বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব

বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব

5
(5)

বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব : বাংলাদেশের জাতিয় মসজিদ এই বায়তুল মোকাররম। ঢাকা শহরের পল্টন এলাকায় অবস্থিত। উর্দূভাষি বাওয়ানি পরিবারের পক্ষ থেকে পারিবারিক উদ্যোগে নির্মান করা হলেও ধিরে ধিরে এটি এক সময় জাতিয় মসজিদে রুপান্তরিত হয়। যা বাংলাদেশের সকল মুসলিমদের কাছে এক অন্যরকম মর্যাদার স্থান হয়ে উঠেছে। আজ অবধি সগৌরবে দাড়িয়ে আছে এই বায়তুল মোকাররম। যা মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের আজ গর্বের প্রতিক। কিয়ামত অবধি হয়তো এভাবেই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে টিকে থাকেব এটি। আর আল্লাহ্ তায়ালার অদৃশ্য পায়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে বাঙ্গালি নামের মুসলিম জনগোষ্ঠি।

আলহামদুলিল্লাহ্!

কিভাবে বায়তুল মোকাররম মসজিদ বাংলাদেশের জাতিয় মসজিদ হয়ে উঠেছে – জানাবো ছোটটো পরিসরে তারই ইতিহাস।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের শুরু: ১৯৫৯ সালে ঢাকার বড় শিল্প উদ্যোক্তা ‘বাওয়ানি জুট মিলস’ এর মালিক উর্দুভাষি আব্দুল লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানিবায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠন করে এই মসজিদটি নির্মানের প্রকল্প হাতে নেন এবং ১৯৬০ সালের ২৭শে জানুয়ারি আব্দুল লতিফ বাওয়ানি মসজিদ নির্মানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

তার ২ বছর পর ১৯৬২ সাল নাগাদ মসজিদ নির্মানের মুল কাজ মোটামুটি শেষ হয়। তবে সম্পুর্ন মসজিদের কাজ শেষ হয় ১৯৬৮ সালে। পাকিস্তানের সিন্ধুর স্থপতি এ এইচ থারানি মসজিদটির নকশা প্রনয়ন করেন। প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির ওপর নির্মান করা হয় মসজিদটি।

মসজিদ নির্মানের জন্য যখন এই জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়, তখন সেখানে পল্টন পুকুর নামে একটি বড় পুকুর ছিল। পুকুরটি ভরাট করেই মসজিদের নির্মানে হাত দেয়া হয়।

পল্টনে এই মসজিদ নির্মানের কারন: সেই সময় পুরনো এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থল ছিলো এই পল্টন। পুরোনো এবং নতুন উভয় স্থানের ঢাকার মানুষের কথা মাথায় রেখেই হয়তো জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছিলো।

কাবা ঘরের আদলেই নির্মান হয় বায়তুল মোকাররম: মক্কার কাবা ঘরের আদলেই ডিজাইন এবং নির্মান করা হয় মসজিদটি। যে কারনে এটি চারকোনা আকৃতির। এখানে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদের অবকাঠামো: মসজিদটি প্রথমে ৩০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের সুযোগ রেখে নির্মান করা হয়। পরবর্তিতে ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটির সম্প্রসারন করা হয়। যার ফলে ৩০ হাজার থেকে উন্নিত হয়ে ৪০ হাজার মানুষের একসাথে নামাজ আদায়ের সুযোগের সৃষ্টি হয়।

মসজিদের মুল ভবন ৮ তলা বিশিষ্ট, মাটি থেকে যার উচু প্রায় ৯৯ ফুট। ৮ তলা এই মসজিদের সবচেয়ে নিচের তলায় মার্কেট এবং গুদাম ঘর রয়েছে। দোতলা থেকে আরম্ভ করে ৬ তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় নামাজ পড়া হয়। আর খতিব বা ইমাম নামাজ পড়ান দ্বিতিয় তলা হতে।

মহিলাদের নামাযের ব্যবস্থা: মসজিদের তিন তলার উত্তর পাশে মহিলাদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে একত্রে ১৫০০ মহিলা নামাজ আদায় করতে পারেন। উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকের গেট দিয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়।

বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব
বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব

জুম্মা: প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে এই মসজিদে উপচে পড়া ভিড় হয়। ঢাকা শহরের আশ পাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি এখানে নামায আদায় করতে আসেন।

ইফতার: মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর প্রথম রোজা থেকেই ইফতারের আয়োজন করে থাকে। ‍পুরো মাস জুড়েই ইফতার পরিবেশন করা হয়। ধনি-গরিব সর্বস্তরের মানুষ মসজিদে এক সাথে বসে ইফতার করে থাকেন। সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই ইফতার আয়োজনের সম্পুর্ন অর্থায়ন করে থাকে।

তারাবি: তারাবির নামাযের সব থেকে বড় জামায়াতও বায়তুল মোকাররম মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর থেকে।

তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যবস্থা: সাধারনত শেষ ১০ রোজায় শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের জামাতের আয়োজনও করা হয়। তাহাজ্জুদের নামাজেও প্রচুর পরিমান মুসল্লি অংশগ্রহণ করে থাকেন।

প্রতি ইদে: পাচটি জামাতে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের নামায পড়ানো হয়। যেখানে লাখো মানুষ কাধে কাধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।

দর্শনিয় : দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকও আসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ দর্শন করর উদ্দেশ্যে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুল নকশা বা স্থাপত্য শৈলির মধ্যে রয়েছে এক ভিন্ন ধরনের নান্দনিকতা। যা প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়কে  আকর্ষন করে।

পরিশেষে: বায়তুল মোকাররম বাঙ্গালি মুসলমানের গর্ব হয়েই থাকবে যুগ যুগ ধরে বা যতদিন বাংলাদেশ নামের দেশটি থাকবে মানচিত্রের বুকে।

আমি এখানে সংক্ষেপে মসজিদের মুল ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি, এটি পাঠ করতে পাঠকদের ধৈর্যের বাধ ভাঙ্গবে না। অপ্রয়োজনিয় কথার সংযোজন থেকে আর্টিকেল মুক্ত রেখেছি।

আরো জানুন:

অনুরোধ: আমি সব সময় চেষ্টা করি ছোটো করে আর্টিকেল লিখার। আমার মতো করে লিখার, মুল তথ্যটি তুলে ধরার।  পাঠকের ধৈর্যের যেন বিচ্যুতি না ঘটে। আর্টিকেল তৈরিতে আমি কিছু বানান পরিবর্তন এবং কিছু শব্দ নিজের মতো করে সংযোজন করে থাকি । যেটার দায়িত্ব পুরোটাই আমার নিজের।

যদি ভালো লাগে তবেই আমার কষ্ট সার্থক। আর্টিকেল নিয়ে কোন তথ্যের ভুল ভ্রান্তি হলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। সকল ধরনের উপদেশ সাদরে গ্রহন করা হবে। এই নাম্বারে 01783989949 সরাসরি ফোন দিতে পারেন-24/7.

ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, এই দোয়ায়…

আসুন দেশকে জানি, দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষের সুখ দুখে পাশে দাড়াই।

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 5

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

Check Also

আজান প্রচলনের ইতিহাস

আজান প্রচলনের ইতিহাস

5 (6) আজান প্রচলনের ইতিহাস : মুসলিম উম্মাহ্ প্রতিদিন ৫ বার আজানের ধ্বনি শুনে মসজিদে …

Translate »