বানভাসির আহাজারি

বানভাসির আহাজারি; এ আহাজারি আমার মায়ের, আমার বোনের, আমার প্রিয় কণ্যার। সে জাত পাতহীন একজন মানুষ। বানের তান্ডব তার সিঁদুর কেড়ে নিয়েছে।  তার আব্রু খুলে নিয়েছে। তার কোলের বাছারে গ্রাস করেছে। তার মাথা গোঁজার ঠাই ভাসিয়ে নিয়েছে। সকল হারিয়ে আজ নি:স্ব, সহায় সম্বলহীন এক গ্রামের রমনী। আমার মা, আমার বোন, সে আমারি কণ্যা।

বানভাসির আহাজারি
– মোহাম্মদ শওকত আকবার

বানের স্রোতে ভাসলো মানুষ
ডুবলো ঘর বাড়ি,
দুধের বাছা, জোয়ান, বৃদ্ধ,
ফসল সারি সারি।

ঘর গেলো চুলো গেলো
গেলো গোয়ালের গরু,
মাথার ছাদও ভেসে গেলো হায়
আরো গেলো আব্রু।

মৃতের সতকারে কিঞ্চিত মাটি নাই
জলে জলে ভরপুর,
সলিল সমাধি হইলো অযুত
মুসলিম আর হিন্দুর।

ভাসাইয়া দিয়া মৃতের সৎকার
করিতে হইলো আজি,
বান আসিলো, বান আসিলো
রাক্ষুসি সাজি।

গলাগলি করে বসবাস করি
সাপ বিচ্ছুর সাথে,
নৃশংস জানোয়ার কেঁদে ভাসায় বুক
মানবের বেদনাতে।

বানভাসির আহজারি

চারিদিকে অথৈ পানি
যতখানি চোখ যায়,
নীল আসমানও কষ্টের জল
অহর্নিশ ঝড়ায়।

সব হারিয়ে বিলাপ করি,
দানা পানি নাই পেটে,
সহিতে পারিনা ক্ষুদার যাতনা
বক্ষ যায় ফেটে।

ক্ষুধার তাড়নায় এসেছিলো যেজন
ফিরাই নাই তো কভু,
সেই আমি আজ ভিখেরি হলাম
দুখ নেই তো তবু..

আমারি মতোন লাখো মানুষের
নেই কোনো আজ ঠাই,
বানের স্রোতে ভেসে থাকি খানিক
খানিকটা সাতরাই।

সিঁথির সিঁদির মুছে গেলো হায়
শুন্য হইলো বুক,
বানবাসি হইলাম আজিকে,
হারাইলাম সব সুখ।

বানভাসির আহাজারি

হয়তো এক সময় কেটে যাবে এই দুর্যোগ। কিন্তু বানভাসীর এই মনের ক্ষত কি সহজে মুছবে? আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো তাদের উজ্জল অতীত। পারবোন। যে মা সন্তান হারিয়েছে, যে বোন তার সিঁদুর হারিয়েছে, যে ভাই তার মাথার ছাদ হারিয়েছে, যে বাবা তার ফসল হারিয়েছে। আমরা এসব কিছুই আর ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। মুখ ভরে হয়তো আমরা আফশোশ করতে পারবো। যা তাদের কোনো উপকারেই আসবেনা।

তাদের বিন্দুমাত্র উপকারের জন্য আসুন বানভাসিদের পাশে দাঁড়াই। আপনার আমার যার যা আছে তা নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ তাদের সহায় হোক।

বানভাসির আহাজারি শুধু কি তাদের? এ আহাজারি আজ সমগ্র বাংলার আঠারো কোটি জনতার।