চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা

চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন

5
(4)

চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন : Cheque Book/ চেক বই হল, ছোট এক ধরনের বই বা একটি নথি। যা একমাত্র ব্যাংক বা অর্থ প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি ব্যাংক বা অর্থপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তার বেনিফিসিয়ারি বা একাউন্ট হোল্ডারের ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ লেনদেনের নির্দেশ দেয় । একাউন্টধারী ব্যাংক থেকে নগদ বা অন্যকে অর্থপ্রদানে এই বই ব্যবহার করতে পারে।

যেহেতু এই বই দিয়ে সকল প্রকার ব্যাকিং লেনদেন করা হয়। তাই এই চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। তাই আসুন জানি চেক বইয়ের খুটিনাটি:

চেক বই কি : Cheque Book/ চেক বই হল, ছোট এক ধরনের বই বা কয়েকটি পাতার এক সংকলন। যা দিয়ে একজন ব্যাংক একাউন্টধারী সহজেই ব্যাংকে সঞ্চিত তার অর্থ লেনদেন করতে পারে। এটি ব্যাংকিং লেনদেনের একটি সিষ্টেম।

কিভাবে চেক বই সংগ্রহ করতে হয় : ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একাউন্ট ওপেন করার কিছুদিনের মধ্যেই উক্ত ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারের নামে একটি নতুন চেক বই প্রদান করে থাকে।

চেক বইটি বা চেক বইয়ের ভেতরের রিকোজিশন স্লিপটি হারিয়ে ফেলেছেন, সেক্ষেত্রে সহজেই নিচের ফরমটি পুরন করে একটি রিকোজিশন লেটার তৈরি করে ফেলুন। যা ১০০% নিরাপদ।

পারসোনাল একাউন্টের জন্য  :

Make Letter

বিজনেস একাউন্টের জন্য :

Make Letter

একটি চেক বইয়ে পাতার সংখ্যা : একটি চেক বই কিছু চেক পাতার সংগ্রহ। এতে 10 বা 20 বা এমনকি 50টি চেক থাকতে পারে। এগুলি পছন্দসই ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন বা অন্যকে অর্থ প্রদানে ব্যবহার করতে সহায়তা করে থাকে। এই চেকের পাতা ব্যতিত একজন একাউন্টধারী নিজেও উক্ত একাউন্ট থেকে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করতে পারে না।

চেক লিখবেন যেভাবে : সকল ব্যাংকের চেক এক ধরনেরই হয়ে থাকে।চেকের পাতায় প্রথমেই তারিখ। এরপর যাকে চেকটি প্রদান করা হচ্ছে তার নাম বা কোম্পানীর নাম। অর্থের পরিমান : অংকে এবং কথায় পূরন করতে হয়। উক্ত চেকটি আমরা (বাংলাদেশী) বাংলা বা ইংরেজী যেকোন ভাষায়ই লিখতে পারি। তবে চেকের প্রতিটি ঘর কোনোরকম ঘষা মাজা বা কাটা মুছা বাদেই পূরন করতে হয়। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো যে, যখন আমরা ইংরেজীতে চেক লিখি, তখন (লক্ষ) লাখ লিখা নিয়ে আমদের মধ্যে একটি কনফিউশন তৈরী হয়। কখনো আমরা ‘Lac’ আবার কেউ ‘Lakh’ এভাবেও লিখে থাকি।

জানার বিষয় কোনটি সঠিক : এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংকের একটি নির্দেশিকা আছে। যেখানে বলা হয়েছে লক্ষ টাকা লেখার সময় ইংরেজিতে ‘Lakh’ কথাটি লিখতে হবে। ব্যাংকিং পরিভাষায় ‘Lakh’ বানানটি সঠিক। এই বানানটি ব্যবহার করা উচিত।

যেভাবে নতুন চেক বই সংগ্রহ করবেন : এই Cheque Book বা চেক বই এর পাতাগুলো শেষ হয়ে গেলে নতুন বই বা পাতার জন্য ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদনের জন্য পুরাতন বইয়ের ভেতর একটি রিকোজিশন ফরম দেয়া থাকে, যেটি পূরন করে দিলেই নতুন চেক বইয়ের আবেদন করা হয়ে যায়।

কখনো বা এই রিকোজিশন পাতাটি নষ্ট বা হারিয়ে গেলে একাউন্ট হোল্ডারকে ব্যাংক বরাবর লিখিত আবেদন পত্র পাঠাতে হয়। আর তাই হচ্ছে চেক বই রিকোয়েষ্ট লেটার। অতঃপর এই চিঠি সাবমিটের কিছু দিনের মধ্যেই উক্ত ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডার বা আবেদনকারী নামে বা তার একাউন্ট নাম্বারের নতুন আরেকটি বই তৈরী করে দেয়।

যেভাবে নতুন চেক বইয়ের জন্য চিঠি লিখতে হয় : নতুন চেক বই ইস্যু করার অনুরোধ পত্র ব্যাঙ্কের স্থানীয় প্রধানকে সম্বোধন করে নিচের তথ্যাদি উল্লেখ করে অনুরোধ পত্র লিখতে হয়। যেমন :
• একাউন্ট হোল্ডারের নাম
• ব্যাংক একাউন্টের নাম্বার
• ব্যাঙ্ক/শাখার নাম
• এবং চেক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ পূর্বক অল্প বর্ননার একটি চিঠি
• চিঠির শেষে সাইন এবং প্রয়োজনে অফিশিয়াল সীল প্রদান করতে হয়।

চেক বই বা পাতা হারিয়ে গেলে করনীয় : নিকটস্থ থানা বা পুলিশ ষ্টেশনে একটি জিডি বা সাধারন ডায়েরী করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যাংক অর্থাৎ যে শাখা থেকে আপনার একাউন্ট ওপেন করা হয়েছিলো সেখানে লিখিত নোটিশ করতে হয়। আর যে শাখায় আপনার একাউন্ট ওপেন করা হয়েছিলো সে ব্রাঞ্চকে মাদার ব্রাঞ্চ বলা হয়।

চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা

টাকার লেনদেনের জন্য যে জিনিসটি সব থেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরাপদ বলে মনে করা হয়, সেটি হল চেক। যতই নিরাপদ হোক, চেক সই করে কাউকে দেওয়ার সময়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। না হলে সেই চেক বাতিল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

– যাকে বা যে প্রতিষ্টানকে অর্থ প্রদান করা হবে Pay to ঘরে তার নাম বা কোম্পানীর নাম লিখতে হয়। কিন্তু সেই নাম লেখার সময়েও খুব সাবধানতা বজায় রাখা উচিত। ধরুন অমিত রায় নামক কারোর নাম লিখলেন। নাম ও পদবীর মধ্যে বুঝে (অল্প পরিমান) ফাঁকা জায়গা রাখুন। না হলে অমিতকে অমিতা বানিয়ে ফেলতে খুব একটা সমস্যা হবে না। এই ধরনের জালিয়াতি থেকে বাঁচতে, যাকে টাকা দিচ্ছেন তার নামের পাশে তার অ্যাকাউন্ট নম্বরটিও যুক্ত করেও দিতে পারেন।

– যাকে টাকা দেবেন তার নাম লেখা হলে, তার নামের পাশে একটি লাইন টেনে দিন।

– Pay to ঘরে ‘বেয়ারার’ বা ক্যাশ Cash লিখে কাউকে দিলে তা যে কেউই উত্তোলন করতে পারবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

– চেকের উপরে AC Payee এসি-পেয়ি লিখে দিলে যাকে চেক দিচ্ছেন, শুধু তার অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই চেক ভাঙানো যাবে বা অর্থ উত্তোলন সম্ভব হবে।

– চেক-এর এমাঊন্ট বসানোর পরে অবশ্যই ‘/-‘ বা /= এই চিহ্ন দিয়ে দিন। তাতে কোনও ভাবেই অতিরিক্ত কোনও সংখ্যা বসিয়ে কেউ জালিয়াতি করতে পারবে না। খেয়াল রাখবেন প্রতিটি সংখ্যার মধ্যে যেন কোনও ফাঁকা জায়গা না থাকে।

– ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে যে স্বাক্ষর করছেন, সেই স্বাক্ষরটিই চেকের স্বাক্ষর ঘরে করবেন। যদি কোন কোম্পানির হয়ে টাকা দেন, বা কারেন্ট একাউন্ট (ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত একাউন্ট কে কারেন্ট একাউন্ট আর নিজস্ব নামে যে একাউন্ট করা হয় তাকে সেভিংস একাউন্ট বলা হয়) থেকে কাউকে চেক দেন তাহলে কোম্পানির সিল দিয়ে দিন।

– চেক লিখনে কোনো প্রকার ভুল হলে সেই ভুল লেখার উপরে বা নিচে স্বাক্ষর করে দিন।

– অনেক সময়েই অনেক চেক বাতিল হয়ে যায়। বাতিল চেকটি ছিঁড়ে ফেলুন। আর না হলে চেকটিতে ‘ক্যানসেলড’ লিখে দিন।

পুরনকৃত সেভিংস একাউন্টের একটি নমূনা চেক :
1. ব্যায়ারার জন্য


2. কোম্পানির জন্য


3. নিজের জন্য

পুরনকৃত কারেন্ট বা বিজনেস একাউন্টের একটি নমূনা চেক :
1. ব্যায়ারার জন্য


2. কোম্পানির জন্য


3. নিজের জন্য

চেক ডিজঅনার কি?

একাউন্টধারীর একাউন্টে চেকে উল্লেখিত যথেষ্ট পরিমান অর্থ না থাকলে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকটি গ্রাহককে ফেরত দিয়ে থাকেন, তাই হচ্ছে চেক ডিজঅনার।

একাউন্ট হোল্ডারের জন্য চেক ডিজনার হওয়া ব্যাংকিং সিষ্টেমে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেক্ষেত্রে একাউন্টধারীকে উক্ত বিষয়ে ব্যাংক ম্যানেজার বরাবর লিখিত বা মৌখিক অবহিত করা বা গ্রাহককেও অবহিত করা এবং উক্ত চেকে উল্লেখিত পরিমার অর্থ ব্যাংকে ডিপোজিট করে গ্রাহককে পুনরায় চেক সাবমিট করার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

ব্যাংক যদি চেকের গায়ে ডিজঅনার সিল দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে উক্ত গ্রাহক এই চেক দিয়ে একাউন্টধারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে। তাই কোনো গ্রাহককে চেক প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ আছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া উচিত।

নোট : গ্রাহককে চেক প্রদানের পুর্বে চেকের একটি কপি নিজের সংগ্রহে রাখলে আপনার ব্যাংক ষ্টেটমেন্টের সাথে অর্থের পরিমান মিলাতে সহায়তা করবে।

চেকের পাতায় অর্থের পরিমান বাংলায় লিখে ’মাত্র’ আর ইংরেজীতে লিখে ‘Only’ শব্দটি লিখে দেই। এর কারন কি ?

এর কারন একটাই। তা হলো প্রতারণা প্রতিহত করা। Only শব্দটি লেখা থাকলে আপনাকে কেউ প্রতারিত করতে পারবে না । ধরুন, আপনি কারও নামে ২৫ হাজার টাকার চেক কেটে দিলেন। টাকার অঙ্কে লিখলেন- twenty five thousand only. অর্থাৎ ২৫ হাজার টাকার পর আর কেউ কোনও শব্দ বসাতে পারবে না এই Only শব্দটি থাকায়। ঠিক তেমনি বাংলাতেও ২৫ হাজার টাকা মাত্র লিখলে এর পরে কেউ কোন নতুন শব্দ সংযোজন করতে পারবে না।

ফলে আপনি প্রতারিত হবেন না। চেকের পেছনে সব সময় আপনার একাউন্ট নম্বর এবং ফোন নম্বর লিখুন। যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে ব্যাংকের প্রতিনিধি আপনার সঙ্গে কথা বলে নিতে পারবেন।

চেক জমা করার সময় ব্যাংকের ফর্মটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটি ফেলে দেন বহু মানুষ। মনে রাখবেন, আপনি যে ব্যাঙ্কে চেকটি জমা করেছেন তার একমাত্র প্রমাণ। ফলে সেটি সামলে রাখুন।

চেক বইটি বা চেক বইয়ের ভেতরের রিকোজিশন স্লিপটি হারিয়ে ফেলেছেন, সেক্ষেত্রে সহজেই নিচের ফরমটি পুরন করে একটি রিকোজিশন লেটার তৈরি করে ফেলুন। যা ১০০% নিরাপদ।

পারসোনাল একাউন্টের জন্য  :

Make Letter

বিজনেস একাউন্টের জন্য :

Make Letter

আরো জানুন :

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন

আর্টিকেল পড়ে আপনার অনুভূতি কি?

রেট দিতে তারকায় ক্লিক করুন!

গড় রেটিং 5 / 5. ভোট কাউন্ট হয়েছে: 4

এখন পর্যন্ত কোনো ভোট হয়নি! আপনিই প্রথম

আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে...

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

আমাদের জানান কিভাবে আমরা এই আর্টিকেল আরো উন্নত করতে পারি?

Check Also

ফ্লাট ক্রয়ে সতর্কতা

ফ্লাট ক্রয়ে যেসব ডকুমেন্টস্ যাচাই করবেন

5 (1) ফ্লাট ক্রয়ে যেসব ডকুমেন্টস্ যাচাই করবেন : সারা জীবনের জমানো অর্থ দিয়ে কিনবেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »