২০২৪ সাল। পৃথিবী যেন একটি অস্থিরতায় ভরা গ্রহ। প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং মানব সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে নানা সমস্যা। বিশ্বের প্রতিটি কোণে কোথাও না কোথাও যুদ্ধ, পরিবেশ বিপর্যয়, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং সামাজিক অসাম্য মানুষকে ক্রমশ অস্থির করে তুলছে। এই অবস্থার মধ্যে এক তরুণ সাংবাদিক, আরিয়ান, তার পেশার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পৃথিবীর এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করে।
আরিয়ান ঢাকার একজন সাংবাদিক। সে তার কাজের মাধ্যমে মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং সমাজের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরতে চায়। কিন্তু যতই সে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে গবেষণা করে, ততই তার মনের ভেতর একটা প্রশ্ন বারবার উঁকি দেয়—”এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কোথায় যাচ্ছে?”
১. পরিবেশ বিপর্যয়ের ছায়া
একদিন আরিয়ান তার নিউজ অফিসে বসে আন্তর্জাতিক সংবাদ পড়ছিল। খবর এসেছিল আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের এক ভয়াবহ খরার। হাজার হাজার মানুষ খাবার আর পানির জন্য লড়াই করছে। আরব সাগর থেকে দূষণের কারণে মরে যাচ্ছে অজস্র সামুদ্রিক প্রাণী। হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, এবং এর ফলে বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
আরিয়ান ভাবছিল, “পৃথিবীর এত উন্নতি হলো, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে আমরা কেন কিছু করতে পারলাম না?” বিশ্বনেতারা জলবায়ু সম্মেলনে অঙ্গীকার করলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। উন্নত দেশগুলো নিজেদের শিল্পায়ন চালিয়ে যেতে গিয়ে গরিব দেশগুলোর মানুষকে দুর্ভোগে ফেলছে।
২. যুদ্ধ এবং সংঘাত
পরের দিন আরিয়ান কাজের ফাঁকে ইউরোপের খবর পড়ল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছেই। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে, এবং সাধারণ মানুষ দিন কাটাচ্ছে ভয়ের মধ্যে। আরিয়ান দেখল, বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
আরেকটি খবর তাকে নাড়া দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের বড় শক্তিগুলো এই সমস্যাগুলো সমাধান করার চেয়ে নিজেদের অস্ত্র বিক্রির বাজার তৈরি করতে ব্যস্ত।
“যুদ্ধ কি কখনো বন্ধ হবে না?” আরিয়ান নিজেকে প্রশ্ন করে। “মানুষ কেন শান্তির পথ খুঁজতে পারছে না?”
৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য
এক সন্ধ্যায় আরিয়ান ঢাকার বস্তি এলাকায় একটি প্রতিবেদন করতে যায়। সেখানে সে দেখল, মানুষ দুর্বিষহ অবস্থায় বাস করছে। খাদ্যের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্বাস্থ্যসেবার অভাব—সবকিছু মিলে এক করুণ চিত্র।
তবে একই দিনে সে এক ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার নিল, যিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন। তার ব্যক্তিগত বিমান, বিশাল অট্টালিকা, এবং বিলাসবহুল জীবন দেখে আরিয়ান মনে মনে বলল, “পৃথিবীর সম্পদ কি কেবল কিছু মানুষের হাতেই থাকবে? গরিব আর ধনীর এই বৈষম্য কি কখনো কমবে না?”
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে আরিয়ান জানতে পারল, বিশ্বের ১% ধনী মানুষের হাতে আছে ৯৯% সম্পদ। আর এই অর্থনৈতিক বৈষম্য ধীরে ধীরে সমাজে অস্থিরতা এবং অপরাধ বৃদ্ধি করছে।
৪. প্রযুক্তি এবং সামাজিক পরিবর্তন
আরিয়ান তার আরেক প্রতিবেদন তৈরি করছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে। AI প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবন সহজ করেছে, তেমনি অনেক চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টরে রোবটিকস মেশিন এসে বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার মানুষের জীবনে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে।
কিশোর-কিশোরীরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আটকে যাচ্ছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ফেক নিউজ, সাইবার বুলিং, এবং ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার সমাজে নতুন ধরনের অপরাধের জন্ম দিচ্ছে।
আরিয়ান ভাবল, “প্রযুক্তি কি সত্যিই আমাদের উপকার করছে? নাকি এটা ধীরে ধীরে আমাদের মনুষ্যত্বকে গ্রাস করছে?”
৫. মানবতার আশা
এইসব সমস্যার মধ্যেও আরিয়ান কিছু আশার আলো দেখতে পায়। সে দেখে, কিছু যুবক-যুবতী জলবায়ু রক্ষায় আন্দোলন করছে। কেউ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবারের উদ্যোগ নিচ্ছে। কেউ বিনামূল্যে শিক্ষা দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে।
আরিয়ান এক বৃদ্ধার সাক্ষাৎকার নেয়, যিনি নিজের পেনশনের টাকা দিয়ে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। বৃদ্ধা বলেন, “আমাদের সবার উচিত একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। পৃথিবী যত সমস্যায় থাকুক না কেন, মানুষের ভালোবাসা আর সহানুভূতি সব সমস্যার সমাধান করতে পারে।”
এই কথাগুলো আরিয়ানের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে।
৬. সমাপ্তি: এক নতুন সংকল্প
আরিয়ান তার নোটবুকে লিখতে শুরু করে:
“পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি জটিল, তবে অসম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, বৈষম্য, এবং প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জগুলো যত বড়ই হোক না কেন, মানুষ যদি একত্রে কাজ করে, তবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। আমাদের দরকার কেবল সদিচ্ছা, সঠিক নেতৃত্ব, এবং মানবিক মূল্যবোধ।”
আরিয়ান তার লেখাগুলো প্রকাশ করে এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করতে থাকে। সে বুঝতে পারে, পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য একক কোনো নায়ক থাকবে না। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে তবেই পৃথিবী আবার সুন্দর হয়ে উঠবে।
পাঠশিক্ষা:
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে পৃথিবীর যত সমস্যাই থাকুক, মানুষ যদি সঠিকভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে সবকিছুর সমাধান সম্ভব। মানবতার ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, কারণ এই বিশ্বাসই পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে।