বঙ্গভুমি আন্দোলন ও এর নেপথ্যে

5
(1)

বঙ্গভুমি আন্দোলন : বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পরবঙ্গভূমি আন্দোলননামে একটি আন্দোলন হয়েছিল ? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কালিদাস বৈদ্য চিত্তরঞ্জন সুতার। তাদের স্বাধিন বঙ্গভূমি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু বাংলা মুসলমান বাংলা নামে দুই টুকরা করে ফেলা।

এর জন্য তিনি মূলত ভারতে যাওয়া শরণার্থী যুবকদের নিয়ে বঙ্গসেনা নামে একটি ব্যক্তিগত বাহিনি গড়ে তোলেন। এই বাহিনি মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গে মিছিলমিটিং করত।এ মনকি বেনাপোল সিমান্তের ওপারে ভারতের হরিদাসপুরে এসেও হৈচৈ করত।

কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ১৯৭০এর নির্বাচনের আগে চিত্তরঞ্জন সুতার, ডা. কালিদাস বৈদ্য, মলয় কুমার ভৌমিকসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে একটি হিন্দু সম্মেলন ডেকে মূলত তফসিলি হিন্দুদের নিয়ে জাতিয় গণমুক্তি দল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শুধু হিন্দুদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা অদৌ সঙ্গত হবে কিনা তা নিয়ে সম্মেলনে তুমুল বিতর্ক হয়। বিশিষ্ট রাজনিতিবিদ বিরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপ্লবি অতিশ রায়, অ্যাডভোকেট সুধির হাজরা প্রমুখ হিন্দু দল গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

১৯৭০এর নির্বাচনে জাতিয় গণমুক্তি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে প্রার্থী দিয়ে একটাতেও জিততে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃশ্যত এই দলের তেমনকোনো ভূমিকা ছিল না। কালিদাস বৈদ্যবাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিবনামেএকটি বইও লিখে ফেলেছিলেন। কালীদাস বৈদ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। একই সঙ্গে তিনি ঘৃণা করতেন ইসলাম ধর্মকে এবং এই ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের।

তিনি তার বইয়ে কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তা হিটলারের প্রচারমন্ত্রি গোয়েবলসকেও হার মানায়।কোলকাতার দৈনিক আজকাল ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমিকস্বাধীন বঙ্গভূমিপ্রতিষ্ঠার ভারতীয় চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করে।

ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক ধারণালাভের জন্যে এই রিপোর্টই যথেষ্ট।স্বাধিন বঙ্গভূমিশির্ষক রঞ্জিত শূরএর লেখা রিপোর্টটি এইঃ “… বাংলাদেশের দুটুকরো করে হিন্দুদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য জোরতৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ২০,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়েস্বাধীনবঙ্গভূমিগঠনের উদ্যোগ আয়োজন চলছে অনেকদিন ধরে। এতদিন ব্যাপারটা সামান্য কিছুলোকের উদ্ভট চিন্তা বা প্রলাপ বলেই মনে হত। কিন্তু সম্প্রতি দেশিবিদেশি নানা শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে ব্যাপারটা বেশ দানা বেধে উঠেছে।

ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে স্বাধিন বঙ্গভূমিসরকার। রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত। রাজধানী সামন্তনগর (মুক্তি ভবন) সবুজ গৈরিক রঙের মাঝে সূর্যের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে জাতীয় পতাকা। জাতীয় সঙ্গীতঃ ধনধান্যে পুষ্পে ধরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। সিমানাঃ উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের ছয়টি জেলাঃ খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং পটুয়াখালী। এই ছয়টি জেলা নিয়েই ২৫মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয়েছে তথাকথিতস্বাধীন বঙ্গভূমিরাষ্ট্র।

স্বাধিন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগই চলছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গ থেকে। নেপথ্য নায়করা সবাই জানেন এই রাজ্যেই বাংলাদেশ সিমান্ত বরাবর বিভিন্ন জেলা২৪ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায়চলছে ব্যাপক তৎপরতা। অভিযোগ, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত দুই বাংলাদেশি নেতা কাদের (বাঘা) সিদ্দিকি এবং চিত্তরঞ্জন ছুতোর মদত দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রবক্তাদের যুক্তি বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জিবন সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষনার পর দেশের হিন্দুরা পরাধিন জিবন যাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রবঙ্গভূমি।

বঙ্গভুমি আন্দোলন এর আনুষ্ঠানিক সংগঠক নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এই সংগঠনটির জন্ম হয়। জন্ম উপলক্ষে ১৫৯ গরফা মেইন রোডের সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন একজন আইএএস অফিসার অমিতাভ ঘোষ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ কালিদাস বৈদ্য (এমবিবিএস ডাক্তার), সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নিহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রি) এবং শরৎ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রি)

অন্য সূত্রের খবর চিত্তরঞ্জন ছুতোরও সভায় হাজির ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোল পার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যেহোমল্যাণ্ডদাবি করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভাসমাবেশ হত। এর মধ্যেই নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘে ভাঙন ধরে। ১৯৭৯ সালে হয় দুটুকরো। ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বাধিন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ গরফা মেইন রোড। সুব্রত চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধিন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ ৮০ ধনদেবী মান্না রোড, নারকেল ডাঙ্গা।

এদের থেকে বেরিয়ে আর একটি অংশ তৈরী করে বঙ্গদেশ মুক্তিপরিষদ। ঠিকানা মছলন্দপুর। আরও একটি অংশ তৈরি করে সংখ্যালঘু কল্যান পরিষদ। চলে চিত্ত ছুতোরের ভবানি পুরের বাড়ি থেকে। পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপান উতোরের মধ্যেই ঢিমেতালে চলছিলবঙ্গভূমি পক্ষে প্রচার। কিন্তু ১৯৮২ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয়সৈন্য বাহিনীবঙ্গসেনা। সৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য। সুব্রত চ্যাটার্জীর গ্রুপ ঘোষণা না মানলেও বঙ্গভূমি দখলের জন্য বছরেই তৈরি করে অ্যাকশন ফোরামবাংলা লিবারেশন অর্গানাইজেশন (বিএলও) আরও পরে বঙ্গদেশমুক্তি পরিষদ তৈরী করেসৈন্য বাহিনীলিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি) নেতারামেশ্বর পাশোয়ান একজন বিহারী, থাকেন গরফার রামলাল বাজারে।

এরপর বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝেই বঙ্গভূমি দখলের ডাক দেয়। সিমান্ত অভিযান করে। কিন্তু কখনই ব্যাপারটা এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।৮৮ এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধিরে ধিরে পাল্টাতে শুরু করে। বছর ২২ জুলাইবঙ্গসেনাএকটি সম্মেলন করে। এরপরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচী। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বরবঙ্গভূমিদখলের জন্য বনগাঁ সীমান্ত অভিযানে /১০হাজার লোক হয়। ২২২৩ জানুয়ারী বনগাঁ থেকে বঙ্গসেনা মহড়া হয়। ২৪ মার্চ ২৫ মার্চ হয় আবার বঙ্গভূমি অভিযান। এপ্রিল রাজীব গান্ধীর কলকাতা আগমন উপলক্ষে সিধুকান ডহরে বিএলও এক জমায়েতের ডাক দেয়। প্রত্যেকটা কর্মসূচীতে ভাল লোক জড়ো হয়। বাংলাদেশে গেল গেল রব উঠে।

এপারের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করে খবর প্রচার করে। দেশেবিদেশেবঙ্গভূমি দাবি এবং দাবিদার নিয়েকমবেশী হৈচৈ শুরু হয়। আবার ২২ জুলাই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে বঙ্গভূমি দখলের জন্য। কালিদাস বৈদ্যের দাবি দিন এক লক্ষ লোক জমায়েত হবে। স্বাধিন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের আসল পরিচয় কি? কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? কে এই রাষ্ট্রপতিপার্থ সামন্ত? কি ভূমিকা নিচ্ছেন ভারত সরকার? এসব তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান চালাই তাদের কর্মস্থলগুলিতে। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলি ডাঃ কালিদাস বৈদ্য, সুব্রত চ্যাটার্জি, রামেশ্বর পাশোয়ার, কে পি বিশ্বাস, রাখাল মণ্ডল প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে।অনুসন্ধানের সময় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে চিত্ত ছুতোরের নাম। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি কিন্তু কিছুতেই দেখা করতে বা কথা বলতে রাজী হননি। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে, ‘স্বাধীনহিন্দুরাষ্ট্র তৈরীর চেষ্টা আজকের নয়। পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লু প্রিন্ট।

বঙ্গভূমি বঙ্গসেনাপুস্তিকায় ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বিকার করেছেন যে, ১৯৫২তে তারা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যান এবংসংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্ম তৎপরতাচালান।গোপনে স্বাধীনতা তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাওপ্রচার করেন। তিন যুবক হলেন কালিদাস বৈদ্য, চিত্তরঞ্জন ছুতোর এবং নীরদ মজুমদার (মৃত)বাংলাদেশে বেশ কিছু কাগজে লেখা হয়েছেবঙ্গভূমি আন্দোলন ভারতেরই তৈরী ৮৮ সালের জুলাই থেকেই বঙ্গভূমি আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাধতে শুরু করে। এটা কি নেহাৎই কাকতালীয়? ১৯৮২ সালে যখনস্বাধীন বঙ্গভূমি সরকারঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কাগজগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূলসুর ছিল, ইন্দিরার মদতেই এসব হচ্ছে। সাম্প্রতিকবঙ্গভূমিআন্দোলনের পেছনে নাকি ভারত সরকারের হাত আছে।

বঙ্গভুমি আন্দোলন এর প্রথম মূলহোতা ডাঃ কালিদাস বৈদ্য এবং রহস্যময় চরিত্র চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনেও ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুত ভারতীয় এজেন্ট হিসেবেই এই দুজন এবং নীরদ মজুমদার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন। চিত্তবাবু ওখানে রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য।

সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন। ডাঃ বৈদ্য এতটা পারেননি। পরবর্তীকালে দুজনের মধ্যে বিরোধও হয়। ডাঃ বৈদ্যভারত সরকারের সমর্থন হারান। কিন্তু মুজিব সরকারের ওপর প্রভাব খাটাবার জন্য চিত্ত ছুতারকে ভারত সরকার চিরকালই ব্যবহার করেছে। এখনও ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। অনেকেই বলে, তার সোভিয়েত কানেকশন নাকি প্রবল।

চিত্তবাবু ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোডের বিশাল বাড়িতে সপরিবারে অত্যন্ত বিলাসবহুল জিবনযাপন করেন। কোথা থেকে আসে টাকা? ভারত সরকার কেন তাকে জামাই আদরে পুষছেন? তার বসত বাড়িটাও দুর্ভেদ্যও। পাহারা দেন বেশ কিছু শক্ত সমর্থ যুবক। যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করত। বনগাঁ লাইনেবঙ্গভূমিসমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার যে, বাড়িটাইবঙ্গসেনা ঘাঁটি। ভারত সরকারের মদদের আরও প্রমাণ, রাজীব গান্ধীর বিবৃতি। তিনি একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে অনুপ্রবেশ। আকাশবাণী থেকেও একাধিকবার প্রচার হয়েছে। যেমন, ১৭ জানুয়ারীবঙ্গভূমিপন্থিরা বাংলাদেশ মিশন অভিযান করলে খবর আকাশবাণী প্রচার করে। ১৮ জানুয়ারী রাজীব গান্ধী অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। এছাড়াও বলা যায়, এতদিন ধরে বঙ্গভূমি জিগির চলছে, বারে বারে শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে লোক নিয়ে গিয়ে সীমান্তে গণ্ডগোল ছড়ানো হচ্ছে তীব্র সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হচ্ছে, ‘সৈন্যবাহিনীঘোষণা করছে, প্রতিবেশী দেশের এলাকা নিয়ে পাল্টা সরকার ঘোষিত হয়েছেতবুও পুলিশ তাদের কিছু বলে না কেন?

সীমান্তে সমাবেশ বা ওপারে ঢোকার চেষ্টা হলে পুলিশ তুলে নিয়ে কয়েকশগজ দূরে ছেড়ে দেয়। নেতাদের গ্রেফতারও করা হয় না। ভারত সরকারের মদদ না থাকলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ না থাকলে, এটা কি সম্ভব হত? ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ডাঃ বৈদ্যও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “মদদ নয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলতে পারেন। তবে মদদ দিতেই হবে। আমরা জমি প্রস্তুত করছি তিনি বলেন, “আমি ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কিভাবে রাখছি, কার মাধ্যমে রাখছি বলব না। আমার বক্তব্য ক্রমাগতই তাদের বোঝাবার চেষ্টাকরছি। সত্যিই যদি যথেষ্ট লোকজন জড় করতে পারি, তবে ভারত সরকারকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেই হবে।

আমার একটা সরকার আছে। সৈন্যবাহিনী আছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনীবঙ্গসেনানামেই ঢুকবে বাংলাদেশে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করছি কিভাবে? বঙ্গসেনা, বিএলও, বিএলটি সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি সেটা এরকমঃবঙ্গভূমিপন্থিরা চান বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক অত্যাচার চালাক। যাতে তারা দলে দলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে। শরণার্থীদের বোঝা বইতে হবে ভারত সরকারকে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে কিছু অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আরও একটা ইচ্ছা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক, ব্যাপক হিন্দু নিধন হোক, যাতে এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সেন্টিমেন্টকে খুশী করার জন্য ভারত সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। বঙ্গভূমি ফেরিওয়ালাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ ভারত সরকারকে বেছে নিতে হবে দুটোর একটা। তারা দেড় কোটি হিন্দু শরণার্থীর দায়িত্ব নেবেন, নাকিস্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র’ ‘বঙ্গভূমিতৈরী করে দেবেন, যে বঙ্গভূমি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিকিমের মত ভারতের অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হবে?

তথ্যসূত্র :

1. কালীদাস বৈদ্যের বই এবং আমাদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে, দৈনিক ইনকিলাব, এপ্রিল, ২০১৭ঈসায়ী

2. Hindu republic ‘born’ in Bangladesh, THE TIMES OF INDIA, Feb 4, 2003

3.স্বাধীন বঙ্গভূমি, (কোলকাতার) দৈনিক আজকাল, ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ২৪শে এপ্রিল(৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট)

4. আবুল আসাদ / একশবছরের রাজনীতি [ বাংলাদেশ কোঅপারেটিভ বুক সোসাইটিমে, ২০১৪

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 1

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

About মুর্খের গলাবাজি

মুর্খের গলাবাজি
মুর্খের গলাবাজি আর ছাইভস্ম সমান জিনিস! যাহা কখনোই কোনো কর্মে প্রয়োজন পরেনা। যাহা বেকারই যত্রতত্র পরিয়া থাকে।

Check Also

প্রার্থনা

প্রার্থনা..

5 (2) প্রার্থনা.. হে আল্লাহ তোমার কাছে হাত তুলে ক্ষমা চাই। ক্ষমা করো। তুমি রহমান, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »