বুধবার , সেপ্টেম্বর ১৮ ২০২৪
উমর এর খেলাফতকাল
উমর এর খেলাফতকাল

উমর এর খেলাফতকাল

হযরত উমর এর খেলাফতকাল 634 থেকে 644

পরিচিতি : হযরত উমর (রা.) এর পুরো নাম উমর ইবনুল খাত্তাব। ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মাতা হানতামা বিনতে হিশাম। মৃত্যু ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ।

তিনি অন্য দশজন কুরাইশ বালকের মতোই শৈশবে ইটের রাখালী করে বড় হয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল (সা.) এর অন্যতম প্রধান সহকারী হিসেবে পরিনত হন। তিনি ছিলেন রাসূল (সঃ) এর শ্বশুর। উমর (রাঃ) এর মেয়ে হাফসা (রাঃ) ছিলেন রাসূল (সঃ) এর স্ত্রী।

শিক্ষা ও অন্যান্য : তৎকালীন সমগ্র আরবে গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকের মধ্যে উমর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন একাধারে কুস্তিগীর, মল্লযোদ্ধা এবং বক্তা হিসেবে ছিলেন খ্যাত। 

ইসলাম গ্রহনের পরের অবদান :

ইসলাম ধর্ম গ্রহনের পরে উমর নিয়েছেন অসংখ্য পদক্ষেপ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য :

  • তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ মুসলমানদের প্রথম প্রকাশ্যে কাবায় নামায আদায় করার সাহস জোগায়।
  • নামাযের জন্য যে আযানের ব্যবস্থার প্রচলন হয়, তা নবীজির জীবদ্দশায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) এর স্বপ্নের ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হয়েছিলো।
  • কোরান সংকলন : হযরত আবু বকর (রা.) হযরত উমর (রা.) এর পরামর্শেই প্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এই লক্ষ্যে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন।

খেলাফতে অধিষ্ঠিত : হযরত আবু বকর (রা.) তার ইন্তেকালের সময় হযরত উমর (রা.) পরবর্তী খলীফা নিযুক্তির জন্য মুসলিম জনসাধারণের কাছে সুপারিশ করে যান এবং এই সুপারিশের ভিত্তিতেই হযরত উমর (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হিসেবে নির্বাচিত হন। 

রাজ্য শাসন : উমর এর শাসন আমলেই খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। তার শাসন আমলেই জেরুজালেম মুসলমানদের হস্তগত হয়। তিনি পূর্বের খ্রিষ্টান রীতি বদলে ইহুদিদের বসবাস ও উপসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি ইসলামী সাম্রাজ্যকে পূর্বে পারস্য থেকে পশ্চিমে বর্তমান তিউনিসিয়া, দক্ষিনে ইয়েমেন থেকে উত্তরে ককেশাস পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

খেলাফতে অধিষ্টিত হবার পরের অবদান :

ইসলামী সাম্রাজ্য পরিচালনায় উমরের রয়েছে বিশাল অবদান। যার মধ্যে :

  • মুসলিম খিলাফতের সচিবালয়, বাইতুল মাল (কোষাগার), সেনানিবাস, প্রাদেশিক শাসন ও বিচার ব্যবস্থা উমর (রা.) প্রথম প্রবর্তন করেন। এছাড়া মুসলিম মুদ্রা ব্যবস্থা এবংহিজরী ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন তার হাত ধরেই সম্পন্ন হয়।
  • ৬৩৭ ঈসায়ীতে হযরত উমর (রা.) জেরুসালেম সফর করেন এবং রোমানদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত অসংখ্য নবীর স্মৃতিধন্য বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসাকে পুননির্মাণ করেন।
  • উমর এর খেলাফতকাল মুসলিম শাসনের বিস্তৃতির কাল। তার শাসনকালেই তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি; পারসিক সাসানীয় সাম্রাজ্য এবং রোমান বাইজান্টানীয় সাম্রাজ্যকে মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে তাদের শাসনাধীন এশীয় আফ্রিকান অঞ্চলসমূহে মুসলিম শাসনের বিস্তার করে।

চরিত্র : উমর ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ন বাদশা। একাধারে ছিলেন ইসলামী আইনের একজন আইনজ্ঞ। তার এই ন্যায় পরায়নতার কারনেই রাসূল (সা.) তাকে আলফারুক (সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী) নামে ভূষিত করেন। তার ক্ষেত্রেই সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনিন (أمير المؤمنين- মুমিনদের নেতা/বিশ্বাসীদের নেতা) সন্মানসূচক উপাধিটি ব্যবহৃত হয়েছে।

ইসলাম গ্রহনের পূর্বে :

1. হযরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইসলামে প্রচন্ড বিরোধী ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

2. হযরত উমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার ভাই হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব (রা.), বোন হযরত ফাতেমা ইবনে খাত্তাব (রা.) এবং ভগ্নিপতি হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) তার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। 

3. রাসূল (সা.) কে হত্যা করতে গিয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং রাসূল (সা.) এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। 

শাহাদাত বরন : ঈসায়ী ৬৪৪ সালের ৩রা নভেম্বর, ২৩ হিজরীর ২৬শে জিলহজ্জ্ব মূগীরা ইবেনে শুবার ইরানী কৃতদাস আবুলুলর বিষাক্ত ছুরির আঘাতে (৩দিন যন্ত্রনায় কাটার পর) মুসলিম বিশ্বকে শোক সাগরে নিমজ্জিত করে এই দুনিয়ার জিবনে পরিসমাপ্তি লাভ করেন। হযরত উমর (রা.) প্রথম মুসলিম শাসক যিনি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেন।

উমর এর খেলাফতাকাল রাশেদিন খেলাফতের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী খিলাফত। তিনি সুদীর্ঘ ১০ বছর ছয় মাস চারদিন খেলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন আর এই সমেয়ই মুসলিম সাম্রাজ্যকে পৃথিবীর অর্ধেক জুড়ে করেছিলেন বিস্তৃত।

পরের পর্ব :

  • হযরত উসমানের খেলাফতকাল

পূর্বের পর্ব :

প্রথম পর্ব :

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

About মোহাম্মদ শওকত আকবার

Showkatbd.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ব্লগার। চলমান ব্লগিং ল্যান্ডস্কেপকে আমি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমি শুধু একটি ব্লগ নিয়েই নয়; একটি অপরিহার্য বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছি। "Many more in one” শ্লোগানে যার পথচলা। যে ব্লগ হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বাংলা ভাষা ভাষিসহ অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতি মুহূর্তের এক অপরিহার্য প্লাটফর্ম । তাদের অনলাইন সেবা প্রদানেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ”সম্পূর্ন একটি সেবামূলক সাইট”

Check Also

সালামের প্রচলন যেভাবে

সালামের প্রচলন যেভাবে

এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানানোর ইসলামী রীতি হচ্ছে السلام عليكم ’আসাসালামু আলাইকুম’ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!