চা আবিস্কারের ইতিহাস

চা আবিস্কারের ইতিহাস : গল্প প্রিয় এমন কেউ নেই যে অদ্ভুত চা খোর গল্পটি পড়েন নাই। সেই চাখোর গল্পের মতো আমাদের ভেতরে অনেকই সেরকম চাখোর হিসেব আজ পরিচিত। আমি নিজেও সেইরমই একজন। অফিসের পিয়নেরাও বলে – স্যার বাসা থেকে অফিসে আসে শুধু চা খেতেই।

বাঙ্গালীর চা বিলাস নতুন নয়। শহর কিংবা গ্রামে চায়ের দোকানের হাজারো গল্প আমাদের চিরচেনা। আমরা চা খাই। চায়ের আসর করি, চা থেকে খেতে গল্প করি। কিন্তু কখনোই কি জানার চেষ্টা করেছি যে, এই পাণীয়টি আবিস্কার হয়েছিলো কিভাবে। কিংবা কোথা থেকেই বা এই চা খাওয়ার উৎপত্তি। অনেকেরই জানা নেই। আর তাই আজ চায়ের ইতিহাস নিয়েই আমার এই দু’চার কলম।

চা আবিস্কারের ইতিহাস

২৭২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান চৈনিক শাসক শেন নাং এই চায়ের আবিস্কারক। শেন তার সাম্রাজে আইন জারি করেছিলেন, তার প্রজাদের সবােইকে জলপানের পূর্বে অবশ্যই তা ফুটিয়ে নিতে হবে। তিনি নিজেও তার প্রাসাদে সব সময় ফোটানো পানি পান করতেন। কৃষি ও ভেষজ চিকিৎসায় আগ্রহী শেন জানতেন পানি ফুটিয়ে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এবং এর থেকে সব ধরনের জীবানু ধ্বংস হয়ে যায়।

যখনকার ঘটনা, শেন জুন্নান প্রদেশে অবস্থান করছিলেন। কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমেধ্য এক বাগানের পাশে যাত্রা বিরতি হলো।  তার সঙ্গীরা খোলা প্রান্তরে গাছের ছায়ায় বসে আছে কেউ। কেউ খাবারের ব্যবস্থা করছে। কেউ পানিপাত্রে পানি ফোটাচ্ছে। আকস্মিক বাতাস পাশের ঝোপ থেকে কিছু পাতা উডিয়ে এনে ফুটন্ত পানির ভেরত ফেললো। পাতটি তুলে ফেরার চেষ্টা করারে আগেই সেটা জলে দ্রবীভুত হয়ে গেলো। জলের রং বদলে গেলো। শেন কৌতুহলী হয়ে জলের রং পরিবর্তনটা খেয়াল করলেন। শেন জলের ঘ্রান শুকেঁ দেখলেন। অন্য রকম এক মাদকত ছাড়ানো গন্ধ। তিনি জিহবা দিয়ে এটার স্বাদ নিলেন। এই প্রথম মানুষ চায়ের স্বাদ গ্রহন করে। তারপর রীতিমতো চায়ের প্রেমে পড়ে গেলেন শেন। বাতাসে হঠাৎ উড়ে আসা পাতা আর জলের সমন্বয়ে পরিনত হলো এক ধরনের খাবারযোগ্য পাণীয়তে। যত্ন করা হতে লাগলো উক্ত পাতাটির। সাথে সাথে বিস্তৃতি ঘটতে থাকয়ে পানীয়টির।

শাং শাসনামলে (১৫০০-১০৪৬ খ্রিষ্টপুর্বাব্দ) চা পাতার রস ঔষধি পানীয় হিসেবে সেবন করা হত। সিচুয়ান প্রদেশের লোকেরা প্রথম চা পাতা সিদ্ধ করে ঘন লিকার তৈরী করা শেখে।

চায়ের বিস্তৃতি

যদ্দুর জানা যায়, ১৬১০ সালের দিকে ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে পর্তুগীজদের হাত ধরে । শীতের দেশে উষ্ণ চায়ের কাপ যেন প্রাণে স্ফুর্তি জোয়ার নিয়ে আসলো।

আজ থেকে আনুমানিক আড়াইশো বছর পুর্বে এশিয়ার অনেক দেশে চা পাতার তৈরী ইট মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ থেকে সহজেই তৎকালীন সময়ে চায়ের কদর বোঝা যায়। ১৭০০ সালের দিকে ব্রিটেনে চা জনপ্রিয় হয়।

উপমাহাদেশে চায়ের প্রবেশ

ইংরেজদের হাত ধরে চা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারা ভারতের আসাম রাজ্যে চায়ের চাষ শুরু করে। চা উৎপাদনে চীনের একক আধিপত্যকে খর্ব করতে বিলাতিরা ভারতে চা চাষ শুরু করে। প্রথম দিকে এংলো ইন্ডিয়ানরাই চা ব্যবসা শুরু করে পরে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর চা শিল্প দেশীয়দের হাতে বিকশিত হয়। আসাম থেকে ছড়িয়ে পড়ে দার্জিলিং, কেরালা, বাংলায়।

চা উৎপাদনকারী দেশ

ভারত পৃথিবীর এখন প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল এবং ইরানের গিলান প্রদেশে আছে নয়নাভিরাম চা বাগান, উৎপাদন হয় চা।  পৃথিবীর অধিকাংশ বৃষ্টিবহুল দেশে এখন চা উৎপন্ন হচ্ছে।

লাল চায়ের ইংরেজী কি ?

আপনি কি জানেন লাল চা এর ইংরেজী কি? ব্লাক টি..

শেষ কথা

চা দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে ভিন্ন রুচিতে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় খাওয়া হয়। কেউ লিকার বেশী খায় কেউ খায় কম। লাল চা, দুধ চা, গ্রীন টি, আইসড টি বলে নানা পদের চা আছে। বাংলাদেশে প্রথম দুই ক্যাটাগরির চা-ই বেশী চলে।

চা আবিস্কারের ইতিহাস- যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে শেয়ার করতে ভুলবেন না দয়া করে।