বাংলাদেশী পাসপোর্ট: কোন রং কাদের জন্য

বাংলাদেশী পাসপোর্ট:
নিজ দেশ ছেড়ে আন্তর্জাতিক দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্যে জাতীয়তা পরিচয়ের জন্য নাগরিকগন যে ডকুমেন্টস বা চিঠি বা বই ব্যবহার করে থাকে, তাই পাসপোর্ট। বাংলাদেশ সরকার যে পাসপোর্ট প্রদান করে থাকে তাই হচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট।
দেশের সরকার তার নাগরিকদের জন্য এই বই ইস্যু করে থাকে। একটি পাসপোর্ট দেশের নাগরিকত্বসহ একজন নাগরিকের পরিচয় বহন করে থাকে।
প্রতিটি দেশ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার দেশের নাগরিকদের এই ডকুমেন্টস প্রদান করে থাকে। যাতে করে নাগরিকগন নিজ দেশ ছেড়ে অনায়াসেই অন্য দেশে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষা বা ভ্রমন সুবিধা অর্জন করতে পারে।

পাসপোর্টের ইতিহাস:
৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে হিব্রু বাইবেলের নেহেমিয়া ২:৭-৯  গ্রন্থে সর্বপ্রথম পাসপোর্টর ধারনা পাওয়া যায়। king Artaxerxes 1 তার এক কর্ম চারীকে একটি চিঠি লিখে দেন নদীর অপর প্রান্তের অন্য এক রাজার রাজ্য পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে। এবং ঐরাজাকেও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন, তার কর্মচারীর ভ্রমনে কোন অসুবিধা যেন না হয়, তার দেখ ভালের জন্য।

চানক্যের অর্থশাস্ত্রের ৩৪ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যে, গ্রাম প্রধান বা রাজার অনুমতি বিহীন কেউ গ্রামে রা রাজ্যে ঢুকতে পারতেন না। চিনের কিন রাজবংশ সহ ইউরোপে এমন নিয়মের প্রচলন ছিলো বলে জানা যায়।

বাংলাদেশে পাসপোর্টের ইতিহাস:
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পরেও পাকিস্তানি পাসপোর্টের প্রচলন ছিলো কিছু দিন। ১৯৭৩ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আইন করে প্রথম পাসপোর্ট প্রনয়ন শুরু হয়। সেই থেকেই আজ অবধি চলমান আছে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া।

পাসপোর্টের প্রকার:
বাংলাদেশে ৩ ধরনের পাসপোর্ট চলমান। লাল, নীল,  সবুজ । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের রং ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু যে দেশ যে রং এর পাসপোর্টই দিক না কেন, সেটা অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও এর কাছ থেকে পাসপোর্ট এর রং আর নকশার ছাড়পত্র নিতে হয়। তবে সাধারণভাবে পৃথিবীতে লাল, নীল, সবুজ ও কালো এই চারটি রং এর ভিন্ন ভিন্ন শেড এর হয়। বাংলাদেশে সাধারণভাবে সকল নাগরিকের জন্য সবুজ রং এর পাসপোর্ট চালু থাকলেও, আরো দুটি রং অর্থাৎ নীল এবং লাল রঙের পাসপোর্ট চালু রয়েছে।

বাংলাদেশী পাসপোর্ট: কোন রং কাদের জন্য

বাংলাদেশী পাসপোর্ট
বাংলাদেশী পাসপোর্ট

লাল পাসপোর্টের বর্ণনা:
বাংলাদেশের ৩ ধরনের পাসপোর্টের মধ্যে লাল পাসপোর্ট প্রথম সারির। এই  পাসপোর্ট এর কভার লাল হওয়ার কারনে একে লাল  পাসপোর্ট  বলা হয়। মূলত এ পাসপোর্ট কূটনৈতিক বা ডিপ্লোমেটিক ব্যক্তিবর্গরাই ব্যবহার করে থাকেন। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট ও তাদের স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও উচ্চ আদালতের বিচারপতি, মন্ত্রনালয়ের সচিবগন, পাবলিক বিস্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগন, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের (এম্বাসী, হাই কমিশন বা কনন্সুলেটের) কর্মরত কর্মকর্তাগন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধানগন এই  পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। এই পাসপোর্টের টাইপ হচ্ছে : ডি (D). Diplomatic Passport

লাল পাসেপোর্টের সুবিধা :
এই  পাসপোর্ট ব্যবাহারকারিদের নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে কোন ভিসার প্রয়োজন হয়না। নৌপথ, স্থলপথ বা আকাশপথে যে দেশেই যেতে চান সেই দেশেরই অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেয়ে থাকেন।

তবে ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট পৃথিবীর সব দেশেই লাল রং এর হয়ে থাকে।

নীল পাসপোর্টের বর্ণনা:
সরকারী কর্মকর্তাগন দেশের বাইরে সরকারী কাজে ভ্রমনে গেলে এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। এই পাসপোর্টের কভার নীল রঙের হয় বলে একে নীল পাসপোর্ট বলা হয়। এই পাসপোর্টের টাইপ হচ্ছে : এস (S). Service. এই পাসপোর্ট গ্রহনের জন্য সরকারের অর্ডার গ্রহন করতে হয়। এই পাসপোর্ট দিয়ে ২৭টিরও বেশী দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমন করা যায়। সরকারী কর্মকান্ড ব্যতিত এই পাসপোর্ট ব্যবহার করা যায না।

সবুজ পাসপোর্টের বর্ণনা:
বাংলাদেশের সাধারন মানুষের জন্য প্রচলিত পাসপোর্টই হচ্ছে সবুজ পাসপোর্ট। সবুজ রঙের মলাটের কারনে এর নাম সবুজ পাসপোর্টও বলা যায়। এই পাসপোর্টের টাইপ হচ্ছে : পি (p). Ordinary Passport.
সবুজ / সাধারন / অর্ডিনারী পাসপোর্ট দেশের সাধারন নাগরিকরাই পেয়ে থাকেন। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, কিংবা বৈবাহিক সূত্রে বা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের সবুজ পাসপোর্ট বা অর্ডিনারী বা সাধারন পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

ইসরাইল ব্যতিত প্রথিবীর সকল রাষ্ট্রেই এই পাসপোর্ট বৈধ। সাধারন নাগরিক দেশ ছেড়ে চাকরী, ব্যবসা বা পড়াশুনার জন্য যারাই বিদেশে যেতে চান, তারাই এ পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। শুধুমাত্র যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সে দেশের ভিসা নেয়ার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশের সাধারণ পাসপোর্ট সবুজ কেন?
বাংলাদেশের সাধারণ পাসপোর্টের রং সবুজ হবার বেশ কয়েকটি কারন জানা যায়। যা আসলে কোনটাই সঠিক নয়।
একটি প্রচলিত ধারণা যে, অধিকাংশ মুসলিম দেশের পাসপোর্টের রং সবুজ, তাই মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পাসপোর্টের রংও সবুজ।

আরেকটি ধারণা যে, বাংলাদেশের পতাকার রং এর সঙ্গে মিলিয়ে আইকাও এর তালিকা থেকে সবুজ রং বেছে দিয়েছে। তবে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই রং এর মাধ্যমে পাসপোর্টের সক্ষমতা বোঝায় না।

পাসপোর্টের আকার:
আইকাও এর নিয়ম অনুসারে পৃথিবীর সব দেশের পাসপোর্টের সাইজ একই হয়। আইকাও নির্দেশনা অনুযায়ী এর মাপ নির্ধারণের কয়েকটি কারণও রয়েছে। যেমন: আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে আলাদা মাপের পাসপোর্ট নিরীক্ষা করার জন্য এয়াপোর্টে ভিন্ন আকৃতির মেশিন প্রয়োজন হবে, যা স্থাপন করা জটিল এবং সেটি নিয়ন্ত্রণ করাও ব্যয় সাপেক্ষ ও দুরূহ। যে কারণে এই ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত সরকার যে ধরনের পাসপোর্টসমূহ প্রদান করেছেন :

হাতে লিখা পাসপোর্ট:
08/02/1973 সালে প্রথম হাতে লিখা পাসপোর্ট চালু হয়। তখন অন্যান্য দেশেও এই হাতে লিখা পাসপোর্টর প্রচলন ছিলো। তখনকার আন্তর্জাতিক আইনানুসারে হাতে লিখা এই পাসপোর্ট বৈধ ছিলো।

এম আরপি পাসপোর্ট : Machine readable Passport / MRP পাসপোর্ট:
কিন্তু ২০১০ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও এর নির্দেশনা অনুযায়ী 1/04/2010 তারিখে বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু হয়। তবে 2015 পর্যন্ত হাতে লিখা পাসপোর্টের ব্যবহার ছিলো।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হলো যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট। এবং পাসপোর্টের সকল তথাদি প্রিন্টারের মাধ্যেমে প্রিন্ট করা। পাসপোর্ট অফিস আবেদনকারীর ছবি তুলে এবং ২ হাতের ৪ আঙুলের ছাড় নেওয়া হয়।
এই  মুহুর্তে এমআরপি চালু থাকলেও যে কেউ ই-পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক করতে পারছেন সহজেই।

ই-পাসপোর্ট বা বায়েমেট্রিক:
মাইক্রোপ্রসেসর চিপযুক্ত বিশেষ পাসপোর্ট। যেখান একজন ব্যক্তির সকল ডকুমেন্টস্হ মুখের ছবি, আঙুলের ছাপ, চোখের রেটিনা বা আইরিশ স্ক্যান ৩২ কিলোবাইটের মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। যা নকল করা খুবই ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অদ্যবধি কারো পাসপোর্ট নকল হয়েছে এ ধরনের কোন তথ্য মিডিয়াতে প্রচার হয়েচ বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয় ২২/01/ ২০২২০ এ। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম এই ই-পাসপোর্ট চালু করে। ই-পাসপোট চালুর দিকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান ১১৯ তম।

আরো জানুন:




নীল পাসপোর্ট কি এবং তা কারা পেয়ে থাকেন

নীল পাসপোর্ট: নীল পাসপোর্ট হচ্ছে অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সরকারি কাজে কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে এই নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। এই পাসপোর্ট পেতে সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন বা Government Order (জিও) প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ সরকার তিন ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকে। যেমন:

  1. সবুজ পাসপোর্ট বা সাধারণ পাসপোর্ট, সাধারনভাবে যে পাসপোর্ট সকল বাংলাদেশী নাগরিক ব্যবহার করে থাকেন।
  2. নীল পাসপোর্ট বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট, সরকারি কাজে সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে এ পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন আর
  3. লাল পাসপোর্ট বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দেশের মন্ত্রী, এমপি, কূটনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, কিছু ভিআইপি ব্যবসায়ী এ পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন।

আজকের আলোচনা নীল পাসপোর্ট নিয়ে

নীল পাসপোর্ট বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট কি ?

বাংলাদেশে নীল পাসপোর্ট হল অফিসিয়াল পাসপোর্ট। নীল পাসপোর্ট সরকারি কাজে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হলে ব্যবহার করা হয়। এই পাসপোর্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন বা Government Order (জিও) প্রয়োজন হয়।

এ পাসপোর্ট যারা পায়?

সরকারি চাকরিতে কর্মরত ব্যক্তি যারা সরকারি কোন দ্বায়িত্ব পালনে বিদেশ যাবেন তারাই এই পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। এই পাসপোর্ট পেতে অবশ্যই বিদেশ যাওয়ার জন্য সরকারি আদেশ পেতে হয়।

এই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হয়:

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
  • সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকতে হবে
  • সরকারি কর্মকান্ডে বিদেশ ভ্রমণের জন্য অনুমোদন পত্র পেতে হবে।

সরকারি কাজ ছাড়া কোন চাকরীজীবী যদি বিদেশ গমন করেন, তখন তারা নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এ পাসপোর্টের সুবিধাগুলো হলো:

  • বিনামুল্যে পাসপোর্ট, এ পাসপোর্ট পেতে আবেদনকারীকে কোন প্রকার খরচাদি করতে হয় না। যেহেতু সরকারি কর্মসাধনে বিদেশ যাওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদন কারীকে এই ফি দিতে হয় না।
  • বিনা ভিসায় ভ্রমণ সুবিধা, বিশ্বের ২৭টি দেশে কোন ভিসা ছাড়াই ভ্রমন করার সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, এবং আরও অনেক দেশ। সম্প্রতি এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে কাজাকস্থান।
  • ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এরা অগ্রাদিকার পেয়ে থাকেন। ভিসা পেতে এদের কষ্ট ও সময় কম লাগে। অফিশিয়াল নোট ভার্বাল জমা করলেই এরা ভিসা পেয়ে থাকেন।
  • বহির্বিশ্বে অবস্থানকালে সেই দেশের সরকারি সহায়তাসহ বাংলাদেশের  সরকারি সহযোগিতা বা এ্যাম্বসী, হাই কমিশন, কনস্যুলেট থেকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি। কোন সমস্যায় পতিত হলে সেই দেশের সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।

যেভাবে আবেদন করতে হয়:

অফিশিয়াল এই পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.epassport.gov.bd ভিজিট করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণের পর পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ও বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

অফিসিয়াল পাসপোর্ট সরকারি দ্বায়িত্ব পালনে বিদেশে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য তাদের পেশাগত অনেক সুবিধা প্রদান করে। এটি তাদের বিদেশ ভ্রমণকে সহজ এবং আরও কার্যকর করে তোলে।




জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার বিস্তারিত

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট : প্রয়োজনের তাগিদে অনেক সময় আমরা একের অধিক সদস্যদের নিয়ে যে একাউন্ট খুলে থাকি, তাই হচ্ছে জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট। হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়ে, ভাই-বোনের সমন্বয়ে কখনো বা নাবালগ সন্তানের একাউন্ট খোলার জন্য বাবা বা মায়ের সমন্বয়ে বা আইনগত অবিভাবকের সমন্বয়ে , আবার কখনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদের সমন্বয়ে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট মৃলত: একের অধিক সদস্যদের স্বাক্ষরেই ব্যাকিং লেনদেন হয়ে থাক। যদি দুয়ের সমন্বয়ে হয়ে থাকে তাহলে একজন সদস্য কোনভাবেই লেনদেন পরিচালনা করতে পারবেনা। উভয়ের স্বাক্ষরেই প্রয়োজন পড়বে চেক বা ব্যাংকরে জন্য যে কোন ডকুমেন্টস্ তৈরীতে।

যেসব ক্ষেত্রে জয়েন্ট একাউন্ট প্রয়োজন:

– ব্যবসা পরিচালনা
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানিজিং কমিটির জয়েন্ট একাউন্ট প্রয়োজন পড়ে,
– মসজিদ, মাদ্রাসা বা দাতব্য সংস্থা পরিচালনায়
– যে কোন সামাজিক সংগঠনের লেনদেন প্রক্রিয়া করনেও জয়েন্ট একাউন্টের প্রয়োজন হয়।

যৌথ অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে কিভাবে জয়েন্ট একাউন্ট ওপেন করতে হয় তা-ই বিস্তারিত তুলে ধরা হলো : আমরা একের অধিক সদস্যদের সমন্বয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকি। বা একের অধিক সদস্যদের নিয়ে ব্যবসা করার মনস্থির করে থাকি। সেক্ষেত্রে সকলে কিছু শর্তাবলীর সমন্বয়ে একটি চুক্তিনামা সম্পাদন করতে হয়। যেখানে ব্যবসাটি কিভাবে পরিচালিত হবে, মূলধন কিভাবে সমন্বয় হবে, লভ্যাংশ কিভাবে বাটোয়ারা হবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালিত হবে, ব্যাংক ট্রানজেকশন কিভাবে হবে সব কিছুই উল্লেখ করে তবেই ব্যবসা শুরু করতে হয়। আর যে বহিতে এইসব চুক্তিপত্র লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বলা হয় “রেজুলেশন”। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এই রেজুলেশন অত্যধিক কার্যকর। রেজুলেশন ছাড়াকোন ধরনের অংশীদারী ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

এ ধরনের কার্যক্রম একজন উকিলের মাধ্যমেই হয়ে থাক। কিংবা কখনো তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একজন ব্যবসায়িক ভাবে পটু ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো সমাধান করে থাকেন। যাই হোক, ব্যবসা শুরুর অন্যতম আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকে অংশীদারদের নিয়ে একটি যৌথ একাউন্ট খোলা। উক্ত একাউন্টের অংশীগনই ব্যাংক হিসেবের মালিক। সকলের সমর্থনে নির্ধারিত অংশীগনই উক্ত একাউন্ট তাদের স্বাক্ষরে অর্থ লেদনেদন করতে পারেন।

যেভাবে খুলতে হয় জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট : যেকোন সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস্, (যা ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী হয়ে থাকে) প্রথমেই তা সংগ্রহ করতে হবে। সেসব ডকুমেন্টস্ নিয়ে ব্যাংক থেকে একটি একাউন্ট ওপেনিং ফরম কালেক্ট করতে হবে। যথানিয়মে ব্যাংকের আবেদন পত্র বা ফরমটি পূরণ করে সকল আবেদনকারীর স্বাক্ষর সহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা প্রদান করে নিচের ডকুমেন্টস্ সমূহসহ জমা প্রদান করার কয়েক কার্যদিবসের মধ্যেই যৌথ ব্যাংক একাউন্ট ওপেন হয়ে যায়।

ওপেনিং ফরম পূরনে কোন রকম কনফিউশন হলে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। প্রতিটি ব্যাংকেই এখন একাউন্ট ওপেন করার জন্য একটি বিশেষ সেল কাজ করে থাকে। তাদের কাজই হচ্ছে একাউন্ট ওপেন, কার্ড রিলেটেড সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :

– আবেদনকারীদের অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া বা নিজস্ব হলে তা প্রমানে চুক্তিপত্র
– ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স
– আবেদনকারীদের তথ্য পুরানসহ স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র ব্যাংকে জমাদান।
– ব্যাংক কর্তৃক প্রধানকৃত TP (Transaction Profile) ও KYC (Know Your Customer) ফরম পূরণ।(টিপি হচ্ছে আপনাদের ব্যাংকিং কিরকম পরিমান অর্থ লেনদেন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান।

– একাউন্ট পরিচালনা বা লেনদেন করার দায়িত্বে কে কে থাকবে তা নিশ্চিত করন।
– আবেদনকারীদের এনআইড বা  জাতীয় পরিচয়পত্র/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্টের কপি।
– আবেদনকারীদের (ছবির পিছনের সত্যায়িতসহ) পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
– সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যে কোন চলতি (Current) বা সঞ্চয়ী (Savings) একাউন্ট ধারীর রেফারেন্স।
–  নমিনি হিসেবে যাকে নিযুক্ত করা হবে তার তথ্য ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
– ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি (গ্যাস, পানি, ইলেকট্রিক)বিলের কপি।
– TIN (Tax Identification Number) সার্টিফিকেটের কপি।
– ব্যবসা পরিচালনার রেজুলেশন (রেজুলেশন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা ও পরিচালনার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা ম্যানেজিং কমিটির একটি সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন বহিতে লিখিত ও উপস্থিত সকলের স্বাক্ষরিত হয়ে থাকে। )
– প্রাথমিকভাবে একাউন্ট ওপেনিং ফি জমাদান।

অতঃপর আবেদন ফরমে সম্পূর্ণ তথ্য পূরন ও প্রতিষ্ঠানভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা প্রদান করতে হবে। সব ঠিক ঠাক মতো হয়ে গেলে কয়েক দিনের মধ্যেই একাউন্টটি এ্যাক্টিভ হয়ে যাব। এবং ব্যাংক চেক বই প্রদান করবে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার সুবিধা :

– একাউন্টে অংশগ্রহণকারী সকলেরই তহবিলের সমান অধিকার।
– একজনের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ অর্থ উত্তোলন করতে পারে না তাই অর্থ শতভাগ নিরাপদ।
– বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একাউন্টের মালিকদের (প্রয়োজনে) প্রত্যেককে পৃথক পৃথক ডেবিট কার্ড ও চেক বই প্রদান করা হয়।
– ব্যবসায় অংশীদারি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতেও যৌথ ব্যাংক একাউন্ট কার্যকরী।
– বড় কোন আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ নেওয়া যায়।
– একজন অংশী একাউন্ট টি পরিচালনা করতে না পারলেও অন্যজন তো পরিচালনা করতে পারে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার অসুবিধা:

– অংশীদারদের মতামত ভিন্ন হয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে।
– একের অধিক সিগনেটরী হলে একের অনুমতি ব্যতিত অন্যজন অর্থ উত্তোলন করতে পারে না।
– উভয় সিএনটরী মিলে (দু’জন) যদি সমস্ত অর্থ বা ফান্ড ব্যবহার করে ফেললেও অন্যদের কিছু করার থাকে না।
– একজনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে একাউন্টটি বাজেয়াপ্ত হলে অন্যদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়।
– একজন পার্টনারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সকলের উপর এর প্রভাব পড়ে।
– উভয়ের মতামত বা স্বাক্ষর ব্যতিত একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভবপর হয়না।

সতর্কতা :

একাউন্ট খোলার জন্য সকল অংশীদারদের একে অন্যের মতামত, আর্থিক অবস্থান, চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। একাউন্ট ওপেনের পূর্বেই সকলের মতামত অনুযায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত। একাউন্ট পরিচালনা ও একাউন্ট বন্ধের ব্যাপারেও সকলকে অবশ্যই পূর্ব ধারনা রাখতে হবে।

অন্যান্য প্রয়োজনে জয়েন্ট বা  যৌথ একাউন্ট:

সন্তানের জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট: কখনো বা নাবালক সন্তানের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পিতা-মাতা বা আইনগত অবিভাবকের সাথে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট,  পিতা বা মাতার এন আই ডি / জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপি একাউন্ট ওপেন ফরমের সাথে জমা দিতে হয়।

স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়ে হলে: যদি কখনো স্বামী বা স্ত্রীর সমন্বয়ে যৌথ একাউন্ট খোলার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে উভয়ের এন আই ডি / জাতীয় পরিচয় পত্র, মেরেজ সার্টিফিকেটের অনুলিপি একাউন্ট ওপেন ফরমের সাথে সাবমিট করতে হয়।

শেষকথা

জয়েন্ট বা যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে উপরের আলোচনায় যদি কারো বিন্দুমাত্রও উপকার হয়, তবেই আমার কষ্ট সার্থক। ব্যাংকিং ও অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা পেতে ভিজিট করুন আমার ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আল্লহ্ ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর সুদকে করেছেন হারাম

ব্যবসা করুন হালালভাবে। আল্লাহই আপনার ব্যবসায় বরকত ও উন্নতি দিবেন- সেই প্রার্থনায়,

আল্লাহ হাফেজ!

চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন

Fund Transfer Request Letter Generator | English Format

আরো পড়ুন:




একাকিত্ব দূর করার টিপস্

একাকিত্ব দূর করার টিপস্ :

পৃথিবীর সকল মানুষ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে একা বোধ করেন। এটি এক ধরনের অনুভূতি। নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কারণে একজন মানুষের জীবনে একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা আসতে পারে। তবে সেটি দীর্ঘমেয়াদী হলে তখনই তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে এমন কিছু উপায় মেনে চলুন যা আপনার একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করবে।

১. কারণ খুঁজে বের করুন

পৃথিবীর সকল মানুষ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে একা বোধ করেন। এটি এক ধরনের অনুভূতি। নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কারণে একজন মানুষের জীবনে একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা আসতে পারে। তবে সেটি দীর্ঘমেয়াদী হলে তখনই তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে এমন কিছু উপায় মেনে চলুন যা আপনার একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করবে।

১. কারণ খুঁজে বের করুন

সমাধানের আগে সমস্যাটি খুঁজে বের করুন। কারণ, বের করার পর সম্ভাব্য সমাধানগুলো ভাবুন। আসলে সমাধানের আগে সবার আগে একাকিত্বের মূল কারণটি খুঁজে বের করা খুব জরুরি।

২. সৃজনশীল কাজ করুন

শোককে শক্তিতে পরিণত করুন। আবেগকে বয়ে যেতে দিন সৃজনশীল কাজের ভেতর দিয়ে। ছবি আঁকুন, গান করুন, নাচতে ইচ্ছে হলে নাচুন। যে কাজটি আপনাকে নতুন করে সৃষ্টি করবে বা সৃষ্টির আনন্দ পাবেন সে কাজটি করুন।

৩. নিজের সঙ্গেও প্রেম করুন

আপনিই হয়ে ওঠুন আপনার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী। নিজের সঙ্গেও প্রেম করুন। একা একা বেড়াতে যান। হতে পারে কোনো রেস্টুরেন্টে বসে কিছু খেলেন বা কোনো পছন্দের জিনিস নিজেকে উপহার দিলেন। সর্বোপরি নিজের সঙ্গে সময় কাটান। দেখবেন, অনেক ধোঁয়াশা পরিষ্কার হয়ে গেছে। হালকা লাগছে নিজেকে।

৪. অন্যকে সাহায্য করুন

আশপাশের দিকে তাকান। দেখবেন, আপনার চেয়ে কেউ না কেউ খুব দুঃখী রয়েছে। এর মধ্যেও শ্বাস নিচ্ছে তারা। এ ভাবনাটি ভাবলেও কিন্তু কষ্ট কিছুটা হালকা হয়। একাকিত্ব কাটানোর আরেকটি অন্যতম উপায় হলো- অন্যকে সাহায্য করা। দেখবেন, অন্যকে উপকার করলে নিজের ভেতরেও অনেক শান্তি তৈরি হয়।

৫. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান

মনের আরোগ্য পেতে প্রকৃতির মতো বড় ওষুধ আর নেই। আর তাই প্রকৃতির কাছে যান। সমুদ্র, পাহাড় বা ধারের কাছের কোনো পার্ক যেকোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। এটি আপনাকে একাকিত্ব দূর করতে কাজ করবে।

৬. পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন

সেসব বন্ধুদের কাছে যান, যারা আসলেই আপনার জন্য সহযোগী, আপনার প্রাণের বন্ধু। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য চান আপনাকে এই যন্ত্রণা থেকে বের করে আনতে।

৭. গান শুনুন

প্রকৃতি যেমন মানুষকে আরোগ্য করে, তেমনি সঙ্গীতও মানুষকে শান্তি দেয়, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই পছন্দের গান শুনুন বা শিথিল করে এমন সঙ্গীত শুনতে পারেন।

আরো জানুন:

SHOWKATBD on Google News




ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ : মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যে সব জায়গায় সফর করেছিল তা বেশিভাগই মুসলিম অধ্যুষিত ছিল। ইবনে বতুতা ‘আর রিহলা’ নামক গ্রন্থে তার ভ্রমণকাহিনীগুলো লিপিবদ্ধ করেন। রিহলা একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ ভ্রমণকাহিনী। তার এই বইয়ের সম্পাদক ছিলেন ইবনে জুজারী। ‘আর রিহলা’ গ্রন্থে বতুতার বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা পাওয়া যায়। তার ঐতিহাসিক বইয়ে তৎকালীন বাংলার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক অবস্থার সম্পর্কে জানা যায়।

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ :

ইবনে জুজারী লিখেছেন, ‘১৩০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইবনে বতুতা তানজিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরলোকগমন করেন ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দ অথবা পরবর্তী বছরে।’ ইবনে বতুতার প্রকৃত নাম ছিল শেখ আবু মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বতুতা। ইবনে বতুতা ছিল তার বংশগত পদবী যা আজও মরক্কোর প্রচলিত দেখা যায়৷ এ সম্প্রাদায়ের নাম প্রথমে স্থান পায় সাইরেনাইকা ও মিসরের সীমান্তবর্তী একটি যাযাবর জাতি হিসেবে। তাদের এ বংশ কয়েক পুরুষ পূর্ব থেকেই তানজিয়ারে বসবাস করছিল এবং তারা লুবাতার সম্প্রাদায় ভুক্ত ছিল।

ইবনে বতুতা নিজে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন এবং ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি বিশ্বভ্রমণের জন্য বের হয়ে যায় এবং ২২ বছর বয়সে মক্কায় হজ্ব পালন করেন। জানা যায় তিনি ১৩২৫-১৩৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে বিশ্ব ভ্রমণ করেন। তিনি ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে আসেন এবং সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের অধীনে দীর্ঘ প্রায় আট বছর কাজীর পদে নিয়োজিত ছিলেন। এরপরেই তিনি ১৩৪৫ অথবা ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফখর উদ্দীন মোবারক শাহের শাসনকালে বাংলায় আসেন।

ইবনে বতুতা তার ‘আর রিহলা’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘দীর্ঘ তেতাল্লিশ রাত্রি সমুদ্রের বুকে কাটিয়ে আমরা বাঙ্গালা (বাংলা) দেশে পৌঁছলাম। এ বিশাল দেশে প্রচুর চাল উৎপন্ন হয়। সারা পৃথিবীতে আমি এমন কোনো দেশ দেখিনি যেখানে জিনিসপত্রের মূল্য বাংলার চেয়ে কম। পক্ষান্তরে এ একটি অন্ধকার দেশ। খোরাসানের লোকেরা বলে, বাংলা ভাল জিনিসে পরিপূর্ণ একটি নরক (A Hell Full Of Good Things)।

ইবনে বতুতা জানান, ‘এক দেরহামে আটটি মোটাতাজা মুরগি, দুই দেরহামে একটি মোটাতাজা ভেড়া এখানে বিক্রি হতে আমি দেখেছি। তাছাড়া ত্রিশ হাত লম্বা উৎকৃষ্ট ধরনের সূতী কাপড় মাত্র দুই দিনারে এখানে বিক্রি হতে দেখেছি। এক স্বর্ণ দিনারে অর্থাৎ মরক্কোর আড়াই স্বর্ণ দিনারে এখানে সুন্দরী ত্রুীতদাসী বালিকা বিক্রি হয়। সমুদ্রোপকুলে আমরা যে বৃহৎ শহরে প্রবেশ করি তার নাম সাদকাওয়ান।”

