ADS!

Free Domain & Cheapest Hosting!
প্রতারিত না হয়ে বিশ্বস্ত পার্টনারের কাছ থেকে কিনুন ডোমেইন ও হোষ্টিং। BESTWEBHOST আপনাকে দিবে 24/7 কুইক সার্ভিস।   BUY NOW..

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহি

5
(3)

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহি একটি সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম। যেখানে সকল ধর্মের সমন্বয়ে একটি নিজস্ব ধর্ম সৃষ্টির অপকৌশল মাত্র। যা রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যেই মূলত তৈরী। আসুন এই ধর্মের একটু গভিরে প্রবেশ করে জেনে নেই কি ছিলো এই ধর্মের আদর্শ উদ্দেশ্য, সম্রাট আকবর কিসের প্রভাবে বা কাদের প্ররোচনায় এই ধর্ম প্রচলন করার অপকৌশল অবলম্বন করেছিলেন, কারা হয়েছিলেন এই ধর্মের অনুসারী আর সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহি ধর্মের স্থায়িত্ব ছিলো কত দিন?

দীন-ই-ইলাহি কি :
সম্রাট আকবর বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর সমন্বয়ে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৫৮১ খ্রি.) একটি ধর্মের প্রবর্তন করেন, তাই হচ্ছে দীন-ই ইলাহি যার অর্থ-ঈম্বরের আদেশ। যা একটি সর্বেশ্বরবাদী আদর্শ । এই ধর্মে কোনো বিশেষ ঈশ্বরের কথা না বলে সকল ধর্মের মূল নীতিগুলির সমন্বয় ঘটানা হয়েছে। যা সর্বেশ্বরবাদী এক ধর্ম। যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সকল ধর্মের মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান।

এই ধর্মমতের মূলভিত্তি ছিল কোরান, হিন্দুধর্মের বিভিন্ন পুস্তক ও জিশুর বাণী। এ ছাড়াও উপনিষদের একেশ্বরবাদ, হিন্দু দর্শনের জন্মান্তরবাদ এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অহিংস নীতির ওপর ভিত্তি করে আকবর এই ধর্মমতের উদ্ভাবন করেন।

“দীন-ই-ইলাহি ধর্মমতে পুরাহিত, মন্দির, নবি বা কোনো ধর্মগ্রন্থের স্থান নেই। অতীন্দ্রিয় বিশ্বাস ও নৈতিক জীবন দর্শনের ভিত্তিতে কল্পিত এই ধর্মমতে আকবর আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের জন্য এক আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে সম্রাট আকবরের ধর্মমত দীন-ই-ইলাহী ছিল একটি রাজনৈতিক দলিল মাত্র। ধর্মীয় চেতনাবোধের মাধ্যমে মোগল সিংহাসনে রাজনৈতিক আনুগত্য লাভ করে মোগল সাম্রাজ্য কে একটি জাতীয় রাষ্ট্রে পরিণত করেন। দ্বীন-ই-ইলাহী আকবর কে ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক মহান জাতীয় সম্রাটে পরিণত করে।

সম্রাট আকবরের পরিচয়:
শেরশাহের আক্রমণে হুমায়ুন পলায়মান অবস্থায় ছিলেন। তখন অমরকোটের হিন্দু রাজা রণপ্রসাদের গৃহে হুমায়ুন আশ্রয় নেন। অমরকোটে হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের গর্ভে আকবর ১৫ অক্টোবর ১৫৪২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। হুমায়ুন তার পুত্রের জন্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করলেও আকবরের পুঁথিগত শিক্ষা লাভের জন্য কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি বাল্যকালে অস্ত্রচালনা, শিকার, খেলাধুলা এবং অশ্বারোহণে কৃতিত্ব দেখান। ১৫৫১ সালে আকবর কে গজনীর শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এসময় রোকিয়া বেগম এর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৫৫৬ সালে পিতা হুমায়ূনের মৃত্যু হলে ১৩ বছর ৪ মাস বয়সে আকবর মোগল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহন করেন।

কুুড়ি বছর বয়সে রাজস্থানের আজমীরে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশিতির মাজার দর্শন করেন এবং সেখানে অম্বরের রাজা বিহারিমল আকবরের বশ্যতা গ্রহন করেন। এবং স্বীয় কন্যা যোধাবাঈ এর সাথে আকবেরর বিবাহ দেন।

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম

ধর্মনীতি:
সম্রাট আকবর কখনোই ধর্মের প্রতি খুব একটা অনুরক্ত ছিলেন না। তদুপরি মুসলমান হিসেবে যতটুকুই ছিলেন তাও ১৫৭৬ সালে তার ধর্মীয় মতবাদ ও অনুরাগে বিশেষ পরিবর্তন হয়ে যায়। এবং এক সময় ১৫৮২ সালে এক নতুন ধর্মমত ঘোষণা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একই শান্তি এবং প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করা। এই ধর্ম অনুসারে সকল অনুসারীরা আকবরের প্রতি অনুগত থাকবে এবং বিশ্বাস করবে আকবর ঈশ্বরের ইচ্ছায় শাসন করেছেন।

বিভিন্ন ধর্ম হতে গ্রহন করা মুলমন্ত্র: হিন্দুধর্মের জন্মান্তরবাদ, উপনিষদের একেশ্বরবাদ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অহিংস নীতি, পারসিক ধর্মের সূর্য ও অগ্নি উপাসনা, ইসলামের নামাজ, রমজান প্রভৃতি বিভিন্ন আদর্শের সমন্বয়ে আকবরের এই ধর্মমত গড়ে ওঠে।

কেনো বা কিসের প্রভাবে এই ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন তার নেপথ্যের কারন:

১. আকবরের পিতা মাতা যদিও মুসলমান ছিলেন কিন্তু গোড়া ধর্মাবলম্বী ছিলেন না। পিতা হুমায়ুন ছিলেন সুন্নি, মাতা হামিদা বানু বেগম ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত,

২. গৃহশিক্ষকও ছিলেন মরমীবাদে বিশ্বাসী,

৩. আকবর কাবুলে অবস্থানকালে এসেছিলেন সুফীবাদের সংস্পর্শে, সুফিবাদের “ওয়াহদাতুল ওজুদ” মতবাদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা আকবরকে প্রভাবিত করেছিলো সেই প্রথম জীবনেই।

৪. হিন্দু রমনীদের বিয়ের ফলে, আকবর তাদের স্বীয় ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছিলেন, রাজ অন্তঃপুরে হিন্দুদের সামাজিক রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান পালনে ছিলোনা কোনো বাধা-বিঘ্ন,

৫. সে সময় হিন্দু ধর্মান্দোলনের কারনে বিভিন্ন বাড়াবাড়ি জনসাধারণকে ধর্মের ব্যাপারে সন্দিহান করে তুলেছিলো,

৬. শিয়া সুন্নীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-কলহে বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন সম্রাট, এবং বিকল্প ধর্মনীতির ব্যাপারেও চিন্তা করেছিলেন।

৭. কতিপয় অসাধু আলেম নিজেদের সুবিধা ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভ্রান্তিমূলক ফতোয়া দিয়ে আকবরকে উৎসাহিত করেন,

৮. শিয়া আলেম শেখ মুবারক এবং তার দুই পুত্র আবুল ফজল এবং ফৈজির পরামর্শে আকবর ইসলাম থেকে বের হয়ে নতুন এক ধর্ম প্রচলনের সিদ্ধন্ত নেন।

৯. ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে জৈন ধর্মগুরু হিরা বিজয় সুরীর প্রভাবে সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবারে যে কোনো প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ এবং তাদের ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে এ ধর্মের বাস্তবতা স্বীকার করেন। সম্রাট আকবর 1582 সালে জৈন ধর্মের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ক্রমে অহিংস নীতির প্রতি অনুরাগী হন। এজন্য তিনি পশু হত্যা, শিকার প্রভৃতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ও নিজে নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করেন এবং জৈন ধর্মের বাস্তবতা স্বীকার করেন। এছাড়া জরথ্রুস্টবাদের প্রভাবে তিনি সূর্য বা অগ্নি উপাসনা শুরু করেন। আকবরকে সব ধর্মের গ্রন্থ গুলো পাঠ করে শুনানো হয়েছিল এবং তিনি স্বীকার করেন সব ধর্মের মূল কথা এক কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলো ভিন্ন। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং আনুষ্ঠানিকতা দূর করলে ধর্ম সমন্বয় সম্ভব।

১০. আকবর মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্ম অনুসন্ধান করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সকল ধর্মের সারবস্তু এক ও অভিন্ন। তাই সহজাত সত্য অনুসন্ধিৎসু মন তাকে নতুন ধর্মনীতি গ্রহণে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

১১. সর্বোপরী রাজনৈতিক কারণেও সম্রাট আকবর সকল ধর্মমতকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সর্বজনীন ধর্মমত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। আকবর ভারতে হিন্দু মুসলিমের মিলনে এক ধর্মনীতি প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। যেখানে ক্ষমতার আসনে টিকে থাকা তার জন্য সহজতর । সকল ধর্ম ও গোত্রের মানুষকে এক ঐক্যবদ্ধ সূত্রে আবদ্ধ করে একটি সর্বভারতীয় জাতিগঠনের মাধ্যমে সাম্রাজ্য কে শক্তিশালী করাই ছিল আকবরের লক্ষ্য। রাজনৈতিক সংস্থা হিসেবে এটি আকবরের আশা অনেকটা পূরণ করেছিল।

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তনের পূর্বে যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করেন আকবর:

দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের পূর্বে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেন আকবর। ধীরে ধীরে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের শেষ পর্যায় প্রকাশ করেন তার ধর্ম দীন-ই-ইলাহী। কি কি পদক্ষেপ ছিলো আসুন জেনে নেই:

১. ইবাদতখানা নির্মাণ: ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ফতেহপুর সিক্রিতে একটি ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সেখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জ্ঞানী পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ জানান। বিভিন্ন ধর্মের সারমর্ম উপলব্ধি করার জন্য ইবাদত খানায় মুসলিম, হিন্দু, জৈন, খ্রিষ্টান, অগ্নি উপাসক, পারসিক প্রভৃতি সম্প্রদায়কে অভ্যর্থনা জানান। এ সমাবেশে যোগ দেন শেখ আব্দুল নবী, ফাদার মনসা রেট, জেসুইট পাদ্রীগণ, হিন্দু পন্ডিত পুরুষোত্তম, জৈন পন্ডিত হীরা বিজয়সুরী সহ বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরু গণ। এবং সকল ধর্মের পণ্ডিতদের কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন। এভাবে বিভিন্ন ধর্মের মূল বাণী শ্রবণের পর তিনি একটি নতুন ধর্মমত তৈরি করেন।

২. মহজরনামা ঘোষণা: ১৫৭৯ সালে আকবর ফতেপুর সিক্রির প্রধান ইমাম কে অপসারণ করে ধর্মগুরুর অভ্রান্ত সর্বময় কর্তৃত্ব ঘোষণা করেন। ধর্মীয় আইন অনুসারে অনভিজ্ঞ আকবর এ ঘোষণা দ্বারা ওলামাদের অগ্রাহ্য করেন। এ ঘোষণা দাঁড়া তিনি সকল ধর্ম সম্বন্ধীয় ব্যাপারে সর্বোচ্চ বিচারকে পরিণত হলেন মহাজন ঘোষণাপত্র জারি করে আকবর ওলামাদের ধর্মনৈতিক অধিকার খর্ব করেন। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ মহজরনামাকে “অভ্রান্ত কর্তৃত্বের ঘোষণা” বলে অভিহিত করেছেন।

৩. অভ্রান্ত ও সর্বময় কর্তৃত্ব ঘোষনা: ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে শিয়া আকিদার আলেম শেখ মুবারকের নেতৃত্বে কয়েকজন সরকারি আলেম এক দলীলে ঘোষনা করেন, যেহেতু বাদশাহ সকল জ্ঞানের অধিকারী, সেহেতু তিনি মুজতাহিদ অপেক্ষাও মর্যাদা সম্পন্ন এবং জাতি ধর্ম ও প্রজার মঙ্গল সাধনের জন্য কার্যক্ষেত্রে তিনি ধর্মীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এতে আকবরকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেয়া হয়।

৪. ইমামে আদেল’ উপাধি গ্রহন: ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আকবর জাগতিক, পারলৌকিক উভয়বিধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ মর্যাদায় অভিষিক্ত হন এবং ‘ইমামে আদেল’ উপাধি গ্রহণ করেন।

৫. ধর্মীয় গোঁড়ামি দূরীকরনে অপচেষ্টা: ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে জৈন ধর্মগুরু হিরা বিজয় সুরীর প্রভাবে সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবারে যে কোনো প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ এবং তাদের ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে এ ধর্মের বাস্তবতা স্বীকার করেন। সম্রাট আকবর 1582 সালে জৈন ধর্মের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ক্রমে অহিংস নীতির প্রতি অনুরাগী হন। এজন্য তিনি পশু হত্যা, শিকার প্রভৃতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ও নিজে নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করেন এবং জৈন ধর্মের বাস্তবতা স্বীকার করেন। এছাড়া জরথ্রুস্টবাদের প্রভাবে তিনি সূর্য বা অগ্নি উপাসনা শুরু করেন। আকবরকে সব ধর্মের গ্রন্থ গুলো পাঠ করে শুনানো হয়েছিল এবং তিনি স্বীকার করেন সব ধর্মের মূল কথা এক কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলো ভিন্ন। ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং আনুষ্ঠানিকতা দূর করলে ধর্ম সমন্বয় সম্ভব।

৬. আত্নপ্রকাশ বা দ্বীন-ই ইলাহী’ প্রবর্তন: অত:পর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তু নিয়ে ‘দ্বীন-ই ইলাহী’ নামক নতুন ধর্মমত ঘোষনা করেন। এতে ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মের রীতি-নীতি অল্প-বিস্তর সংযোজিত হয়েছিল।

দীন-ই-ইলাহীর রীতিনীতি:

সম্রাট আকবরের ধর্মমত দীন-ই-ইলাহী ধর্মালম্বীদের আদর্শ ও রীতিনীতি ছিল ভিন্ন ধরনের। যা ছিলো তার মনগড়া এক রীতিনীতি।

সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহির মূলমন্ত্র : সম্রাট আকবরের ভ্রান্ত ধর্ম দীন-ই-ইলাহির মূলমন্ত্র ছিল ”লা ইলাহা ইল্লালাহু আকবারু খলিলুল্লাহì ”যারা নুতন ধর্মে দাখিল হত তাদেরকে এরূপ শপথ বাক্য উচ্চারন করতে হতো- ”আমি অমুকের পুত্র অমুক এতদিন বাপ দাদাদের অনুকরনে ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠত ছিলাম, এখন স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পূর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করে ‘দীন-ই-ইলাহি’ গ্রহন করিতেছি এবং এই ধর্মের জন্য জীবন,সম্পদ ও সম্মান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি।”

প্রতিকৃতি প্রদান: বাদশাহ তার অনুগামীদের ধর্মান্তরের কারনে উপহার স্বরূপ তার একটি প্রতিকৃতি প্রদান করতেন। তারা বাদশাহর এই প্রতিকৃতি পরম শ্রদ্ধাভরে নিজ নিজ পাগড়ীতে বসিয়ে রাখত।

সালাম প্রদানে পরিবর্তে:  দ্বীন-ই-ইলাহী অনুসারীদের মধ্যে পরস্পর দেখা হলে সালামের পরিবর্তে একজন বলতো “আল্লাহু আকবার” প্রত্যুত্তরে আরেকজন বলতো “জাল্লেজালালুহু”।

মৃত্যুর পূর্বে ভোজ: এ ধর্মের অনুসারীদের মৃত্যুর পূর্বে ভুজের ব্যবস্থা করতে হতো।

জন্মবার্ষিকী পালন ও প্রীতিভোজের আয়োজন:  দ্বীন-ই-ইলাহী অনুসারীদের প্রত্যেককে জন্মবার্ষিকী পালন করতে হতো এবং স্বধর্মীদের দাওয়াত দিয়ে প্রীতিভোজের আয়োজন করতে হতো।

নিরামিষভোজি হওয়া: এ ধর্মের অনুরাগীরা যতদূর সম্ভব নিরামিষ ভোজন কত।

বাল্য বিবাহ রহিতকরন : বাল্য বিবাহ করত না এবং নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ করত না।

সূর্য পূজা করা: সূর্য পূজা করত। দিনে চারবার সূর্য বন্দনা করত। সকাল-দুপুর-বিকেল রাতে।

রবিবার কে সপ্তাহের শুরু ধরা: খ্রিস্টানদের সপ্তাহের শুরুর দিন রবিবার এর সাথে মিলিয়ে ধর্মাবলম্বীরাও রবিবার কে সপ্তাহের শুরু ধরত।

পশূ নিধন রহিতকরন: পশু হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়।

অহিংসা পালন: অহিংসা পালন করতো এবং নৈতিক জীবন যাপন করত।

ভিক্ষা প্রদানে উদ্বুদ্ধ: এ ধর্মের সভ্যগণ ভিক্ষা প্রদান করবেন কিন্তু ভিক্ষা গ্রহণ করবেন না।

অগ্নিকে পবিত্র জ্ঞান: অগ্নিকে পবিত্র জ্ঞান এবং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতে হত।

ইসলাম অবমাননাকর নীতি প্রবর্তনঃ দ্বীন-ই ইলাহী প্রবর্তনের মাধ্যমে ইসলামের মূলনীতির ওপর চরম আঘাত হানা হয়। দ্বীন-ই ইলাহীর ইসলাম পরিপন্থী রীতি-নীতিসমূহ ছিল- সম্রাটকে সেজদা করা, দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা; গরুর মাংস খাওয়া কমানোর নির্দেশ, নামায, রােযা, হজ্জ, আযান, কুরআন-হাদীস ইত্যাদি পাঠ এবং আরবি ভাষা শিক্ষা নিষিদ্ধ করা। মসজিদগুলােকে আস্তাবলে রূপান্তর করা হয়। হিজরী সনের পরিবর্তে তারিখে আলফী প্রবর্তন করা হয়।

শ্রেনীভেদ: দীন-ই-ইলাহী অনুসারীদের আবার শেনীবিভাগ ছিলো।

শ্রেণীবিভাগ: আকবরের ধর্মমত দীন-ই-ইলাহী অনুসারীদের মধ্যে চারটি শ্রেণীবিভাগ ছিল। জান, মাল, সম্মান ও ধর্ম- এ বিষয়গুলো সম্রাটের নামে উৎসর্গ করা হতো। যারা এই চারটি স্তম্ভ বিসর্জন দিবে তারা প্রথম শ্রেণীর অনুসারী, যারা তিনটি দিবে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর অনুসারী, যারা দুটি দিবে তারা তৃতীয় শ্রেণীর অনুসারী এবং যারা একটি ছাড়তে প্রস্তুত চতুর্থ শ্রেণীর অনুসারী।

দ্বীন-ই-ইলাহির সদস্য সংখ্যা: দ্বীন-ই-ইলাহী সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা ছিল আঠারো। মতান্তরে ২০ বা ২৫ জন। এ ধর্মমতের অনুসারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- শেখ মোবারক, আবুল ফজল, ফৈজী, আজিজ কোকা, বীরবল। অনুসারীদের মধ্যে রাজা বীরবল ছিলেন একমাত্র হিন্দু। যারা সকলেই নিজ নিজ স্থানে ধর্মের ব্যাপারে ছিলেন বিতর্কিত।

দ্বীন-ই-ইলাহির শেষ পরিণতি: সম্রাট আকবর প্রবর্তিত নতুন ধর্মের স্থায়িত্ব ছিল খুবই অল্প সময়। এই ধর্মবিশ্বাস জনগনের সমর্থন লাভ করতে পারেনি। তাই আকবরের মৃত্যুর সাথে সাথে (আকবরের মৃত্যু হয় ১৬০৫ সালে) দ্বীন-ই-ইলাহির বিলুপ্তি ঘটে।

পরিশেষে : আমি আর্টিকেলটি বেশ কিছু দিনের প্রচষ্টোয় নিজের মতো করে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার লিখায় কখনোই কোনো উৎস সংযোজন করিনা, তাই এই আর্টিকেলের কোনো উৎসও সংযোজন করলাম না। যদি কারো কাছে কোনো ব্যাপারে সন্দিহান মনে হয়, তা জানালে উপকৃত হবো।

আরো পড়ুন:

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 3

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

Translate »