বৃহস্পতিবার , সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৪
মহাবির আলেকজান্ডার
মহাবির আলেকজান্ডারের তিনটে ইচ্ছে..

মহাবির আলেকজান্ডার এর তিনটি ইচ্ছে

মহাবির আলেকজান্ডার। ইতিহাসের এক কিংবদন্তি। সমগ্র বিশ্ব যাকে আজো এক নামে চেনে। এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপুর্ব 356 অব্দে গ্রিসের অতি ক্ষুদ্র মেসিডোনিয়ার রাজ পরিবারে যার জন্ম। জাতিতে আর্য-গ্রিক। পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা । বাল্যকালে  প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল ছিলেন তার গৃহশিক্ষক । আলেকজান্ডার দর্শন শাস্ত্র অপেক্ষা অস্ত্রবিদ্যায় ছিলেন অধিকতর আগ্রহি।

সেকালের বিখ্যাত বির হারকিউলিস, কাইরাস প্রমুখ বির যোদ্ধাদের বিরত্বের কাহিনি শুনতে তিনি ছিলেন অত্যধিক আগ্রহি। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৫ অব্দে পিতা ফিলিপের মৃত্যু হলে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি মেসিডনের সিংহাসনে আরোহন করেন। বয়সের স্বল্পতার সাথে বিশাল সামরিক প্রতিষ্ঠা শিগ্রই উচ্চাভিলাষি এবং দিগ্বিজয়ির ভুমিকায় অবতির্ণ হন মহাবির আলেকজান্ডার।

মহাবির আলেকজান্ডার
মহাবির আলেকজান্ডার

সম্রাট আলেকজান্ডার সুদুর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাবেও পৌচেছেন দিগ্বিজয়ের নেশায়। সুদর্শন তরুণ সম্রাটের চোখে সারা পৃথিবি জয়ের স্বপ্ন। পৃথিবির সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালি সেনাবাহিনির অধিকারি তিনি। বিখ্যাত ইরান সম্রাট দারায়ুস থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারতের পরাক্রমশালি রাজা পুরু পর্যন্ত কেউ তার সামনে দাড়াতে পারে নাই। এখন তার সামনে মাত্র একটা বাধা, বিপাশা নদির ওপারের গঙ্গারিডই রাজ্য।

ভারতের মুল ভুখণ্ড। এটুকু করতলগত হলেই সমগ্র ভারত তার দখল হয়ে গেল। যে স্বপ্ন নিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রিক রাষ্ট্র মেসিডোনিয়া থেকে, তা পরিপূর্ণতা পাবে। এক পর্যায়ে সৈন্যদের অনাগ্রহের ফলে পাঞ্জাবের বিপাশা নদির অপর পাড়েই গ্রিক বাহিনীর বিজয় রথ থেমে যায়। আলেকজান্ডার গ্রিক বাহিনিকে মেসিডোনিয়ার দিকে ফিরতি যাত্রার নির্দেশ দেন। ভারতবর্ষ জয়ের স্বপ্ন তার থেকেই যায়।

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালের জুন মাসের ১১/১২ তারিখে ব্যাবিলনে মৃত্যুবরন করেন মহাবির আলেকজান্ডার । মাত্র ৩২ বছর বয়সে ।

মৃত্যুশয্যায় মহাবিরর গ্রিকসম্রাট  আলেকজান্ডার তার সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর আমার তিনটে ইচ্ছা তোমরা পূরণ করো :

  1. আমার চিকিৎসকেরাই শুধু আমার কফিন বহন করবে।
  2. “যে পথ দিয়ে আমার কফিন গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, আমার কোষাগারে সংরক্ষিত তহবিল থেকে সেই পথে সোনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ছড়িয়ে দিও।”
  3. “যখন কফিন বহন করবে আমার দুই হাত কফিনের বাইরে ঝুলিয়ে রেখো।”

মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত সকলে মহাবিরের এই অদ্ভুত অভিপ্রায়ে বিস্মিত হন। তার বিচিত্র অভিপ্রায়ের কারন জানতে চাইলে দির্ঘশ্বাস ফেলে আলেকজান্ডার বললেন, এই দুনিয়ার সামনে আমি তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই :

  1. আমার চিকিৎসকদের কফিন বহন করতে বলার কারণ, যাতে মানুষ অনুধাবন করতে পারে চিকিৎসকেরা আসলে কোনো মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারে না। তারা ক্ষমতাহিন, মৃত্যুর থাবা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে অক্ষম।
  2. ‘গোরস্থানের পথে সোনা-দানা ছড়িয়ে রাখতে বলার হেতু, মানুষকে এটা বোঝাতে যে, ঐ সোনা-দানার এক কণাও আমার সঙ্গে যাবে না। আমি এগুলো অর্জনের জন্য সারা জিবন ব্যয় করেছি। মৃত্যুর সময় নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ বুঝবে, ধন-সম্পদের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয় মাত্র।
  3. কফিনের বাইরে হাত ঝুলিয়ে রাখতে বলার কারন, মানুষকে এটা জানাতে যে, খালি হাতে আমি এই পৃথিবিতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবি থেকে বিদায় নিচ্ছি।

শিক্ষা : সময় শেষ হলে প্রত্যেকেই তার নিজস্ব মানবিক ধর্মে চলে আসে। সকলেই তখন তার দোষ ত্রুটি অনুধাবন করতে পারে। যুগে যুগে ইতিহাস তা-ই বলে বেড়ায় ।

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

About মোহাম্মদ শওকত আকবার

Showkatbd.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ব্লগার। চলমান ব্লগিং ল্যান্ডস্কেপকে আমি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমি শুধু একটি ব্লগ নিয়েই নয়; একটি অপরিহার্য বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছি। "Many more in one” শ্লোগানে যার পথচলা। যে ব্লগ হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বাংলা ভাষা ভাষিসহ অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতি মুহূর্তের এক অপরিহার্য প্লাটফর্ম । তাদের অনলাইন সেবা প্রদানেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ”সম্পূর্ন একটি সেবামূলক সাইট”

Check Also

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ : মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যে সব জায়গায় সফর করেছিল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!