♦একটি সমাজ বা জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে তার নাগরিকদের মানসিকতা, কর্মধারা, এবং সুশাসনের ওপর। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায়, বিভিন্ন জায়গায় আমরা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, এবং বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখে হতাশ হয়ে পড়ি। প্রশ্ন জাগে—এই উৎখাত, এই ধ্বংস, এই ভাঙন কেন? আসল উত্তর হলো, আমরা নিজেরাই যদি আমাদের ভুলগুলো সংশোধন না করি, তবে এই উৎখাত ও সংকট অনিবার্য।
উৎখাতের কারণগুলো
১. নৈতিক অবক্ষয়:
সমাজে নৈতিকতার অভাব ক্রমেই বাড়ছে। অসৎ পথে সম্পদ অর্জন, অন্যের অধিকার হরণ, এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব আমাদের মূল্যবোধকে ভেঙে দিচ্ছে।
২. অসচেতনতা ও উদাসীনতা:
সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ উদাসীন। নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে সমাজ বা জাতির বৃহত্তর কল্যাণ নিয়ে কেউ চিন্তা করে না। ফলে সমস্যাগুলো দিন দিন আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
৩. দুর্নীতি ও অপশাসন:
দুর্নীতি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেতর থেকে ধ্বংস করছে। প্রশাসনিক অপব্যবস্থা, লুটপাট, এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি উৎখাতের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪. পরিবেশের প্রতি অবহেলা:
পরিবেশ দূষণ ও অবকাঠামো নির্মাণে অযাচিত হস্তক্ষেপ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। মানুষ নিজেই নিজের বসবাসের জায়গা ধ্বংস করছে।
৫. অসহিষ্ণুতা ও বিভেদ:
ধর্ম, জাতি, এবং রাজনীতির নামে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এই বিভক্তি মানুষকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং সমাজে উৎখাতের পরিবেশ তৈরি করছে।
নিজেদের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা
নিজেকে বদলানো ছাড়া সমাজ বদলাবে না। যদি আমরা নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার না করি এবং সংশোধনের পথে না হাঁটি, তাহলে উন্নতি তো দূরের কথা, ধ্বংস আরও দ্রুত হবে।
১. নৈতিকতার চর্চা:
প্রতিটি ব্যক্তিকে সৎ ও নৈতিক হওয়া শিখতে হবে। আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, যেন তারা সততা ও মানবিকতার আদর্শে বেড়ে ওঠে।
২. সচেতন নাগরিক দায়িত্ব:
কেবল সমালোচনা না করে, নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে হবে। যেকোনো ভুল বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে এবং নিজের জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
৩. পরিবেশ সুরক্ষা:
পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বৃক্ষরোপণ, পানি সংরক্ষণ, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৪. শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসার:
শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়, প্রকৃত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ সুশিক্ষাই আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে।
৫. সমাজে একতা প্রতিষ্ঠা:
ধর্ম, রাজনীতি, বা জাতিগত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমাজে সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
উৎখাত ঠেকাতে আমাদের করণীয়
১. দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে।
৪. মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
৫. প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে।
উৎখাতের জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই। যদি নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার না করি, যদি দায়িত্বশীল না হই, তবে এই উৎখাত একসময় আমাদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করবে। সমাজ বা রাষ্ট্র পরিবর্তন করতে হলে আগে নিজেকে বদলাতে হবে। কারণ প্রতিটি বড় পরিবর্তন শুরু হয় ছোট ছোট ব্যক্তিগত পদক্ষেপ থেকে। তাই, এখনই সময় নিজেদের সংশোধন করে একটি সুন্দর, নৈতিক এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলার।