সালামের প্রচলন যেভাবে

এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানানোর ইসলামী রীতি হচ্ছে السلام عليكمআসাসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোধন করা। যার অর্থ হচ্ছে – আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। যাকে এই সম্ভাষণ করা হবে তিনিও প্রতিত্তোরে বলবেন – وعليكم السلامওয়া আলাইকুমুস্ সালাম‘ । যার অর্থ – আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।

এই সম্ভাষনের প্রচলন কবে বা কখন হয়েছিলো বা কে সর্বপ্রথম কাকে সালাম দিয়েছিলেন, সে সালামের উত্তরই বা ছিল কী ? সে বিষয়েই আমাদের ছোটটো এই আলোচনা।

[lwptoc]

সালামের প্রচলন যেভাবে শুরু হয়

সর্বপ্রথম সালাম দেন প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম আলাইহিস সালাম। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক তাঁকে সালাম আদান-প্রদানের পদ্বতি শেখান। যা তাঁর পরে আগত সকল বনি আদমের জন্য ছিলো অভিবাদন। হাদীসের বর্ণনা থেকে প্রমানিত – হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা আদম কে সৃষ্টি করলেন।  তাঁর উচ্চতা ছিলো ষাট হাত। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বললেন, যাও, বসে থাকা ঐ ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয় তা মনোযোগরে সাথে শ্রবন করো। কেনোনা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সম্ভাষন।

আদম ফেরেশতাদের গিয়ে বললেন – السلام عليكم – ‘আসালামু আলঅইকুম’ আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন – السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ : আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। ফেরেশতাগণ ‘ওয়া রহমাতুল্লাহি’ সংযোজন করলেন। যে ব্যক্তি বেহেশতে যাবে সেই হবে আদম এর আকৃতি বিশষ্ট। সেই থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত মানুষের দেহের আকুতি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। (বুখারী, মুসলিম)

সালাম কিভাব দিতে হয় ?

السلام عليكم – আস্সালামু আলাইকুম। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের সমাজে প্রায়ই আমরা সালামালেকুম, সালামালাইকুম – এভাবে উচ্চারণ করে থাকি। যা আসলেই ঠিক নয়। উচ্চারনের কারনে এর অর্থ সম্পূর্নরুপে পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় যার অর্থ এমন হয় যে – আপনি ধ্বংস হয়ে যান।

আমরা শান্তির বদলে ধ্বংস কামনা করছি । যা মোটেই উচিত নয়। সুতরাং এই সম্ভাষনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃত উচ্চারন করাটাই বাঞ্চনীয়।

যদি আরবী ভাষায় বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থেকে থাকে তাহলে আমাদের সকলেরই জচিত হবে আরবী ভাষায় দক্ষ কারো কাছ থেকে আরবী ভাষার তালিম নেয়া। সেক্ষেত্রে কোরআন, হাদীসও শুদ্ধ ভাবে অধ্যয়ন করতে পারবো এবং প্রকৃত অর্থও জানার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকাংশে সহজ হবে। অনুবাদ পড়ে কখনোই কোরান হাসীসের প্রকৃত ভাব অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

সালাম কিভাবে নিতে হয় ?

সালাম নেয়ার ক্ষেত্রেও কখনো কখনো দেখা যায় যে, আমরা শুধুই মাথা ঝাকাই। মুখে কিছু উচ্চারন করিনা। বা বলে থাকি – ওয়ালাইকুম সালাম। আসলে উচ্চারন হবে – ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।

সালাম না দিলে কি গুনাহগার হবে

সালাম দেওয়া সুন্নাত। আর ‍এই সালামের জবাব প্রদান ওয়াজিব বা আবশ্যিক। কেউ সালামের জবাব না দিলে গুনাহগার হবে। সুতরাং বলা চলে, সালাম এক প্রকার ইবাদত ও সাওয়াবের কাজ।

সালাম সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা

সালাম সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡهَاۤ اَوۡ رُدُّوۡهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ حَسِیۡبًا আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)

জান্নাতিদের অভিবাদনও ‘সালাম’ । আল্লাহ তাআলা যাদেরকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করবেন। তাদেরকেও এ সালাম দেওয়ার মাধ্যমে অভিবাদন করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন –

১. وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ؕ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ

যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে; যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২৩)

২. وَ سِیۡقَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا رَبَّهُمۡ اِلَی الۡجَنَّۃِ زُمَرًا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَآءُوۡهَا وَ فُتِحَتۡ اَبۡوَابُهَا وَ قَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ طِبۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡهَا خٰلِدِیۡنَ

আর যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তার রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম (শান্তি), তোমরা সুখী হও এবং স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৭৩)

শেষ কথা

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের অভিবাদন জানানোর ভাষা সালামকে দুনিয়ায় বেশি বেশি প্রচলন ও প্রসার করার তাওফিক দান করুন। কোরআন সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।