ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় ..
ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় ..

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় ..

5
(1)

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় হচ্ছে নবী মোহাম্মদের ওফাতের পর সৃষ্ট রাজ্য শাসন ব্যবস্থা যথাক্রমে :  ১. রাশেদিন খেলাফত ২. মুয়াবিয়া খেলাফত ৩. আব্বাসীয় খেলাফত ও সর্বশেষ ৪. উসমানীয় খেলাফত। এই চার শাসন ব্যবস্থাকেই ইতিহাসে ইসলামী খেলাফত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আমি সংক্ষিপ্ত আকারে চেষ্টা করবো ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি খেলাফতের ইতিহাস তুলে ধরতে। যা অধ্যয়নে ধৈর্যের কোনরকম বিচ্যুতি হবেনা বলেই আশা রাখি।

৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী, হযরত মুহাম্মদ (স:) ইন্তেকাল করেন। মুহাম্মদ (সা:) এর জীবদ্দশ্যায়, তিনি মানবজাতীর জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা স্বরূপ, পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য, মদীনা কেন্দ্রীক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে যান। মূলত তাঁর ওফাতের পর, ইসলাম ধর্ম, ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, ইসলামে খেলাফতের শাসন ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। খেলাফতের এই  শাসন ব্যবস্থার প্রধানকেই বলা হয় খলিফা ।

খলিফা ( خليفة‎) আরবী শব্দ, অর্থ : প্রতিনিধি), আভিধানিক অর্থ উত্তরাধিকারী, প্রতিনিধিত্বকারী, স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি, কর্মাধ্যক্ষ, জনসমষ্টির দেখাশোনার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ইসলামী পরিভাষায় খলিফা হলেন এমন ব্যক্তি যিনি যাবতীয় বিষয়ে শরিয়ত (আরবি শব্দ : شريعة‎‎‎, শারি’আহ্ বা অর্থ  : “কর্মপদ্ধতি”) বা ইসলামি আইন বা শরিয়ত আইন হচ্ছে জীবনপদ্ধতি ও ধর্মীয় আইন যা ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি অনুষঙ্গ। ইসলামি পরিভাষাকোষ অনুযায়ী, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং নবি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) যেসব আদেশ-নিষেধ, নিয়ম-নীতি ও পথনির্দেশনা মুসলমানদের জন্য প্রদান করেছেন, তার সমষ্টিই হচ্ছে শরিয়ত। এটি ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন হতে উৎসরিত, প্রধানত কুরআন ও হাদিস হতে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে যথাক্রমে আল্লাহ ও তার রাসূল হযরত মুহাম্মাদে(সঃ) এর দিক নির্দেশনার উৎস। আরবিতে, স্রষ্টার অমোঘ স্বর্গীয় আইন বুঝাতে শরিয়ত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অনুযায়ী সমস্ত উম্মত (বহুসংখ্যক জাতির সমন্বয়ে গঠিত সামগ্রিক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোঝায়) পরিচালিত করেন। ইসলামী রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন একজন খলিফা । তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর, শাসক, নেতা, কাযী” (قضى আরবি ভাষায় কাজি অর্থ বিচারক। ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে কাজির বিচার কুরআন, হাদিস কিংবা ইজমার ভিত্তিতে হত। কাজী বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ) নিযুক্ত করে থাকেন।

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় এর প্রথম অধ্যায় :

রাশেদিন খেলাফত

ইসলামের প্রথম ফেলাফত | রাজত্বকাল : 632 থেকে 661 পর্যন্ত

ইসলামের প্রথম খেলাফত হলো রাশেদিন খেলাফত। মহানবী (স:) এর ওফাতের পর, ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হযরত আবু বকর (রা:) ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) এর, খেলাফত লাভের পর থেকে শুরু করে, দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা), তৃতীয় খলিফা উসমান (রা) এবং ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ও সর্বশেষ রাশেদিন খলিফা, হযরত আলী (রা) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত, মোট চারজন খলিফার দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের শাসনকালকে, রাশেদিন খিলাফতের শাসনকাল হিসেবে অভিহিত করা হয়। যা ইসলামের ইতিহাসে সোনালী যুগ হিসেব পরিচিত। মূলত আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশ হতে মুহাম্মদ (স) এবং ইসলামের চার খলিফার গোত্রের উৎপত্তি।

৬৬১ খ্রিস্টাব্দে হযরত আলী (রা:) এর ওফাতের পর, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও কারবালার মতো মর্মান্তিক ঘটনার অবতারনার পর আলী পুত্র হাসান (রা) এক সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে মুয়াবিয়া (রা) কে খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেন।

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় এর দ্বিতীয় অধ্যায় :

উমাইয়া খেলাফত

ইসলামের দ্বিতীয় ফেলাফত | রাজত্বকাল : 661 থেকে 750 পর্যন্ত

মুয়াবিয়া (রা) এর খেলাফত লাভের মধ্যদিয়ে রাশেদিন খেলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং উমাইয়া খেলাফতের উত্থান হয়। মুয়াবিয়া (রা) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল বলে এটিকে উমাইয়া রাজবংশও বলা হয়। উমাইয়া খেলাফতের ১৪ জন খলিফা ৬৬১ খ্রি. থেকে ৭৫০ খ্রি. পর‌্যন্ত সাথে ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান গণি (রাঃ) খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন হযরত আমির মুয়াবিয়া (রাঃ) কর্তৃক সূচিত হয়।

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় এর তৃতীয় অধ্যায় :

আব্বাসীয় খেলাফত

ইসলামের তৃতীয় ফেলাফত | রাজত্বকাল : 750 থেকে 1258 পর্যন্ত

৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া রাজবংশের পতনের পর ইসলামী খেলাফতের মহান দায়িত্ব লাভ করে আব্বাসীয় রাজবংশ। আব্বাসীয় বংশ ছিল মক্কার বিখ্যাত হাশেমী গোত্রের একটি শাখা। মূলত আব্বাসীয় বংশের নামকরণ করা হয় হযরত মুহাম্মদ (স) এর চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের নাম অনুসারে। ৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে আব্বাস (রা) এর মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল্লাহ আব্বাসীয় পরিবারের কর্তৃত্ব লাভ করেন। আব্দুল্লাহ ইসলামের ইতিহাস ও হাদিস শাস্ত্রে ইবনে আব্বাস নামে সর্বাধিক পরিচিত।

আব্বাসীয় খেলাফত ছিল ইসলামের তৃতীয় খেলাফত । রাজ্য বিজয়, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এই খিলাফতকে ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খেলাফতের পতনের পর উত্থান হওয়া আব্বাসীয় খেলাফত ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর‌্যযন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০০ বছর মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে এই খেলাফতের পতন ঘটলেও, ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় খলিফারা মিশরের মামলুক সুলতানতের অধীনে মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

হিজরি সপ্তম শতাব্দী। মোঙ্গলীয়দের আক্রমণে লণ্ডভণ্ড আব্বাসীয় খেলাফত । কনস্টান্টিনোপলের খ্রিষ্টানদের সাথে লড়াইয়ে রোমের সালজুক সালতানাতের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। ইসলামি ইতিহাসের এক চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়। ঠিক এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে হেসে ওঠে এক নবারুণ সূর্য। দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই সূর্যের দীপ্তি। ইসলামি সাম্রাজ্যের মেঘলা আকাশকে স্বচ্ছ এবং প্রখর রোদের আকাশে পরিণত করা সেই সূর্যের নাম ‘উসমানি সালতানাত’।

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় এর সর্বশেষ ও চতুর্থ অধ্যায় :

উসমানীয় খেলাফত

ইসলামের সর্বশেষ ফেলাফত। রাজত্বকাল : 1517 থেকে 1923পর্যন্ত

ইসলামি ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় জুড়ে ছড়িয়ে যে সালতানাতের ব্যাপ্তি। যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী দোর্দণ্ড প্রতাপের এবং ন্যায়নিষ্ঠার সাথে শাসন করে গেছেন মুসলিম বিশ্ব। একের পর এক রাজ্য বিজয় করে ইসলামকে করেছেন সমুন্নত এবং সম্প্রসারিত। সারা বিশ্ব যাদেরকে জানে ‘অটোমান সাম্রাজ্য’ নামে। দীর্ঘকাল যাদের কথা চর্চা হয়ে আসছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।

তের শতকের শেষ ভাগে ওঘুজ তুর্কী গোত্র নেতা ওসমান গাজীর হাত ধরে আনাতোলিয়ার উত্তর-পশ্চিমাংশে যাত্রা শুরু করে উসমানীয় সাম্রাজ্য। ইতিহাস বিখ্যাত এ সাম্রাজ্য পৃথিবীর বুকে টিকে ছিলো প্রায় ছয় শতাব্দী ধরে। চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তারা ইউরোপের দিকে অগ্রসর হয় এবং বলকান অঞ্চল জয়ের মাধ্যমে একটি আন্তঃমহাদেশীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পনের শতকের মাঝামাঝি সময়ে কনস্টান্টিনোপল জয়ের মাধ্যমে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটান উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মোহাম্মদ।

ইতিহাস বিখ্যাত উসমানীয় সুলতান সুলাইমানের পিতা সুলতান সেলিম ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে মারজ-ই-দাবিকের যুদ্ধে মামলুক সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে আরব দেশ সমূহ জয় করেন। এবং তখনকার আব্বাসীয় খলিফা থেকে খেলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন। উসমানীয় সাম্রাজ্য মূলত সুলতান সেলিমের শাসনামল থেকেই উসমানীয় খেলাফত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

আমি একে একে ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় অর্থাৎ মহানবী সা. এর ইসলামি সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে (অটোম্যান) উসমানীয় সালতানাদের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাস উপস্থাপন করবো।

যদি আমার এই উপস্থাপনা বা সংকলনের কোথাও কোনোরকম ভুল ভ্রান্তি বা অসত্য মনে হয়, দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব :

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 1

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

About মুর্খের গলাবাজি

মুর্খের গলাবাজি
মুর্খের গলাবাজি আর ছাইভস্ম সমান জিনিস! যাহা কখনোই কোনো কর্মে প্রয়োজন পরেনা। যাহা বেকারই যত্রতত্র পরিয়া থাকে।

Check Also

ভাগ্য পরিবর্তনের দোয়া

0 (0) ভাগ্য পরিবর্তনের দোয়া : মানুষ সৌভাগ্যবান হতে চায়। দুর্ভাগ্য কারো কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »