জ্ঞানের বিস্ফোরন ও মুর্খের দৃষ্টিভঙ্গি..

5
(1)

জ্ঞানের বিস্ফোরন হচ্ছে যতো আমরা ততোই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি, বদলে যাচ্ছি। মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, ধর্ম – বিলিন হচ্ছে আমদের ভেতর থেকে। আমরা এক গভির অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি দিনের পর দিন।

মুঠোফোন ও সোশাল মিডিয়া :

”মুঠোফোন” আর ”সোশাল মিডিয়া একটির সাথে আরেকটি যেনো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ব্যতিত আরেকটি যেনো অচল, অসাড়। এই দুইটি মাধ্যম একত্রিত হয়ে বর্তমানে আমাদের নিত্য প্রয়োজনিয় ও ব্যবহার্য ”মাধ্যম” হয়ে দাড়িয়েছে। আনন্দ বিনোদন, ব্যবসা বানিজ্য প্রতিটি সেক্টরেই এদের বিচরন, সর্বত্রই এদের ব্যবহার। এদের উপকারিতা বর্ননা করেও শেষ করা যাবে না।

সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা আজ মুহুর্তেই জানতে পারছি দেশ বিদেশের খবরাখবর, ইতিহাস-ঐতিহ্য, টেনকোলজির সর্বশেষ আদোপ্যান্ত। আনন্দ, বিনোদন, কান্না, হাসি, কষ্ট, বেচা কেনা, পর্নগ্রাফি, জ্ঞান বিজ্ঞান, আলোচনা সমালোচলা, রাজনিতি, অর্থনিতি, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্তৃতি – সকল কিছুই.. । এত্তো এত্তো উপকারি একটি মাধ্যমকে আজ আমরা একদম ফেলনা, খেলনা, যন্ত্রনা, বিরক্তিকর বানিয়ে ফেলেছি। (আমার এই আর্টিকেল শুধুই আমার দেশের বাংলা ভাষা ভাষির জন্যই রচিত) ।

একি খেলা চলছে হর্দম :

ব্যস্ত, সবাই ব্যস্ত.. প্রচার প্রসার, নিজেকে জাহির করার মানসে। আজ সবাই অভিনেতা, ব্যবসায়ি, উপদেষ্টা, জ্ঞানি, ডাক্তার, কবিরাজ, সকলেই ধর্মের দায়ি। বাদ নাই কিছুই। কারো তৈরি করা কিছু দেখার বা শুনার মতো সময় নেই কারোরই। সবাই দেখাতেই ব্যস্ত.. ব্যস্ত প্রচার আর প্রশারের জন্যি।

আমার একটি বদনা আছে, আমি অমুক ব্রান্ড হতে একটি জাংগিয়া কিনেছি, আমার বাল কাটার মেশিন টা সূদুর মরুভুমির দেশ দুবাই হতে আমদানী করা, আমি সর্বদা মানুষের উপকারের জন্যি আইক্কা ওয়ালা বাশ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে দৌড়াচ্ছি, আমার মতোন এই সমাজে বড় কোনো দাতা নাই, আমার মতোন এমন পতিভক্তি কারো নাই, স্বামী সন্তান, শ্বশুর শ্বাশুরি লইয়া এই প্রথিবীতে আমার মতোন সুখি কেউ নাই। আমার মতোন জ্ঞানি নাই কেউ, আমি সবজান্তা শমসের… আমার অমুকটাই সবার চাইতে উৎকৃষ্ট.. সকলেরটা নিকৃষ্ট.. আবার ঠিক উল্টোটাও আছে। কাকে কে ছোটো করে দেখবে, কার পোষ্টে কে একখানা জব্বর উত্তর দিয়ে ধরাশায়ি করবে, এক বিকৃত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করছি প্রতিনিয়ত। হিনমন্যতায় ডুবে যাচ্ছি দিনের পর দিন।

ভাইরাও নামক ডিজিস :

ভাইরাও (শওকত বিডির ভাষায়, নিজেকে প্রচারের আরেক নাম) হবার নতুন আজিব এক কর্মশালা ছুটে চলছি অনন্তর । কেউ থেমে নাই, দাদা, দাদি, নানা নানি, বাবা, মা। আর সন্তান.. কেমন যেনো একখানা জগা খিচুরি মার্কা সময় অতিবাহিত করছি সকলেই। প্রযোজক, পরিচালক, ফটোগ্রাফার, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটর, স্ক্রিপ্ট রাইটার, আমরা সকলেই। তৈরি করছি ভিডিও।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে :

কিরুপে চুলায় ভাত রান্না করতে হয়, তা নিয়ে ব্যতি ব্যস্ত আমাদের দাদিমা, আলু ভর্তার রেসিপি নিয়ে গলদঘর্মা আমাদের জননি, কিরুপে কেশবতি কন্যারা কৃষ্ঞ কেশে তৈল মেখে সিথি কাটবে, তার একটি সর্ট কোর্স শিখাতে সকাল সন্ধ্যায় ব্যস্ত বইন আমার, শেভ করার ভিডিও বানাতে ব্যস্ত আব্বাজান, আর দাদাজান ব্যস্ত দু একটা ওয়াজ নসিহত সংগ্রহ করে ভিডিও বানাতে, বড় বৈদি ব্যস্থ কিভাবে শাড়ি ছায়া পড়তে হয়, তা শিখাতে, বুয়াও ব্যস্থ কোন বাসার স্যার মেডাম ঝগড়া কাজিয়ায় লিপ্ত তা রেকর্ড করে ভিডিও তৈরিতে। বড়ই ব্যস্ত সকলে.. সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
কেউ থেমে নেই।

হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা :

ছোটো ছোটো বাচ্চারা বিস্রি বিস্রি যতসব অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও তৈরি করে প্রচার করছে। সেলিব্রেটি হতে নিজেদের উজার করে দিচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে লাজ-শরম। এটাইতো স্বাভাবিক। তারাতো আমাদের কাছ থেকেই শিখছে এসব।

ভিডিও বানাতে হবে, ভাইরাও হতে হবে। ভিউ বাড়াতে হবে। কেউ তা প্রত্যক্ষ করুক আর নাই করুক, কিঞ্চিত ডলার খরচ করে, জোড় করে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তার ভিউর সংখ্যা বাড়াতেই হবে। কি থুইয়া যে কি সৃষ্টি করছি, কেউ কিছুই বলতে পারছি না। ভৈরবি নৃত্য করছি একযোগে।

জ্ঞানের বিস্ফোরন চতুর্দিকে :

জ্ঞানহিন (?) লোক একটি চ্যানেল খুলে মোটিভেশনাল স্পিসের জনক সেজে এখান থেকে কিছু ওখান থেকে কিছু কাট ছাট করে কপি পেষ্ট মেরে প্রতি নিয়ত মোটিভেশনাল স্পিস দিয়ে যাচ্ছে। এটা করিও, ওটা করিওনা, নিজের অধিকার আদায় করে নাও, না বলতে শিখো। কি দিয়ে যে কি হবে স্পিকার মহাশয় নিজেই জানেন না। ভিন্নধর্মী কিছু করতে হবে-তাই যেনো সকলের মন বাসনা। কিছু হোক আর না হোক, সমাজে তা চুলুক আর নাই চলুক, তাকে করতেই হবে।

জব্বর মিয়া, জুম্মার নামাযের সময় রাস্তার সস্তা দোকানে বসে টিক টিক ভিডিও দেখে আপ্লুত হওয়ার পাশাপাশি বিড়ি ফুকতে ফুকতে ”জুম্মা মোবারক” লিখে তার হোয়াটস আপ গ্রুপে পোষ্ট মেরে দিচ্ছে। ।

কবির মিয়া, জুম্মার খুতবায় তার পিচ্ছি পোলার লগে একখানা সেল্ফি তুলে, ফেসবুকে পোষ্ট করে ক্যাপশণে লিখছে, ”আমরা বাপ বেটা এখন অমুক মসজিদে, জুম্মার খুতবায়”।

সোলায়মান খান, কাবা ঘরের সামনে দাড়িয়ে সেলিফি তুলে কেপশন দিচ্ছে – ”হজ্ব করছি। এইবার নিয়ে দুইবার হজ করলাম”।

মদ্যপ মাতাল দেলু মিয়া, একখানা টুপি মাথায় রাস্তার ভিখেরীর সাথে সেলফি তুলে কেপশন দিচ্ছে : ”গরিবের প্রতি সদয় হোন”। কত্তো কত্তো কি ?? বাদ নাই কিছুই। হর্দম চলিতেছে!

