ঢাকা ‘র নাম করনের একটুসখানি ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস : ঢাকা – আমাদের প্রিয় শহর। আমাদের প্রানের শহর। ঘন্টার পর ঘন্টা অস্বস্থিকর জ্যামে আটকে থাকা শহর। খোড়া-খুড়ির শহর, মসজিদের শহর, লোকাল বাসের নরক যন্ত্রনার শহর, বসবাসের অযোগ্য শহর (অনলাইন সার্ভে করা এক টিমের ভাষ্য মতে), যানজট আর উন্নয়নের শহর; এতো কিছুর পরেও আমদের মনের স্বস্তির শহর। আমদের আশা আকাংখার শহর, আমাদের স্বপ্নের শহর, রাজনীতির শহর, সাহিত্য জলসার শহর, বুদ্ধিজীবীদের বসবাসের শহর, প্রাচীন অক্সফোর্ডের শহর, হৃদয় উজার করা ভালোবাসার শহর।

এতোসব বিশেষনে যাকে ভূষিত  করা হয়, কখনো কি জানার চেষ্টা করেছি এই বিশেষনের ঢাকা শহরের নামটি কখন বা কোথা থেকে এসেছে।  আজ সে বিষয়েই ছোটটো একটু ইতিহাস তুলে ধরবার চেষ্টা করবো।

ঢাকা শহরের নাম করন : (ধারনা-১)

এই শহরের নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি মত প্রচলন রয়েছে। কেউ মনে করেন,  বল্লাল সেন (সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা, সেন বংশের প্রতিষ্টাতা বিজয় সেনের পুত্র। পাল বংশ থেকে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে করতে সেনরাজত্ব প্রতিষ্টা হয়েছিলো। সেন বংশের গোড়া পত্তন হয়েছিলো ৯০০ শতকেরও পুর্বে আর বল্লাল সেন রাজত্ব করেছিলেন ১০৮৩ থেকে ১১৭৯ পর্যন্ত) কর্তৃক নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই এই নামের উৎপত্তি। নির্মিত ঢাকেশ্বরী এর নামকরনে ঢাকা রাখা হয়। তবে অনেক ইতিহাসবিদ এটা মানতে নারাজ। ঢাকেশ্বরী অর্থ যদি ঢাকার ইশ্বরী হয়ে থাকে, তাহলে এই নামটি তারও পূর্বের।

ঢাকা শহরের নাম করন : (ধারনা-২)

কেউ মনে করেন, এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে ঢাক নামের এক প্রকার গাছ ছিলো। সেখান থেকেই এর উৎপত্তি।

ঢাকা শহরের নাম করন : (ধারনা-৩)

আরো জানা যায়, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর (মোঘলিয়া সালতানাত এর সম্রাট আকবরের ছেলে এবং প্রথম সম্রাট বাবরের নাতি। এই সাম্রাজ্য 1600 থেকে 1720 সাল অবধি রাজত্ব করে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, মোঘল সাম্রাজ্য শুরু হয়েছিলো পানি পথের প্রথম যুদ্ধ ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে। আর এই মোঘলরা ছিলেন তৈমুর লং এর বংশধর) 1610 সালে রাজধানী রাজমহল থেকে স্থানান্তর করে ঢাকা কে বাংলার রাজধানী ঘোষনা করেন। তখন সুবেদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরুপ শহরে ঢাক বাজানোর নিদের্শ প্রদান করেন এবং বুড়িগঙ্গার কাছে ঢাক বাজিয়ে যতদুর পর্যন্ত সেই ঢাকের শব্দ শোনা যায় ততদুর পর্যন্ত সীমানা নির্ধারন করেন। আর এই ঢাকের শব্দের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারন হয়েছে বলেই নতুন রাজধানীর নামকরন হয় ঢাকা।

ঢাকা শহরের নাম করন : (ধারনা-৪)

আরো জানা যায় যে, তৎকালীন সময়ে “ঢাকাইয়া ভাষা” নামে একটি ভাষার প্রচন ছিলো, সেই অনুসারে এর নাম হয় ঢাকা।

ঢাকা শহরের নাম করন : (ধারনা-৫)

প্রাচীনকালে ঢাকা শহর ছিলো অন্যান্য শহর থেকে উঁচু। পার্শ্ববর্তী শহর সোনারগাঁ এবং বিক্রমপুরের সংযোগস্থল হিসেবে এখানে একটি পর্যবেক্ষন ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। প্রাকৃত উপভাষায় ফাঁড়িকে বলা হতো ঢাক্কা। ঢাক্কা থেকে কালক্রমে এই ঢাকা নামের উৎপিত্তি।

শেষকথা,

কিংবদন্তীল চরিত্রদোষ এর আপেক্ষিকতা। স্থান, কাল ভেদে বেড়ে যায় এর বহুরুপতা । সংশ্লিষ্ট লোকজ বিশ্বাস এবং ধ্যান ধারনার তারতম্যের কারনেও দেখা যায় হেরফের। যার করনে ঢাকার নামকরনের ইতিহাস ঐতিহাসিকদের ফেলে দিয়েছে দোলাচলে। কোন কারনে বা কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে যে সৃষ্ট হয়েছে প্রানের নগরী এই ঢাকা – তা আজ বহুরপ ঘটনা বা ইতিহাসেই রয়েছে আবৃত।

যেভাবেই হোক ঢাকা আজো স্বগর্ভে দাড়িয়ে আছে তার নিজস্ব স্বকীয়তায়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল হিসেবে ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। আর তখন সেই সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের মোড়কে আবৃত ঢাকা-ই হয় বাংলাদেশের রাজধানী।

স্বপ্ন দেখো, কিন্তু এমন স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন তোমাকে শুধু ঘুমের মধ্যেই রেখে দিবে.. মোহাম্মদ শওকত আকবার