প্রাচিন রোমের নির্যাতনের ন্রিশংসতা ‘র নমুনা

প্রাচিন রোমের নির্যাতনের ন্রিশংসতা ‘র নমুনার কথা জানলে কেপে উঠবে আপনার বুক, হিম হয়ে যাবে শরির। শরির হিম হয়ে যাওয়া সেই অত্যাচারের কিছু নমুনাই তুলে ধরবো আজ।

জিবন্ত কবর : 

প্রাচিন রোমের নির্যাতনের ন্রিশংসতা ‘র প্রথমেই আসে মানুষকে জিবন্ত কবর দেয়া। একজন অপরাধিকে জিবন্ত কবর দিয়ে আনন্দ পেতেন সম্রাট নিরো। অপরাধিকে নিজের কবর নিজেকেই খনন করতে হতো। সেই কবরে পুতে রাখা হতো চোখা চোখা লাঠি। অপরাধিকে হাত পা বেধে ফেলা হতো সেই কবরে। অপরাধের মাত্রা কম হলে এমনভাবে তাকে ফেলা হতো, যেনো লাঠির চোখা অংশটি তার হৃদপিন্ড ভেদ করে বেরিয়ে যেতো। সোজা কথায় নির্ঘাত ম্রিত্যু। আর অপরাধের মাত্রা বেশি হল, এমনভাবে ছোড়া হতো যেনো সে মারাত্বক ভাবে আহত হয়। এরপর তাকে সেই কবরেই ফেলে আসা হতো। যেখানে তার ধিরে ধিরে ম্রিত্যু হতো। কখনো বা সে অবস্থাতেই তাকে দেয়া হতো জিবন্ত করব।

আর নারিদের সতিত্ব ভঙ্গের জন্যে এ শাস্তি দিয়ে তিনি আনন্দ পেতেন। একবার তিনি যাজিকা রুব্রিয়া নামের এক নারিকে দিয়েছিলেন এই শাস্তি। তাকে একটি ছোটো গুহায় আটকে রেখে এসেছিলেন কোনো রকম খাবার পানিয় বাদেই। যেনো সে না খেতে পেরে আস্তে আস্তে ম্রিত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অবশেষে ঘটনা তাই ঘটেছিলো। নারিটি না খেতে পেরে মারাই গিয়েছিলেন।

ক্রুশবিদ্ধকরন :

প্রাচিন রোমের নির্যাতনের ন্রিশংসতা ‘য় রোমের অত্যন্ত জনপ্রিয় আরেক শাস্তির নাম ক্রুশবিদ্ধ করে অপরাধিকে মারা। অপরাধির হাতে পায়ে পেরেক ঠুকিয়ে মারা হতো। সব সময় যে অপরাধিকে ক্রুশবিদ্ধ করেই মারা হতো না নয়, একেক জল্লাদ এক এক পদ্বতি আবিষকার করতেন। এক এক জল্লাদ তাদের নিজেদের স্রিজনশিলতা উপহার দিতে চাইতেন।

কখনো বা অপরাধিকে উলঙ্গ করে মাখা ঢেকে, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো হতো, যতক্ষন না অপরাধির ম্রিত্যু হতো। কখনো বা প্রথা অনুযায়ি হাতে পায়ে পেরেক ঠুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো যতক্ষন না তার মরন বরন হয়। ‍ম্রিত্যুর প্রকিয়া ত্বরান্বিত করতে মাঝে মাঝে সে অবস্থাতেই পেটানো হতো। কখনো বা আঘাত করা হতো তাদের গোপনাঙ্গে।

কলড্রন টর্চার :

এ এক ভয়াবহ নির্যাতন। এ নির্যাতরেন জন্য ক্ষুধার্ত ইদুর, কুকুর, বেড়ালকে ছোটো কলড্রনে আটকে রাখা হতো। কলড্রনের খোলাভাগ অপরাধির পেটের সাথে আটকে দেয়া হতো। এবার জল্লাদ বা শাস্তিদানে নিয়োজিত ব্যক্তি কলড্রনের পেছনে আগুনের উত্তাপ দেয়া শুরু করতো। প্রানিটি তখন জিবন বাচাতে সামনের দিকে ছুটতে খাকতো। সে সময় প্রানিটি অপরাধির পেটের নরম মাংস পেয়ে সে সেটা খেয়েই সামনের দিকে এগুতো বা পালাতে চাইতো। বিষয়টা এমন যে, প্রানিটি অপরাধির পেট ছিদ্র করে নাড়ি ভুড়ি খেতে খেতে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতো।

ব্যারেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন : 

রোম সম্রাট ডোমেমিয়ান। সময় কাল 81 তেকে 96 খ্রিস্টাব্দ। সাম্রাজ্যের একাদশ সম্রাট ছিলেন। তার সময়কালেই সেখানে বসবাসকারি খ্রিষ্টানদের উপর তিনি করেছিলেন ভয়াবহ নির্যাতন।

নানবিধ নির্যাতনের মাঝে সবচে ভয়াবহ ছিলো ব্যারেল নির্যাতন। একজন অপরাধি পুরো শরির মধু ও দুধ দিয়ে ভালো করে মাখানো হতো। তারপর তাকে একটি ব্যারেলে আটকে রাখা হতো। আর খেতে দেয়া হতো পচে যাওয়া পোকা ধরা সব খাবার। সে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতো অপারাধি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ম্রিত্যুমুখে পতিত হতো সে।

মৌমাছির আক্রমন : 

প্রথমেই তৈরি করা হতো এক ধরেনের বড়সড়, ফাকা করে তৈরি বিশেষ ঝুড়ি। অপরাধিকে উলঙ্গ করে প্রবশে করিয়ে দেয়া হতো সেই ঝুড়িতে। এরপর সেই ঝুড়িটি টাঙ্গিয়ে দেয়া হতো কোনো গাছের সাথে। আশপাশে থাকতো বড় মৌচাক। মৌমাছিরা আক্রমন করতো সেই অপরাধির উপর। মৌমাছির হুরের যন্ত্রনায় আস্তে আস্তে ম্রিত্যু হতো সেই অপরাধির।

যৌনাঙ্গ বেধে মারা :

টাইবেরিয়াস, অন্যতম ঘ্রিনিত ইতিহাসের আরেক রোম সম্রাট। প্রচন্ড বদ মেজাজি একজন। দেশের জনগন সব সময় তার ভয়ে আতংকিত থাকতো। মানুষকে শাস্তি দিতে আজগুবি যত চিন্তা ভাবনা বা নিত্য নতুন উপায় ঘুরপাক খেতো তার মাথায়।

কাউকে শত্রু মনে হলে, তাকে ছলনা করে মদ্যপানের আমন্ত্রন জানাতেন। অতিরিক্ত মদ্যপানে তাকে মাতাল করে দিয়ে শুরু করে দিতেন তার নির্যাতনের খেলা। বেধে দিতেন তার জননাঙ্গ । নির্যাতনের কারনে প্রচন্ড পেশাবের বেগ চাপলেও কিছুই আর করার থাকতো না দুর্ভাগার। এক সময় ‍ম্রিতুই হতো তার সঙ্গি।

একবার এক বলিদান অনুষ্ঠানে এক ভ্রিত্যের সাথে সমকামে লিপ্ত হবার বাসনা জাগে তার। একসময় শুধু ভ্রিত্যই নয় তার ভাইয়ের সাথেও মনের অসুস্থ কামনা চরিতার্থ করেন। এ নিয়ে তার ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করলে পা ভেঙ্গে দেন তার।

বুনো শুকর দিয়ে খাওয়ানো :

হেলিওপোলিস যখন রোমের অধিনে ছিলো, তখনকার একটি নির্যাতনের কথা বর্ননা করেছেন সেইন্ট গ্রেগরি । কোনো কিশোরি বা তরুনি অপরাধে অভিযুক্ত হলে, প্রথমেই তাকে নগ্ন করে পেট চিরে ফেলা হতো । মেয়েটি যথন যন্ত্রনায় আকাশ – বাতাস প্রকম্পিত করে চিতকার করতে থাকতো তখন শাস্তি প্রদানকারি ব্যস্ত থাকতো তার পেটের কাটা অংশ যব দিয়ে ভরাটে। ভরাট হয়ে গেলে ফের পেট সেলাই করে দেয়া হতো। অবশেষে মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়া হতো বুনো শুকরের খাচায়। শুকরটি তাকে চিড়ে ফেরে টুকরো টুকরো করে ফেলেতো।

এমন শাস্তির শিকার হয়েছিলেন সেইন্ট অ্যাগনেস, সেইন্ট প্রিস্কা ও সেইন্ট ইউফেমিয়া অফ অ্যাকুইলেইয়া নামের মেয়েগুলো । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাস্তির মুখোমুখি হতো কুমারি মেয়েরা। রোমান আইনে কুমারিদের ম্রিত্যুদন্ডের বিধান ছিলোনা। তাই মেয়েটিকে প্রথমেই তুলে দেয়া হতো একজন গ্লাডিয়েটরের হাতে। তাদের দ্বারা মেয়েটিকে ধর্ষন করার পরই তার উপর দিয়ে শুরু হতো পরবর্তি নির্যাতন ।

ম্রিত গাধার ভেতর ঢুকিয়ে রাখা :

কাউকে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য হলেই প্রথমে একটি গাধাকে বধ করে এর পেট কেটে নারি ভুরি বের করে আনা হতো। অপরাধির পরিধেয় বস্ত্র খুলে তাকে হাত পা বেধে ঢুকিয়ে দেয়া হোত সেই গাধার ভেতরে। এরপর সেলাই করে দেয়া হতো ম্রিত গাধার পেট। বাইরে থাকতো অপরাধির মাথা।

তারপর গাধা সমেত অপরাধিকে রেখে দেয়া হতো উত্তপ্ত রোদে। সুর্যের প্রচন্ড তাপে ম্রিত দেহের পচন ধরতে শুরু করতো। পচা অংশে পোকা মাকড় উঠতে শুরু করতো লোকটির শরিরে। আর আকাশ থেকে নেমে শকুনের দল ঠোকরাতে শুরু করতো তার শরির। এভাবে কিছুদিন অমানবিক কষ্ট ভোগের পর ‍ম্রিত্যু বরন করতো অপরাধি।

তরবারি দিয়ে কুচিকুচি করে মারা :

প্রাচিনকালের রোমে অন্যতম গুরুত্বপুর্ন বিষয় ছিলো সামাজিক অবস্থান। বিত্ত-বৈভব ও ক্ষমতার দিক দিয়ে যার অবস্থান যত উপরে, তিনি তত বেশি জবাবদিহিতার উর্ধ্বে থাকতেন। যেমন বলা যায়, সম্রাটকে তার কাজের জন্য কারো কাছেই জবাবদিহিতা করতে হতো না। সেনাবাহিনির একজন জেনারেল তার বাহিনির অন্যান্য অধস্তন কর্মকর্তা ও সাধারন জনগণের উপর ক্ষমতাবান ছিলেন। ওদিকে একজন সাধারণ সৈনিকের ক্ষমতা বিস্তৃত ছিলো কেবল সাধারণ জনগণের উপর, সে তাদের নিকট কৈফিয়ত দিতে বাধ্য থাকতো না।

সামাজিক মর্যাদার এই যে স্তরবিন্যাস কঠোরভাবে মেনে চলতে হতো। যদি কোনো সাধারণ নাগরিক একজন সৈনিককে টপকে যেতে চাইতো, তাহলে জনতার সামনে খোজা করে তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। আর একজন সৈনিক যদি এটা স্বেচ্ছায় মেনে না নিত, তাহলে জনতার সামনে পেট কেটে তার নাড়িভুড়ি বের করে ফেলা হতো।

সিনেটরের দুর্ভাগ্য :

ক্যালিগুলা । ৩৭ থেকে ৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের ত্রিতিয় সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একবার এক সিনেটরের উপর প্রচন্ড ক্ষেপে যান সম্রাট ক্যালিগুলা। শাস্তি হিসেবে লোকটিকে চিরে ফেলা হয়। তখনও তার প্রান পাখিটি দেহ থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায়নি। এজন্য সম্রাট নির্দেশ দিলেন অপরাধির চোখদ্বয় তুলে নিতে। এরপর গরম সাড়াশির সাহায্যে তার শরিরের ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো একে একে টেনে বের করা হলো । সবশেষে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়া হয় দেহটি ।

রোমের মানুষেরা বিশ্বাস করতো, মৃত্যু কোনো যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি নয়। বরং এর মধ্য দিয়েই মিলে মুক্তি। যন্ত্রনার অনুভূতি হয় নির্যাতনের সময়। ম্রিত্যুর মধ্য দিয়ে নির্যাতিত লোকটি এ ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতো বলেই মনে করতো তারা।