বদলে যাচ্ছি আমরা :

দিন যতোই অতিবাহিত হচ্ছে, আমরা ততোই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি, বদলে যাচ্ছি। মানবতা, ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, ধর্ম – বিলিন হতে বসেছে আমদের ভেতর থেকে। আজ মানুষে মানুষে বেড়েছে ভেদাভেদ। মানসিক রোগি হচ্ছি দিনের পর দিন। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে ভুলে যাচ্ছি নিজেকেই নিজে, নিজস্ব স্বত্তাকে। ভেতরে ভেতরে ক্ষয় হচ্ছে হৃদয়ের স্পন্দন।

মূর্খের মতাদর্শ :

ঠিক আছ মেনে নিলাম, এটা সময়ের দাবি, কিন্তু তাই বলে কি আমরা মনুষ্য সমাজ থেকে বের হয়ে গিয়েছি? যদি তা নাই হয়, তাহলে একজন পরিপুর্ন মানূষ নিজের গুন কির্তন করে এভাবে ? কিভাবে পারে নিজেকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপনা করতে পারে? ধর্ম হতেও যদি বের না হয়ে থাকি, তাহলে কিভাবে একজন মানুষ ধর্মের শিক্ষা উপেক্ষা করে নিজের ইবাদত বন্দেগির কথা লোক সম্মুকে এভাবে প্রচার করতে পারে ? এটা কি লোক দেখানো ইবাদত নয় ? কোনো ধর্মে কি লোক দেখানো ইবাদতের কথা উল্লেখ আছে?

নিজে কিভাবে জিবন যাপন করছি, কি খাচ্ছি, কি ক্রয় করছি, কিভাবে সংসার নামক নাট্যমঞ্চে অভিনয় করে যাচ্ছি, তা গর্ব করে অন্যদের জানানো কি ঠিক হচ্ছে ? আমার মাস্তিস্কে এটা খেলে না। হয়ত আমি মুর্খ বলিয়াই এত্তো এত্তো জ্ঞানের বিষয় উপলব্ধি করতে পারিনা । হয়তো আমারই ব্যর্থতা।

তবে যতটুকু বুঝি, এইসব লোক দেখানো কর্মকান্ড আদৌ ঠিক নয়। আমাদের এইসব লোক দেখানো কর্মকান্ড হতে বের হয়ে আসা উচিত। এখই সময় আমাদের সংশোধনের। নচেৎ যেরুপ মিথ্যায় অবগাহন করছি আমরা, সেই মিথ্যা নিয়েই হবে জিবনের যবনিকাপাত।

তাই আসুন সোশাল মিডিয়ার প্রকৃত ব্যবহার শিখি। আর হিনমন্যতার রোগ থেকে নিজেদের রক্ষার্থে মিথ্যে, লোক দেখানো যত রকম অপকর্ম আছে তা হতে নিজেদের মুক্ত করি। সত্যিকারভাবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখি, অন্যের প্রাপ্য সন্মান দেই। সমাজ, দেশ, জাতি, ধর্মকে ভালোবসি।

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 1

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

About মুর্খের গলাবাজি

মুর্খের গলাবাজি
মুর্খের গলাবাজি আর ছাইভস্ম সমান জিনিস! যাহা কখনোই কোনো কর্মে প্রয়োজন পরেনা। যাহা বেকারই যত্রতত্র পরিয়া থাকে।

Check Also

প্রার্থনা

প্রার্থনা..

5 (2) প্রার্থনা.. হে আল্লাহ তোমার কাছে হাত তুলে ক্ষমা চাই। ক্ষমা করো। তুমি রহমান, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »