এডলফ হিটলার ঘৃনিত চরিত্রের কিছু ভালো দিক

মানুষ মাত্রই খারাপ ভালোর মিশ্রন। ইতিহাসের পাতায় কারো স্থান হয় নন্দিত মহামানব কারো বা নিন্দিত ঘৃনিত মানুষ হিসেবে। এডলফ হিটলার তেমনি ঘৃনিত নিন্দিত হয়েই জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। অর্থাৎ একজন মানুষ সব সময় সাদা আর কালোর মিশ্রনেই হয়ে থাকে।

তেমনি কালোয় ভরা এই মানুষটিকে মানব সভ্যতায় যুগে যুগে তাকে ধিক্কার দিয়েই যাবে। তবুও তার খারাপের বিপরিতে যে কিছু ভালো দিক আছে তা নিয়েই আজকের আর্টিকেল।

ইতিহাস স্বাক্ষি দেয়, দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণই ছিল তার মাত্রাহীন আগ্রাসন ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল নিয়ে ক্ষোভ। তার ক্ষোবের বহিপ্রকাশই দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্ধ।

দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় উহুদি ধর্মাবলম্বিদের চালানো গনহত্যা। হিটলারের নাৎসি বাহিনি কর্তৃক ইহুদিদের ইউরোপ মহাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রায় 11 মিলিয়ন লোককে হত্যা করেছিলো। নাৎসিরা এর নাম দিয়েছিল “ইহুদি প্রশ্নের চরম উপসংহার”। এই গণহত্যা বিভিন্নভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল। সরাসরি হত্যা, অনাহারে হত্যা, অতিরিক্ত কষ্টসাধ্য কাজের বোঝা চাপিয়ে হত্যা, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেনিয়ে হত্যা। হিটলারের এই জঘন্যতম হত্যা পৃথিবির ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুর গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। আর এই গনহত্যার হুকুম এই জঘন্য লোকের দ্বারাই হয়েছিলো।

আসুন এবার জানি, এডলফ হিটলার এর জিবনের দু’একটি ভালো দিকের গল্প :

১। কম বয়সে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করতেন হিটলার। কিন্তু জার্মানির সর্বাধিনায়ক পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ঘোর ধূমপান বিরোধি হয়ে পড়েন। তিনি মনে করতেন সিগারেট পয়সা-ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করে না। জন পরিবহণ ব্যবস্থায় ধূমপান নিষিদ্ধ্ব করে দিয়ে তিনি একটি ধূমপান বিরোধি প্রচারাভিযানও চালান।

২। সাধারণ মানুষের প্রতি যার দয়া মায়ার এত অভাব, লক্ষ লক্ষ ইহুদির সর্বনাশ করতে যার হাত কাপেনি, সেই হিটলারই আবার আশ্চর্য রকমের সংবেদনশিল ছিলেন পশুদের প্রতি। তাদের ওপর কোন রকম বৈজ্ঞানিক পরিক্ষা-নিরিক্ষার ঘোরতর বিরোধি ছিলেন তিনি। আর তাই দেশে ভিভিসেকশন (Vivisection) অর্থাৎ গবেষণার কাজে পশুদের দেহ-ব্যবচ্ছেদকে নিষিদ্ধ করেন নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসার পরেই। মাছ-মাংস তিনি ছুতেন না। হিটলারের ইচ্ছা ছিল যুদ্ধজয়ের পর নিরামিষাশি জিবনযাপনকে জার্মানির জাতিয় নিতি হিসাবে ঘোষণা করবেন।

৩। এডলফ হিটলার এর দুটি প্রিয় কুকুর ছিল, ব্লন্ডি (Blondi) ও বেলা (Bella)। প্রানধিক প্রিয় ব্লন্ডিকে হিটলার আত্মহত্যা করার আগে হত্যা করেন, যাতে তাকে ছাড়া কুকুরটিকে কষ্ট করে বেচে থাকতে না হয়।

৪। পুরোনো ধারার চিত্রশিল্পের ভক্ত: হান্স থমা (Hans Thoma), অ্যাল্ব্রেখট ড্যুরর (Albrect Durer), লুকাস ক্রানাক (Lucas Cranach the Elder), জোহানেস ভারমির (Johannes Vermeer) প্রমুখ প্রবাদ প্রতিম জার্মান চিত্রকরদের অন্ধ ভক্ত ছিলেন হিটলার। তার ইচ্ছা ছিল, এই সমস্ত শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পিদের সব শিল্পকর্ম নিয়ে একটি মিউজিয়াম গঠন করবেন।

৫। হিটলার একজন চিত্রশিল্পি হতে চাইতেন রাজনিতিতে প্রবেশের আগে। চিত্রশিল্প নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য তিনি দুইবার ভিয়েনা শিল্প বিদ্যালয়ে আবেদনও করেন। দুইবারই তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। প্রকৃতপক্ষে হিটলারের ফ্যাসিবাদি ভাবধারায় অনুপ্রানিত হয়ে রাজনিতিতে প্রবেশের অন্যতম কারণ ছিল চিত্রশিল্পি হিসাবে তার অসফলতা। চিত্রশিল্পে আগ্রহ ছাড়াও হিটলারের সিমাহিন আগ্রহ ছিল অপেরা সঙ্গিতে। বিশেষত জার্মান নাট্যপরিচালক ওয়াগনারের (Wagner) অপেরা লোহেনগ্রিন (Lohengrin) ছিল তার অসম্ভব প্রিয়।

৬। হিটলার জার্মানিতে তার শাসনতন্ত্র কায়েম করার পর পরই তিনি সমস্ত আন্তর্জাতিক ধার বাতিল করে দিয়ে জার্মানির নিজস্ব মুদ্রা প্রবর্তন করেন এবং একটি জাতিয় অর্থনৈতিক প্রকল্প তৈরি করেন সাধারণ মানুষের জন্য। সেই প্রকল্পে তিনি বিভিন্ন জনসাধারণ-কল্যাণমূলক কাজ যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নতুন রাস্তা, সেতু, ক্যানাল তৈরি, বন্দর তৈরি, বাড়ি ও সরকারি কার্যালয়ের পুনঃ নির্মাণ ইত্যাদি রূপায়নের চিন্তা করেন। এই প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে বেতন হিসাবে জার্মান গভর্নমেন্ট ‘শ্রম প্রমংসাপত্র’ (Labour Treasury Certificate) প্রদান করেন। এই প্রশংসা পত্রটি ছিল কোন সাধারণ মানুষের সরকারকে দেওয়া শ্রম অথবা দ্রব্যের প্রমান। যখন এই প্রশংসা পত্রের অধিকারিরা অন্যত্র এই প্রশংসাপত্র ব্যবহার করতেন মুদ্রা হিসাবে। এভাবে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করে জার্মান মানুষ তাদের শোচনিয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন এবং অর্থনিতিকে নতুন শিখরে পৌছে দেন।

৭। মাত্র পাঁচ বছরে জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে গরিব দেশ থেকে সবচেয়ে ধনি দেশে পরিণত হয়। বেকারত্ব সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়। মুদ্রাস্ফিতি বন্ধ হয়। হিটলার সুচতুর ভাবে একই সঙ্গে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান বাড়িয়ে জিনিসের দাম স্থিতিশিল রাখেন। এক কথায়, দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অস্ত্র-নির্মান করার আগে পর্যন্ত জার্মানি ছিল সেই সময়ে পৃথিবির অন্যতম সমৃদ্ধশালি দেশ।

৮। হিটলারের আমলেই জার্মানির মানুষ দেখেন ইউরোপের সেই সময়ের সব থেকে বড় নির্মান কাজ গুলির মধ্যে অন্যতম জাতিয় সড়কপথ ব্যবস্থা। এই রাস্তার মাধ্যমেই জার্মানির দূরতম প্রান্তগুলিও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়। একটি সুসংহত সড়ক-পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে সারা দেশ জুড়ে আর এর সবটাই ছিল হিটলারের মস্তিষ্ক প্রসুতি।