা জাতিকে ইসলামের সূধা পানের আমৃত্যু আমন্ত্রন জানায়। উহারা কালিমার প্রতিটি শব্দকে মনে প্রানে বিশ্বাষ করিয়া থাকে। প্রানপন উহারা প্রিয় নবিজির সুন্নাত ধারন করিয়া থাকে, উহারা সমাজে ভালো কর্মের আদেশ দেয়, নিকৃষ্ট কর্ম হইতে বিরত থাকার আহবান জানায়।

বাংলা ভাষার অভিধানে যত রকমের অশ্লিল, গন্ধযুক্ত কন্টকাকির্ন শব্দ রহিয়াছে তাহা কেবল সমাজের অই এক শ্রেনির মোল্লা বা হুজুরদের জন্যিই সম্ভবত ভাষাবিদগন  সংগ্রহ করিয়া অই পুস্তিকায় সংযোজন করিয়াছেন।

যাহারা এলার্জিতে ভুগেন তাহারা নাকি এই সামাজের শিক্ষিত বুদ্ধিজিবি, সাদা মনের মানুষ, তাহারা সুশিল সমাজ।

তাহাদের কাছে আমার ছোটটো একখানা প্রশ্ন : যেই সকল মোল্লা বা হুজুরদের আপনারা এতোটাই ঘৃনা করিয়া থাকেন, সেই মোল্লা বা হুজুররাই কিন্তু আপনার বাবা মায়ের শারিরিক সম্পর্ককে হালাল করিয়াছিলেন বিবাহ নামক একখানা সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে। তাহা যদি না হইতো আপনার পরিচয়টাই আজ পরিবর্তিত হইয়া ঘৃনিত হইতো। আপনার বাবা মায়ের শারিরিকি সম্পর্কটাই অবৈধ হইয়া যাইতো।  অবৈধ সম্পর্কে যে সন্তানাদি জন্মগ্রহন করিয়া থাকে সেই সকল সন্তানদের পরিচয় আমাদের সমাজ অবৈধ সম্পর্কের সন্তান বা জারজ সন্তান বলিয়াই আখ্যা দিয়া থাকে। এই লজ্জাজনক বিশেষন খানা আপনি আজ কিভাবে গ্রহন করিতেন?

আর আপনার জন্ম গ্রহনের পরে এই মোল্লা বা হুজুরদের ডাকিয়াই কিন্তু আপনার বাবা আজানের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। সমাজে আপনার আগমনের বার্তা জানাইয়া ছিলেন। আবার আপনার বাবা বা মায়ের মৃতুর পর আপনিই কিন্তু এই মোল্লাদের গ্রুপ করিয়া ডাকিয়াছিলেন কোরান তিলাওয়াতে জন্যি। একটুসখানি হাত তুলিয়া আল্লাহর দরবারে দোয়ার জন্যি। আর এই মোল্লা বা হুজুররাই কিন্ত আপনার জন্ম দাতা পিতা বা গর্ভধারিনি মায়ের দাফন কাফন বা অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া ছিলেন।

আমি মূর্খ মানব। ধর্ম কর্ম কিছুই শিখিতে পারি নাই। পৈত্রিক সুত্রে মুসলমান। তাই উহা আগলে ধরিয়াই রহিয়াছি। উহাই মানিয়া চলার চেষ্টা করি। আর একজন পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান হওয়া মানব হিসেবে ছোটটো এই প্রশ্ন খানা আমার ছোটটো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় অবিরত। আর তাহাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করিলাম।

আপনিও যদি পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান হইয়া থাকেন, বা নিজেকে মুসলমান দাবি করিয়া থাকেন, দয়া করিয়া এই ধরনের উদ্ভট চিন্তা মাথা হইতে ভালো মানের শ্যাম্পু দ্বারা ধুইয়া মুছিয়া ফেলুন। স্বীয় মাথাখানা আবর্জনাপুর্ন চিন্তা- ভাবনা হইতে ঝাড়িয়া ফেলিয়া পরিস্কার করিয়া ফেলুন।

ঠিক আছে, মোল্লা বা হুজুরদের আপনার ভালো লাগে না, তাহাদের পছন্দ হয় না, তাহাদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেন। দেশের কানুন মোতাবেক তাহাদের বিচার করেন। আইন মোতাবেক একজন মোল্লা বা হুজুর খারাপ করিয়াছে, তাই বলিয়া সমগ্র মোল্লা বা হুজুরদের ঢালাওভাবে ঘৃনা করিতে পারেন না.. সেই অধিকার আপনাদের নাই।

একজন খুনির জন্যি তো আর সমগ্র মানব জাতি খুনি উপাধি পাইতে পারে না। ইহা বড়ই অন্যায়।

যদি পারেন পাপকে ঘৃনা করেন, পাপীকে নহে।

বোধোদয় ঘটুক সকল সুশিল সমাজের বাসিন্দাদের।




ভালোবাসার মাপকাঠি

ভালোবাসার জন্য হাতরে ফিরি, মিছে মিছিই.. মন মানেনা। কেউ ভালবাসেনা; বুঝি। তারপরেও আবার.. হাত বাড়াই.. মন মানেনা..

সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসি। হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসি। কতটুকু ভালোবাসলে যে ভালোবাসা পাওয়া যায়, সেই মাপকাঠিটাই বুঝি না। সমগ্র জীবনে বুঝলামও না।

তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় ভালোবাসা খুজেঁ ফিরি, পাত্রে অপাত্রে। ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। মেটে না..

ছোটো বেলায় মা মরে গেলো।  বুঝ টুঝ হবার আগেই। মায়ের ভালোবাসায় মাত্র কিছূদিন সজিব ছিলাম। তারপর.. জন্মদাতা বাবা, আর মায়ের পেটের ভাই-বোনদের ভালোবাসা ? সবই ইতিহাস..

ছন্নছাড়া এক ভালোবাসাহীন জীবন..?

পথভোলা পথিকের ন্যায় দিক বিদ্বিক হারিয়ে ছুটে চলা.. ভালোবাসার পেছনে..

নতুন পথের বিরতীহীন যাত্রা.. ভালোবাসার সন্ধানে,

দিন

মাস

বছর

যুগ

পেরিয়েও মিলেনি ভালোবাসা। পাইনি ভালোবাসার সাক্ষাত।

ভালোবাসা সবাই পায়না। ভালোবাসা স্রষ্টার দেয়া এক নেয়ামত। সবার ভাগ্যেও আর জুটে না এই নেয়ামত। যাদের ভাগ্যে জুটে তারা ভাগ্যবান। আর যার ভাগ্যে জুটে না, সে আমারি মতোন বোধহীন..

একজন বোধহীন মানুষ মিছে মিছিই খুজেঁ ফেরে ভালোবাসা।




ডুবে আছি অন্ধকারে

আমাদের বেড়েছে জ্ঞানের পরিধি, হয়েছি জ্ঞানি, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজিবি, দার্শনিক, অর্থনিতিবিদ, সমাজ সংস্কারক, ধর্মের দায়ী। বড় বড় ডিগ্রি আর মোটা মোটা সনদ। এত্তোসবের পরেও কি একটু মানবিক হয়েছি ? মানবতা নিয়ে কি একটু চিন্তা ভাবনা করি ? নিজেকে এই প্রশ্নটা করি তো ? লোক দেখানো, আর অভিনয়কে পেছনে ঠেলে বুকে হাত দিয়ে উত্তরটা দিই।

কোথায় আজ মানবতা ? মানবতা আজ ভুলুন্ঠীত, নিগ্রিহিত, অদৃশ্য । দেশে দেশে। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। আমাদের আজ সময় নেই মানবতা নিয়ে ভাববার, মানবতা নিয়ে কাজ করবার। মানবতা নামের এই বাজে নোংরা একটি শব্দ নিয়ে দু এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করার। আমরা আমাদের নিয়েই ব্যস্ত। বিজ্ঞানী ব্যস্ত তার আবিস্কারে, সমাজ সংস্কারক ব্যস্ত বড় নেতা হতে, ধর্মের দায়ী ব্যস্ত ওয়াজ নসিহতে আর কোন দোয়ায় কি উপকার তা প্রচারে। অর্থনিতিবিদ ব্যস্ত কিভাবে ঘরের চাল চুলো বিক্রি করে একজন মানুষ নিস্ব হতে পারে – সেই সুত্র আবিস্কারে.. মানবতা নিয়ে কি কারো মাথা এতটুকু কাজ করে? করেনা।

দেশে দেশ চলে আজ ধ্বংসযজ্ঞের হলি খেলা। মায়ের বুকে গুলি খেয়ে কাতরায় দুগ্ধপোষ্য শিশু। বাবার চোখের সামনের ধর্ষিত হয় কন্যা। পথে পথে পরে থাকে মানুষ নামের একটি প্রানীর মৃত গলিত লাশ। তা খেয়ে দেয়ে স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ করে পোকামাকড়।

আজ হাতের তালুতে তাকিয়েই ভ্রমন করি জগত সংসার। বিশাল সমুদ্র আর পর্বতমালার গহীনের নিস্বর্গীয় সোন্দর্যতা উপভোগ করি। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসে সারা বিশ্ব। এক কেজি চাল বিলি করে ১০০ মুখের সেলফি উঠাই, মৃতুর খবরে জানাযায় শরিক না হয়ে ইন্নালিল্লাহ শব্দের কপি পেষ্ট মেরে ঝড় তুলি সোশাল মিডিয়ায়, বাবা মার ভরন পোষন না দিয়ে রাস্তার কুকুরের সাথে সেলফি তুলে করুনা দেখাই। উপদেশের বাণী আওরাই হাজার বিজারে, সোশাল মিডিয়ায় ভিউ বাড়ে, ইমোজি রিয়েকশানে আপ্লুত হই.. বোধের ফেরিওয়ালা ডুকরে ডুকরে কাঁদে.. আমাদের লজ্জাহীন তান্ডবলীলায়।

মানবতা কি ? ভূলে গেছি আজ। কিভাবে গড়বো অর্থের পাহাড়, নাম, যশ, খ্যাতি, বিত্ত-বৈভব। ব্যস্ত সর্বদা। আমরা সকলেই। মানবতাকে পিষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি.. গন্তব্যহীন ঠিকানায় নির্লজ্জের মতো।

মানবতা আজ শুধুই একটি শব্দ। নোংরা কাগজে লিখিত সঙ্গহীন শুধুই একটি শব্দ।

ধর্ম মানি। ধর্মের জন্য করি হই হুল্লোর, ধর্ম নিয়ে করি যুদ্ধ। ধর্মের প্রচারে হই নির্মম। ধর্মের শ্রেষ্টত্ব প্রকাশে করি প্রতিযোগিতা। ধর্মের কিতাব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে স্বগোত্রীয়দের নিয়ে করি বিজয় উদযাপন। মসজিদ ভাংগি, মন্ধির ভাংগি, গির্জায় করি অগ্নি সংযোগ- আমরা ধর্ম প্রেমী। আমরা খুবই ধার্মিক । মানবতার টুটি চেপে ধর্মের নদীতে করি পবিত্র হবার স্নান। ধর্ম থেকে আজ মানবতাকে দিয়েছি বিদায়। ধর্মের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনে নিজেরাই যেনো আজ সাজিয়েছি নিজের ধর্মের অমিয় বানি। ধর্ম গ্রন্থ শুধুই আজ বুক শেলফে সাজানো একটি বৃহৎ আকৃতির সুন্দর বই। মানবতার বানিগূলো আজ ঢেকে আছে ধর্মগ্রন্থের মোটা মোটা মলাটের নিচে..

..আর আমরা ডুবে আছি ঘোর অন্ধকারে।




স্বপ্ন দেখো..

স্বপ্ন দেখো, কিন্তু এমন স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন তোমাকে শুধু ঘুমের মধ্যেই রেখে দিবে.. মোহাম্মদ শওকত আকবার