বৃহস্পতিবার , সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৪

ছিটমহল আসলে কি

ছিটমহল হলো, স্বাধিন রাষ্ট্র বা মুল ভুখন্ডের অভ্যন্তরে বিছিন্ন অবস্থায় অবস্থিত অন্য কোনো স্বাধিন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত এলাকা। প্রিথিবির অনেক রাষ্ট্রের অর্ভন্তরেই অন্য রাষ্ট্রের এ ধরনের ছিটমহল রয়েছে।

২০১৫ সালের ১ আগষ্টের পুর্বে  ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের সর্বমোট ১৬২টি ছিটমহল ছিলো। বাংলাদেশ পায় লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, কুড়িগ্রামে ১২টি, নীলফামারীতে ৪টিসহ মোট ১১১টি ছিটমহল । অপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অবস্থান ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এর মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার ও ৪ টি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত ছিল।

১ আগষ্ট ১২:০১ মিনিটে দুই দেশ  ঐতিহিাসিক মুজিব-ইন্দিরাচুক্তির আওতায় একে অন্যের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময় করে।

দাশিয়ারছড়া

এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভারতের ছিটমহল দাশিয়ারছড়া। দাশিয়ারছড়ার ভেতরেই আছে চন্দ্রখানা নামের বাংলাদেশের একটি ছিটমহল যেটি বাংলাদেশেই থেকে যায়। এটিই প্রিথিবির একমাত্র ছিটমহল ছিল যার অভ্যন্তরে অন্য দেশের আরেকটি ছিল।

দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিন বেরুবাড়ী

খুব বিখ্যাত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের নামটা অনেকেরই জানা – এই ছিটমহলটি বাংলাদেশের, কিন্তু এর চারিদিকে ভারতের এলাকা। ফলে এখানে থাকা লোকজন কার্যত জেলখানাতেই বন্দী। বহু দিন পর ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ভারত ৩ বিঘা করিডোর ইজারা দিয়েছে। বিনিময়ে ভারত ১২ নম্বর দক্ষিন বেরুবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিনের অর্ধাংশ এবং সংলগ্ন এলাকার দখল পায়।

এই ছিটমহলের ইতিহাসটা কি ?

একটা ব্যাপারে খুব ভালো মিল আছে – এই ছিটমহলগুলার অধিকাংশই প্রাচিন কুচবিহার রাজ্যের অংশ ছিলো। আর অনেকটা মোগল আমল থেকেই এই এলাকাগুলোর এই অবস্থা। জনশ্রুতি আছে, সেসময়ে কুচবিহার রাজ্যের রাজা, আর রঙপুর রাজ্যের রাজার মধ্যে পাশা খেলায় বাজির পুরস্কার হিসাবে এই এলাকাগুলা আদান প্রদান হতো। ফলে কুচবিহার রাজ্যের অংশ হয়ে পড়ে এমন অনেক এলাকা যা আসলে রঙপুরে, আর উল্টোটাও।

ছিটমহল স্রিষ্টির কারন ?

১৯৪৭ সালে বাংলা ও পাঞ্জাবের সিমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড মাউন্টবেটন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ি ব্রিটিশ আইনজিবি সিরিল রেডক্লিফকে প্রধান করে সে বছরই গঠন করা হয় সিমানা নির্ধারণের কমিশন। ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই লন্ডন থেকে ভারতে আসেন রেডক্লিফ। মাত্র ছয় সপ্তাহের মাথায় ১৩J আগস্ট তিনি সিমানা নির্ধারনের চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এর তিন দিন পর ১৬ আগস্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় সিমানার মানচিত্র।
স্যার সিরিল রেডক্লিফ ভারত ও পাকিস্তানের মানচিত্র একেছিলেন। যেসব এলাকা নিয়ে তিনি পুর্ব পাকিস্তান চিহ্নিত করেছিলেন তাই এখন বাংলাদেশের ভূখণ্ড। রেডক্লিফ সিমানা রেখা আকার সময়ে বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করেননি। ফলে বাস্তবে রেডক্লিফের সিমানা অনেক স্থানে হেরফের হয়। অনেক স্থানে বাংলাদেশের ভুখণ্ড ভারতের দখলে এবং ভারতের ভুখণ্ড বাংলাদেশের দখলে থাকে। সেই দখলের স্থানগুলোকেই বলা হয় অপদখলিয় ভুমি।

নুন-নেহরু চুক্তি ১৯৫৮

দেশ বিভাগের এক বছরের মধ্যে ছিটমহল ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চাপা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রকাশ ঘটায়। অবস্থা সামাল দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রি জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি ফিরোজ খান নুন করত্রিক ১৯৫৮ সালে দু দেশের মধ্যে ছিটমহল দক্ষিণ বেরুবাড়ির (৭.৩৯ বর্গ কিমি) একটি অংশ পুর্ববাংলার কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে ভারতের বিরোধি রাজনৈতিক শিবির এর কঠোর বিরোধিতা করে। সিদ্ধান্ত ছিল যে, পূর্ববাংলার মূলভূমির সঙ্গে নীলফামারী জেলার পাটগ্রাম থানাধিন আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহলকে সংযুক্ত করতে ‘তিন বিঘা’ নামে খ্যাত এক একর জমির বিনিময়ে ভারত ছিটমহল সংলগ্ন অন্য এক খন্ড জমির অধিকারি হতে পারে। কিন্তু ভারতে এ নিয়ে লড়াই শুরু হলে এ সিদ্ধান্ত দু দশক সময়েও বাস্তবায়িত হতে পারে নি।

মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ১৯৭৪

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি সই হয় ১৯৭৪ সালে যা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত। ওই সময়ে বাংলাদেশ চুক্তিটি অনুসমর্থন করলেও ভারত তখন তা করেনি। তারপর ২০১১ সালে সীমান্ত চুক্তির সঙ্গে সই হয় প্রটোকল। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রটোকলসহ সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করতে ভারতের সংবিধান সংশোধন জরুরি হয় পড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্তমান সরকার দেশটির পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে সংবিধান সংশোধনে সমর্থ হন। এরপরই প্রটোকলসহ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত ও ৩১ জুলাই মধ্যরাতেই সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়।

অপদখলিয় ভূমি বিনিময়

সীমান্ত চুক্তির আলোকে দু’দেশের যৌথ জরিপ দল যার দখলে যে জায়গা রয়েছে সেটাকে ঠিক রেখে সীমানা রেখা খানিকটা ঘুরিয়ে দেন। ফলে সীমানার স্থানেও মানচিত্র পাল্টায়। এভাবে দেJখা যাচ্ছে রেডক্লিফের মানচিত্রের আলোকে ছয়টি স্থানে ২২৬৭.৬৮২ একর ভারতীয় ভূমি বাংলাদেশ অপদখলীয় অবস্থায় ছিল। তাই এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ পায় ২২৬৭.৬৮২ একর জমি। তার বিপরীতে সীমান্তের ১২টি স্থানে ২৭৭৭.০৩৪ একর ভূখণ্ড ভারত অপদখলীয় রেখেছিল। যা এখন ভারতের দখলে।

অমিমাংসিত সিমানা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি স্থলসিমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থলসীমান্ত অচিহ্নিত ছিল। দু’দেশের যৌথ জরিপ দলের সদস্যরা উত্তরাঞ্চলে দইখাদা এবং পুর্বাঞ্চলিয় লাঠিটিলায় সাড়ে চার কিলোমিটার সিমান্ত চিহ্নিত করেছেন। ফলে এ দুটি স্থানে মানচিত্র নিশ্চিত হল। তবে ফেনি জেলার বিলনিয়া সেক্টরে মুহুরির চরে ২ কিলোমিটার সিমানা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। মুহুরি নদির মধ্যস্রোতকে দুই দেশের সিমান্ত রেখা ধরা হয়। কিন্তু মধ্যস্রোতই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে সিমান্ত চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের পথে এই সামান্য বাধাটুকু রয়ে গেল।

এদিকে মানচিত্র পরিবর্তন করে নতুন মানচিত্র প্রনয়নে দু’দেশের যৌথ জরিপ কর্মকর্তারা এগারশ’র চেয়ে বেশি স্ট্রিপ ম্যাপ প্রস্তুত করেন। সেগুলোতে সই করার জন্য ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি’ (Plenipotentiary) ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ সই করেন। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমেই নতুন মানচিত্র পেল বাংলাদেশ ও ভারত।

Showkatbd.com is a full-featured online documents organized application site. Which is going to prepare document from just a form.   It will save your time ! Bengali, English and Arabic letter generator is available here. Do not heisted to try this! 

  FORM2Dox

  DOCUMENTCreation Tools

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

About মোহাম্মদ শওকত আকবার

Showkatbd.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ব্লগার। চলমান ব্লগিং ল্যান্ডস্কেপকে আমি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমি শুধু একটি ব্লগ নিয়েই নয়; একটি অপরিহার্য বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছি। "Many more in one” শ্লোগানে যার পথচলা। যে ব্লগ হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বাংলা ভাষা ভাষিসহ অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতি মুহূর্তের এক অপরিহার্য প্লাটফর্ম । তাদের অনলাইন সেবা প্রদানেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ”সম্পূর্ন একটি সেবামূলক সাইট”

Check Also

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার

জীবনকে উপভোগ করার নাম সংসার! যুগ যুগ একই ছাদের নিচে থেকেও, অনেক সময় একজন অন্যজনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!