বৃহস্পতিবার , সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৪
একটি সহনশিলতার উদাহরন

একটি সহনশিলতার উদাহরন

একটি সহনশিলতার উদাহরন : দির্ঘ ২৭ বছর জেল খাটার সময়, নেলসন ম্যান্ডেলা সূর্য কি জিনিস চোখে দেখেননি । তারপর তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর একদিন তার কয়েকজন সহকর্মিকে বললেন : চলো আজ শহর দেখি । চার দেয়ালের ভিতর বন্দি থেকে, জিবনের দির্ঘ সময় কেটে গেলো । এখন নিজের শহরটি কেমন হয়েছে, নিজের চোখে না দেখলেই নয় ।

সহকর্মিদের সাথে নিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা শহরের অলিতে গলিতে হাটলেন । তার খুব ক্ষিদে পেলো । ম্যান্ডেলা বললেন :  চলো, সামনের কোনো রেস্তোরা থেকে কিছু খেয়ে নিতে চাই । সহকর্মীরা তো অবাক ।

বুঝতে পেরে ম্যান্ডেলা বললেন, অবাক হওয়ার কিছুই নেই, খিদে পেয়েছে, খাবো । জেলখানার ওই পচা, বিভৎস খাবার খেয়েও যেহেতু মরিনি, তাই এতো সহজে মরবো না ।

সবাই মিলে টেবিলে খেতে বসলেন । কিছুদুরে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন, বেশ বয়ষ্ক । হোটেলের ওয়েটারকে ডেকে ম্যান্ডেলা বললেন, একটা চেয়ার এনে আমার পাশে রাখো এবং ওনাকে বলো, আমার টেবিলে বসে খেতে ।

ভদ্রলোক ম্যান্ডেলার কাছে আসলেন । তার পাশের চেয়ারে বসলেন । খেতে খেতে সবাই গল্প করছেন । কিন্তু পাশে বসা ভদ্রলোকটি কিছুই খেতে পারছেন না । তার হাত কাপছে । চামচ থেকে খাবার প্লেটে পড়ে যাচ্ছে । ম্যান্ডেলার সহকর্মিদের একজন বললেন, আপনি মনে হয় অসুস্থ । ভদ্রলোক একদম চুপচাপ । কিছুই বললেন না ।

ম্যান্ডেলা নিজ হাতে তাকে খাবার খাইয়ে দিলেন এবং ওয়েটারকে ডেকে বললেন, তার খাবার বিলটা আমরা পরিশোধ করবো ।

খাবার শেষে সেই বয়স্ক ভদ্রলোক বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন । কিন্তু সবাই অবাক চোখে দেখলো, লোকটি ভালো করে দাড়াতে বা হাটতে পারছেন না । শরিরের কাপুনি ক্রমবর্ধমান ।

ম্যান্ডেলা নিজ হাতে ওনাকে উঠে দাড়াতে সাহায্য করলেন এবং সহকর্মিদের একজনকে বললেন , ওনাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে ।

সহকর্মিদের মধ্যে আরেকজন বললেন, এতো অসুস্থ শরির নিয়ে উনি বাড়ি পৌছাতে পারবেন তো !

এই সময় ম্যান্ডেলা বলতে শুরু করলেন, আসলে উনি অসুস্থ না । আমি জেলের যে সেলে বন্দি ছিলাম উনি ছিলেন সেই সেলের গার্ড । প্রচন্ড মার খেয়ে আমার খুব তৃষ্ণা পেতো । পিপাসায় কাতর আমি যতবার জল জল বলে আর্তনাদ করতাম , ততবার উনি আমার সমস্ত শরিরে প্রসাব করে দিতেন । আজ আমি দেশের প্রেসিডেন্ট ।

দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালি মানুষ হবার পর, আমি তাকে আমার টেবিলে একসাথে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেছি ! সেই সব দিনগুলোর কথা মনে করে উনি খুব ভয় পেয়েছেন ।

কিন্তু ক্ষমতাবান হয়েই ক্ষমতাহিন মানুষকে শাস্তি দেয়া তো আমার আদর্শের পরিপন্থি । এটা আমার জিবনের এথিকসের অংশ নয় । তাই শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে উনি ভালোবাসা পেয়েছেন । আমার মুখে আর শরিরে উনি প্রসাব করেছেন । কিন্ত ওনার মুখে আমি খাবার তুলে দিয়েছি । আমি আপনাদের যেমন প্রেসিডেন্ট, তেমনি ওনারও প্রেসিডেন্ট ।

প্রতিটি নাগরিককে সম্মান জানানো আমার নৈতিক দায়িত্ব । শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়ার মানসিকতা’ই একটি তৈরি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে পারে ।

আর সহনশিলতার মানসিকতা একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রকে নতুন করে তৈরি করতে পারে । যার প্রমান বহন করে এই- একটি সহনশিলতার উদাহরন।

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

Hi, Flat owners,

Looking to rent out your Flat or Apartment? Reach a wider audience by posting your rental ad at Showkatbd Trading. Find the perfect tenant for your flat. Post your Ads >>

Check Also

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার! যুগ যুগ একই ছাদের নিচে থেকেও, অনেক সময় একজন অন্যজনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!