ইবনে বতুতা দক্ষিণ ভারত থেকে সমুদ্র পথে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি সদকাওয়ান নামক জায়গায় পদার্পণ করেছিলেন। তার গ্রন্থ ‘আর রিহলা’র মতে বিশেষজ্ঞরা সদকাওয়ান জায়গাটিকে চট্টগ্রাম বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, বাংলার আবহাওয়া আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার মানুষের জন্য ছিল প্রচন্ড প্রতিকূল। তার কারণ বৃষ্টির পানি ও শীতের কুয়াশা এখানে অসহনীয়। তার উপর এই অঞ্চলে রয়েছে নদীর প্রাধান্য। এই জন্য সেই সময় বাংলায় আসাকে অনেকেই ভয় করতো অথচ বাংলার ভূমি ছিল উর্বর। ফলে বাংলাকে ‘দোজখ-ই-পুর-নিয়ামত’ বা ভাল জিনিসে পরিপূর্ণ একটি নরক (A Hell Full Of Good Things) বলার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা এইসব মনে করেন। ইবনে বতুতার বর্ণনায় পাওয়া যায় মাত্র ১ দিরহামে ৮ টি মোটাতাজা মুরগি এবং ২ দিরহামে ১টি মোটাতাজা ভেড়া পাওয়া যেত। ইবনে বতুতার আশুরা নামে এক সুন্দরী ক্রীতদাসী বালিকা ক্রয় করেন এবং তার এক সঙ্গী লুলু (মুক্তা) নামে অল্প বয়সী দাসী কিনার কথাও তার বর্ণনায় পাওয়া যায়।

ইবনে বতুতা যখন বাংলায় আসেন তখন বাংলার শাসক ছিল ফখরউদ্দীন। শাসনকর্তা হিসেবে তিনি উৎকৃষ্ট ছিলেন। ফখরউদ্দীন দরবেশ ও সুফিদের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রদর্শন করতেন। ফখরউদ্দীন দিল্লির সুলতানের আনুগত ছিলেন না। কারণ দিল্লির সুলতান তার এক পুত্রকে কারারুদ্ধ করেন এবং সিংহাসন ও রাজত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্তে হন। ইবনে বতুতা সাদকাওয়ান (চট্টগ্রাম) থেকে কামারু পর্বতের দিকে রওনা হন। সেখান থেকে কামারুর পথ ছিল এক মাসের। ইবনে বতুতা কামারু নামক যে স্থানটি পরিদর্শন করেন সেটি সম্ভবত ছিল খাসিয়া, জৈন্তিয়া ও ত্রিপুরার পাহাড় বেষ্টিত আসামের অন্তর্গত শ্রীহট্ট (সিলেট)। ইবনে বতুতার বাংলাদেশে আসার মূল উদ্দ্যেশ ছিল সিলেটের শেখ জালালুদ্দিন নামক এক প্রসিদ্ধ ধর্মপ্রাণ সাধু ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করা। জালালুদ্দিনের বাসস্থান থেকে দুইদিনের পথ দূরে থাকতেই ইবনে বতুতা শেখের দুইজন শিষ্যের সাথে দেখা হয়। শেখ জালালুদ্দিন তার শিষ্যদের ইবনে বতুতাকে অভর্থনা জানানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ইবনে বতুতা তার সম্পর্কে কোনো কিছুই জালালুদ্দিনকে আগে থেকে জ্ঞাত করেননি। তবুও শেখ জালালুদ্দিন তার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। এ থেকেই ইবনে বতুতার শেখ জালালুদ্দিনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ব্যাপারে ইঙ্গিত পান।

ইবনে বতুতা শেখ জালালুদ্দিনের কাছে তিনদিনের আতিথ্যে ছিলেন। ইবনে বতুতার শেখ জালালুদ্দিনের একটি ছাগলের লোমের তৈরি আলখেল্লা পছন্দ হয়। ইবনে বতুতা তার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘শেখের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম, তিনি ছাগলের লোমের তৈরি আলখাল্লা পরিধান করে আছেন। আলখাল্লাটি দেখে আমার পছন্দ হলে মনে মনে বললাম, আহা, শেখ যদি এটি আমাকে দান করতেন। পরে তার কাছে যখন বিদায় নিতে গেলাম, তিনি উঠে গুহার এক কোণে গিয়ে আলখাল্লাটি খুলে এসে আমার গায়ে পরিয়ে দিলেন এবং নিজের মাথার গোলটুপিটিও আমার মাথায় দিলেন। নিজে এলেন তালি লাগানো একটি পোষাকে।’

ইবনে বতুতা শেখের শিষ্যদের কাছ থেকে জানতে পেরে ছিলেন এই আলখাল্লা শুধু তিনি আসলেই শেখ পরিধান করতেন। শেখ জালালুদ্দিন তার আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমেই জেনে গিয়েছিলেন মরক্কোর এক পর্যটক এই আলখাল্লা চেয়ে নিবেন এবং সেই পর্যটকের থেকে এক বিধর্মী সুলতান সেই আলখাল্লাটি নিবেন। পরিশেষে সেই বিধর্মী সুলতান শেখের ভাই বোরাউদ্দিনকে সেই আলখাল্লাটি দিবেন। শেখ জালালুদ্দিন এই আলখাল্লাটি মূলত তার ভাই সাঘার্জের বোরাউদ্দিনের জন্য তৈরি করেছিল। ইবনে বতুতা ‘আর রিহলা’ গ্রন্থে এইসব বিবরণের কিছু কিছু বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন।

শেখ জালালুদ্দিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইবনে বতুতা আন-নহর উল-আজরাক (মেঘনা নদী) মধ্যে পনেরো দিনের পথ পাড়ি দিয়ে সোনারকাওয়ানে (সোনারগাঁও) পৌঁছান। এই পনেরো দিনের নদী পথের যাত্রায় বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছিল। তার এই যাত্রাপথে নদীর দুইধারে ফলের বাগান ও গ্রামাগুলো দেখতে পেয়েছিল, যা তিনি বাজারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার তুলনা করেছেন। অসংখ্য নৌকা এই নদীপথে যাত্রা করতো, কিন্তু যখন একটি নৌকা অপর নৌকার সঙ্গে দেখা হতো তখন উভয়ে নিজেদের ঢাক পিটিয়ে অভিবাদন জানাত। সুলতান ফখরউদ্দীন সুফি দরবেশদের চলাচলের জন্য এই নদীতে কোনো ধরণের কর নিতেন না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ফলজ উপাদান এবং অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে আন-নহর উল-আজরাক অর্থাৎ মেঘনা নদীকে তিনি মিশরের নীল নদের সাথে তুলনা করেছিলেন।

মধ্যযুগের বাংলা কত সমৃদ্ধ ছিল তা প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমণ বিবরণে স্পষ্ট। তা থেকে বাংলার অতীত গৌরব সম্পর্কেও আঁচ করা যায়। তদুপরি, বাংলার এই ঐশ্বর্যশালী অবস্থানের কারণেই যে পরবর্তীতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো এখানে হানা দিয়েছিল ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ আর্টিকেল থেকে তা অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না।

আরো জানুন:

ঢাকা ‘র নাম করনের একটুসখানি ইতিহাস

কোথা থেকে এলো এই সুস্বাদু বিরিয়ানি

জানুন জিন্স তৈরীর ইতিহাস




মোবাইল আবিষকারের নেপথ্যে

প্রিথিবিতে এই পর্যন্ত আবিষক্রিত যন্ত্রগুলোর মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো এত বিস্তার আর কোনো যন্ত্র বা আইটেমের বেলায় ঘটেনি। এটি এখন দৈনন্দিন জিবনে নিত্য প্রয়োজনিয় ও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। এই মোবাইল ফোন ছাড়া যেনো এখন একটি মিনিটও কল্পনা করা যায়না। শিক্ষাঙ্গন, ব্যবসা-বানিজ্য থেকে শুরু করে বাসা বাড়ির নিত্য নৈমিত্তিক ব্যবহারে এর কদর বর্ননা করে শেষ করার মতো নয়। যে যন্ত্রটির এত্তো এত্তো কদর তাই আসুন জানি এই মোবাইল আবিষকারের নেপথ্যে ‘ র কাহিনি।

পাচ দশক পুর্বের মোবাইল ফোনের তুলনায় আজকের এক একটি স্মার্টফোন যেনো এক একটি সুপার কম্পিউটার। এই মিনি মোবাইল নামক সুপার কম্পিউটারের ইতিহাস যারা জানেন না, তাদের জন্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

মোবাইল আবিষকারের নেপথ্যে :

ডিক ট্রেসি নামের আমেরিকান একটি কমিকের চরিত্রগুলো হাত ঘড়ির সাহায্যে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতো। সেই কমিকের চরিত্র থেকেই প্রথমবার মার্টিন কুপার এর মাথায় মোবাইল তৈরির চিন্তাটা আসে এবং এক পর্যায়ে ২০-৩০ জন টেকনিশিয়ান দলের সমন্বয়ে মাত্র ৩০ দিনেই তৈরি করে ফেলেন এই মোবাইল ।

কে এই মার্টিন কুপার :

মার্টিন কুপার, একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম তৈরি করেন তারবিহিন এই মোবাইল যন্ত্রটি। তাই মার্টিন কুপার কে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়ـ। বর্তমানে বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম শির্ষস্থানিয় আবিষকারক তিনি। কুপার যখন মোবাইল আবিষকার করেন তখন তিনি ছোটটো টেলিকম কোম্পানি MOTOROLA তে কাজ করতেন।

তার স্বপ্ন ছিল এমন একদিন দেখার, যখন সবার হাতে তারবিহিন নিজস্ব একটি ফোন থাকবে। আর সেই ফোন দিয়ে যে কোনো সময় একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে। অফিস বা বাড়িতে তারের জঞ্জালে তৈরি টেলিফোন থেকে বের হয়ে হাতে হাতে ফোন দিয়ে চলবে অফিস আদালত, বাসা বাড়ির একে অন্যের সাথে যোগাযোগ । মার্টিন কুপার তার জিবদ্দশাতেই দেখে যেতে পারলেন তার স্বপ্নের প্রতিফলন ।

প্রথম মোবাইল ফোনের উপস্থাপন :

1973 সালের এপ্রিল মাস, নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের মডেল উপস্থাপন করেন কুপার। প্রথম তৈরি মোবাইলটি ছিলো ১০ ইঞ্চি লম্বা, চওড়া ছিলো ২ ইঞ্চি আর মোটা ছিলো প্রায় ৪ ইঞ্চি। আর ওজন ছিলো এক কেজিরও বেশি। মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই ফোনের চ্যাটারি শেষ হয়ে যেতো। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করছিলো।

মোবইল দিয়ে প্রথম ফোন :

মোবইল দিয়ে প্রথম ফোন করেছিলেন এই মার্টিন কুপার।  শুধু আমেরিকা নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো টেলিকম কোম্পানি ছিল  এ.টি অ্যান্ড টি (AT&T) । মার্টিন কুপার নিউইয়র্কের ৬ষ্ঠ অ্যাভিনিউতে হাটতে হাটতে এ.টি অ্যান্ড টি (AT&T) কোম্পানিতে কর্মরত তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে কলটি করেছিলেন।

বাজারে আসা প্রথম মোবাইল :

১৯৮৩ সালে প্রথম বারের মতো বাজারে আসে মটোরোলা ডাইনা টিএসি (DynaTAC 8000x) মডেলের ফোনটি। বাজারে আসা প্রথম মোবাইল ফোনের দাম ছিল ৪ হাজার ডলার। এবং তখন কল রেট ছিল অনেক বেশি। সেই সময়ে মোবাইল ফোনকে বড়লোকেরা খেলনা হিসেবে ব্যবহার করতো। সেই ফোনটি অনেকের কাছে ইটের মতো, আবার কারো কাছে জুতার মতো দেখতে মনে হতো। তাই এটাকে বলতো দি ব্রিক (The Brick) বা  সু ফোন (Shoe Phone)। মার্টিন কুপার এর নাম দিয়েছিলেন ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল অ্যারিয়া কভারেজ; সংক্ষেপে (ডায়নাট্যাক)

সেই মোবাইল ফোন যে আজ মানুষের জিবনে এত গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠবে, তা হয়তো কেউ উপলব্ধিও করেনি !

মোবাইল ফোনের বর্তমান অবস্থা :

আজকের আমাদের হাতের এই মোবাইল ফোনে কিইবা নেই ? রেডিয়ো, টিভি, মিউজিক প্লেয়ার, ক্যামেরা, ইন্টারনেট সব বিদ্যমান। বর্তমানে প্রিথিবির মোট জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশের বেশি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে এবং ৫১১ কোটির বেশি মানুষ নিয়মিত শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বানিজ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সেই মোটোরোলো দিয়ে শুরু হলেও বর্তমান বিশ্বে স্মার্টফোন বাজার অন্য আরো মাত্র দশটি কোম্পানি  ৮৬ শতাংশ দখল করে রেখেছে ।

ব্যবহার :

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা যেমন প্রিথিবির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজে যোগাযোগ করতে পারছি; মার্কিন মহাকাশ গবেষনা প্রতিষ্ঠান নাসার উদ্ভাবিত ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রিথিবি থেকে সৌরজগতের বাইরে পর্যন্তও যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

এই প্রযুক্তি দিয়েই ১৯৭৭ সালে নাসা ভয়েজার মিশন পরিচালনা করেছিল। এখনো পর্যন্ত প্রিথিবি থেকে সবচেয়ে দুরে অবস্থান করা মানুষের তৈরি বস্তু হলো ভয়েজার-১। উৎক্ষেপণের ৪৪ বছর পরেও এখনো পর্যন্ত ভয়েজার সক্রিয় রয়েছে।

একুশ শতকে মোবাইল :

একুশ শতকে এসে মোবাইল ফোন আমাদের জিবন-যাপন পদ্ধতি আমুল পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন মোবাইল ছাড়া আমাদের এক মুহুর্তও চলে না । ভবিষ্যতে স্মার্টফোনে আরও কোন কোন চমকপ্রদ প্রযুক্তি যুক্ত হয়; তাই এখন দেখার অপেক্ষায়।

অবাক প্রিথিবির আরো কিছু :




অবাঙালি নাগরিক বিহারি ’দের ইতিহাস..

আজ বাংলাদেশের অবাঙালি নাগরিক বিহারি ’দের সম্পর্কে আপনাকে কিছু তথ্য জানাবো। যা হয়ত এর আগে আপনি কখনো শুনেননি বা আগে কখনোই জানতেন না।

অবাঙালি নাগরিক বিহারি ’দের পরিচয় :

ভারতের পুর্বরাজ্য বিহার থেকে বাংলাদেশে আসা মুসলমানদের আমাদের দেশে ‘বিহারি’ নামে ডাকা হয় ৷ তারা মুলত অবাঙালি। বিহার রাজ্যের উত্তরে নেপাল, পশ্চিমে উত্তর প্রদেশ, দক্ষিণে ঝাড়খণ্ড আর পুবে পশ্চিমবঙ্গ। বিহার বৌদ্ব আর জৈন ধর্মের জন্মভুমি হলেও এতিহ্যগতভাবে হিন্দু-সংস্কৃতি প্রদান রাজ্য।

বাংলাদেশে বিহারিদের আগমন :

ভারত বিভক্তির আগে ও পরে ১৯৪৭ সালে বিহার রাজ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে সেখান থেকে বিপুল পরিমান মুসলিম তৎকালিন পাকিস্তানে চলে আসে। বহুজাতিক পাকিস্তানের তদানিন্তন সরকার এদের ‘মোহাজির’ হিসেবে পুর্ববাংলায় পুনর্বাসিত করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন এদের অধিকাংশই ‘অখণ্ড পাকিস্তানের’ পক্ষ অবলম্বন করে।

বিহারিদের প্রত্যাবর্তন:

স্বাধিনতার পর বিহারিদের কিছু অংশ পাকিস্তানে ফিরে গেলেও বেশির ভাগ বিহারি বাংলাদেশেই থেকে যায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিহারিদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত বলে আদেশ দেয়। কিন্তু পাচ লাখ বিহারী পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন বেছে নিয়েছিল। কিছু প্রত্যাবর্তন রেডক্রসের মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে বাস্তবায়িতও হয়েছিল । কিন্তু ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশে থাকা বাকি বিহারিদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বিকার করায় থেমে যায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া। ফলে তখন থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলে বিহারি ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে এই বিহারিরা।

বিহারিদের ক্যাম্প :

বর্তমানে বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা ১১৬টি ক্যাম্পে এই জনগোষ্ঠির কয়েক লক্ষ লোক বসবাস করে আসছে। অনেকে আবার বাংলাদেশের মুল সমাজের সাথে একিভুত হয়ে ব্যবসা-বানিজ্যে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং ২০০৮ এর ১৯ মে, ঢাকা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ি দেড় লাখ বিহারি জনগোষ্ঠি বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার ভোগ করে আসছেন। যারা যুদ্ধের পর জন্ম নিয়েছিল তারাও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও ভোটের অধিকার অর্জন করে।

পাসপোর্ট হয়না বিহারিদের :

সুপ্রিম কোর্টের ২০০৮ সালের একটি আদেশ অনুযায়ি, বিহারিদের জাতিয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও তা হয়নি ৷ বেশিরভাগ বিহারি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যোগ্য নন ৷ কারন তারা অস্থায়ি ক্যাম্পে বাস করেন ৷ বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ি, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবদেনকারিকে তার স্থায়ি ঠিকানা সরবরাহ করতে হয় ৷

বিহারিদের ভাষা :

নিজ জনগোষ্ঠির মানুষের সাথে তারা বিহারি ভাষায় কথা বলে। বিহারী ক্যাম্পগুলোর সাইনবোর্ডে ইংরেজি ও বাংলার পাশাপাশি উর্দুভাষা ব্যবহার করে ‘আটকেপড়া পাকিস্তানি’ কথাটি উল্লেখ থাকায় অনেকেই মনে করেন, তারা উর্দু ভাষাভাষি বা উর্দুই তাদের ভাষা । এমনকি উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও হরহামেশাই তাদের উর্দূভাষি হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু আসলে বিহারিদের মাতৃভাষা উর্দু নয়। বিহারের ভাষাতেই তারা কথা বলে। যা মুলত হিন্দি ভাষার একটি আঞ্চলিক রূপ। তবে পাকিস্তান আমল থেকেই তারা দাপ্তরিক লেখালেখি উর্দু হরফেই করে আসছেন। যারা উর্দু ভাষা জানেন, তারা খুব সহজে পার্থক্যটা বুঝতে পারলেও সাধারণ বাঙালিরা এদের উর্দুভাষি মনে করে ভুল করে থাকে।

বিহারিদের ধর্মিয় বৈচিত্র আছে :

অনেকেই মনে করে বিহারিরা শিয়া মতাবলম্বি মুসলিম । বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই সুন্নি মুসলিম। তবে শিয়া সম্প্রদায়ের মতো তাদেরও ইমামবারা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পবিত্র আশুরার দিনে তারাও ‘তাজিয়া মিছিল’ বের করে থাকেন। সেখানে ইমাম হাসান-হোসাইনের প্রতিকি মাজার ও লাল-সবুজ ঝাণ্ডা ছাড়াও থাকে দুন্দাবি ঢাক বা ড্রামের তালে আগুন, তলোয়ার ও লাঠির খেলা করে থাকে ।

অন্যদিকে শিয়া মুসলিমরা এইদিনে বের করেন মাতমি জুলুস বা জুলুসে আযা (শোকের পদযাত্রা), যাকে বাঙালিরা ‘তাজিয়া মিছিল’ বলে ভুল করে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বিহারি :

বাংলাদেশে বসবাসকারি বিহারি জনগোষ্টি যে শুধু ‍মুসলিম সংস্কৃতির ধারক বা বাহক, এমন ধারনটিও আবার সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য হলো, তাদের মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠিও রয়েছে যারা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় মুসলিম প্রতিবেশিদের সাথে বিহার থেকে এখানে পাড়ি জমিয়ে ছিলো। এদের বেশিরভাগই আমাদের দেশে মেথর বা সুইপার হিসেবে জিবিকা নির্বাহ করে থাকে। চট্টগ্রামের ঝাউতলায় হিন্দু বিহারিদের অনেকে বসবাস করে, যারা দুর্গাপুজায় চাদাও তুলে থাকে।

সুফিগান বা কাওয়ালি গানে বিহারিদের দুর্বলতা :

বিহারিদের মধ্যে বিশেষ ধারার সুফিগানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে, যা ‘কাওয়ালি’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ অনেক টাকা খরচ করে বাসায় কাওয়ালির জলসা আয়োজন করে। কাওয়ালদেরকে বকশিশ হিসেবে অনেকে টাকাও ছুড়ে দেয়।

বিহারিদের প্রিয় খাবার :

বিহারিদের প্রিয় খাবারগুলোর তালিকায় আছে বিরিয়ানি, টিক্কা, চাপ। এই খাবারগুলো তৈরিতেও তারা বেশ দক্ষ। বয়স্কদের বেশিরভাগই জর্দা দিয়ে পান খেতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে ঢাকার মিরপুরে বেনারসি পল্লির তাতি ও কাপড় ব্যবসায়ি বিহারিদের বেশ পানের নেশা।

বিহারিদের সবাই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধি ছিলেন না :

ষাটের দশকে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সময় এদের অধিকাংশই ‘অখণ্ড পাকিস্তানের’ কথা বলে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই অনেক বিহারি বাঙালিদের সাথে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েন। অনেকে একাত্তরে হানাদার ও রাজাকারদের সহযোগিতা করেন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের শিকার হন বলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়। তবে এর মানে এই নয় যে, বিহারিদের সবাই একাত্তরে স্বাধিনতা বিরোধি ছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একটি দলিল থেকে জানা যায়, ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে তৎকালিন ছাত্র ইউনিয়নের ব্যানারে কিছু বিহারি ছাত্রদেরও অংশগ্রহন ছিল।

অবাঙালি নাগরিক  বিহারি মুক্তিযোদ্ধা :

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছেন এমন এক বিহারি ছিলেন সৈয়দ খান। ১৯৭১ সালে চিলমারি বিওপির বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে মুক্তিবাহিনির একজন যোদ্ধা হিসেবে ৬ নং সেক্টরে লড়াই করেন। দুটি যুদ্ধে বিরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে বির প্রতিক খেতাব দেওয়া হয়। (সূত্র : প্রথম আলো, তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না, ২৪ মে ২০১১)

বিহারি এক শহিদ মুক্তিযোদ্ধার নাম টিএম আলি। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। যুদ্ধে শত্রুর গোলার আঘাতে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রান হারান এই মুক্তিযোদ্ধা। বির প্রতিক উপাধি দেয়া হয় তাকে। (সূত্র : কালের কণ্ঠ, সুবেদার টি এম আলী লাল সালাম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫)

জিবন, জিবিকা ও শিক্ষা :

বিহারিদের ভাষ্য অনুযায়ি, ক্যাম্পগুলোর ছোট ছোট কক্ষে তাদের মানবেতর জিবনযাপন করতে হয় ৷ একটু বৃষ্টি হলেই সেখানে নানান ধরনের সমস্যা মোকাবেলা কবতে হয় তাদের ৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তারা ভালো চাকরিও পান না ৷

বিহারিদের পাচ থেকে ১০ শতাংশ শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পায়ফলে বিহারিরা নরসুন্দর, কসাই, রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, অটোমোবাইল মেকানিকের মত ছোট ছোট কাজ করে উপার্জন করতে বাধ্য হয় ৷ বিহারি পরিবারের শিশুদেরও তাড়াতাড়ি কাজ যোগ দিতে হয়, কারণ সন্তানদের শিক্ষিত করার মত আর্থিক সক্ষমতা তাদের নেই ৷




বঙ্গভুমি আন্দোলন ও এর নেপথ্যে

বঙ্গভুমি আন্দোলন : বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পরবঙ্গভূমি আন্দোলননামে একটি আন্দোলন হয়েছিল ? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কালিদাস বৈদ্য চিত্তরঞ্জন সুতার। তাদের স্বাধিন বঙ্গভূমি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু বাংলা মুসলমান বাংলা নামে দুই টুকরা করে ফেলা।

এর জন্য তিনি মূলত ভারতে যাওয়া শরণার্থী যুবকদের নিয়ে বঙ্গসেনা নামে একটি ব্যক্তিগত বাহিনি গড়ে তোলেন। এই বাহিনি মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গে মিছিলমিটিং করত।এ মনকি বেনাপোল সিমান্তের ওপারে ভারতের হরিদাসপুরে এসেও হৈচৈ করত।

কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ১৯৭০এর নির্বাচনের আগে চিত্তরঞ্জন সুতার, ডা. কালিদাস বৈদ্য, মলয় কুমার ভৌমিকসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে একটি হিন্দু সম্মেলন ডেকে মূলত তফসিলি হিন্দুদের নিয়ে জাতিয় গণমুক্তি দল নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শুধু হিন্দুদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা অদৌ সঙ্গত হবে কিনা তা নিয়ে সম্মেলনে তুমুল বিতর্ক হয়। বিশিষ্ট রাজনিতিবিদ বিরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপ্লবি অতিশ রায়, অ্যাডভোকেট সুধির হাজরা প্রমুখ হিন্দু দল গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

১৯৭০এর নির্বাচনে জাতিয় গণমুক্তি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে প্রার্থী দিয়ে একটাতেও জিততে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃশ্যত এই দলের তেমনকোনো ভূমিকা ছিল না। কালিদাস বৈদ্যবাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিবনামেএকটি বইও লিখে ফেলেছিলেন। কালীদাস বৈদ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। একই সঙ্গে তিনি ঘৃণা করতেন ইসলাম ধর্মকে এবং এই ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের।

তিনি তার বইয়ে কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তা হিটলারের প্রচারমন্ত্রি গোয়েবলসকেও হার মানায়।কোলকাতার দৈনিক আজকাল ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমিকস্বাধীন বঙ্গভূমিপ্রতিষ্ঠার ভারতীয় চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করে।

ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক ধারণালাভের জন্যে এই রিপোর্টই যথেষ্ট।স্বাধিন বঙ্গভূমিশির্ষক রঞ্জিত শূরএর লেখা রিপোর্টটি এইঃ “… বাংলাদেশের দুটুকরো করে হিন্দুদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য জোরতৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ২০,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়েস্বাধীনবঙ্গভূমিগঠনের উদ্যোগ আয়োজন চলছে অনেকদিন ধরে। এতদিন ব্যাপারটা সামান্য কিছুলোকের উদ্ভট চিন্তা বা প্রলাপ বলেই মনে হত। কিন্তু সম্প্রতি দেশিবিদেশি নানা শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে ব্যাপারটা বেশ দানা বেধে উঠেছে।

ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে স্বাধিন বঙ্গভূমিসরকার। রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত। রাজধানী সামন্তনগর (মুক্তি ভবন) সবুজ গৈরিক রঙের মাঝে সূর্যের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে জাতীয় পতাকা। জাতীয় সঙ্গীতঃ ধনধান্যে পুষ্পে ধরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। সিমানাঃ উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের ছয়টি জেলাঃ খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং পটুয়াখালী। এই ছয়টি জেলা নিয়েই ২৫মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয়েছে তথাকথিতস্বাধীন বঙ্গভূমিরাষ্ট্র।

স্বাধিন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগই চলছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গ থেকে। নেপথ্য নায়করা সবাই জানেন এই রাজ্যেই বাংলাদেশ সিমান্ত বরাবর বিভিন্ন জেলা২৪ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায়চলছে ব্যাপক তৎপরতা। অভিযোগ, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্ত দুই বাংলাদেশি নেতা কাদের (বাঘা) সিদ্দিকি এবং চিত্তরঞ্জন ছুতোর মদত দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রবক্তাদের যুক্তি বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জিবন সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষনার পর দেশের হিন্দুরা পরাধিন জিবন যাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রবঙ্গভূমি।

বঙ্গভুমি আন্দোলন এর আনুষ্ঠানিক সংগঠক নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এই সংগঠনটির জন্ম হয়। জন্ম উপলক্ষে ১৫৯ গরফা মেইন রোডের সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন একজন আইএএস অফিসার অমিতাভ ঘোষ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ কালিদাস বৈদ্য (এমবিবিএস ডাক্তার), সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নিহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রি) এবং শরৎ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রি)

অন্য সূত্রের খবর চিত্তরঞ্জন ছুতোরও সভায় হাজির ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোল পার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যেহোমল্যাণ্ডদাবি করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভাসমাবেশ হত। এর মধ্যেই নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘে ভাঙন ধরে। ১৯৭৯ সালে হয় দুটুকরো। ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বাধিন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ গরফা মেইন রোড। সুব্রত চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধিন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ ৮০ ধনদেবী মান্না রোড, নারকেল ডাঙ্গা।

এদের থেকে বেরিয়ে আর একটি অংশ তৈরী করে বঙ্গদেশ মুক্তিপরিষদ। ঠিকানা মছলন্দপুর। আরও একটি অংশ তৈরি করে সংখ্যালঘু কল্যান পরিষদ। চলে চিত্ত ছুতোরের ভবানি পুরের বাড়ি থেকে। পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপান উতোরের মধ্যেই ঢিমেতালে চলছিলবঙ্গভূমি পক্ষে প্রচার। কিন্তু ১৯৮২ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয়সৈন্য বাহিনীবঙ্গসেনা। সৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য। সুব্রত চ্যাটার্জীর গ্রুপ ঘোষণা না মানলেও বঙ্গভূমি দখলের জন্য বছরেই তৈরি করে অ্যাকশন ফোরামবাংলা লিবারেশন অর্গানাইজেশন (বিএলও) আরও পরে বঙ্গদেশমুক্তি পরিষদ তৈরী করেসৈন্য বাহিনীলিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি) নেতারামেশ্বর পাশোয়ান একজন বিহারী, থাকেন গরফার রামলাল বাজারে।

এরপর বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝেই বঙ্গভূমি দখলের ডাক দেয়। সিমান্ত অভিযান করে। কিন্তু কখনই ব্যাপারটা এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।৮৮ এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধিরে ধিরে পাল্টাতে শুরু করে। বছর ২২ জুলাইবঙ্গসেনাএকটি সম্মেলন করে। এরপরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচী। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বরবঙ্গভূমিদখলের জন্য বনগাঁ সীমান্ত অভিযানে /১০হাজার লোক হয়। ২২২৩ জানুয়ারী বনগাঁ থেকে বঙ্গসেনা মহড়া হয়। ২৪ মার্চ ২৫ মার্চ হয় আবার বঙ্গভূমি অভিযান। এপ্রিল রাজীব গান্ধীর কলকাতা আগমন উপলক্ষে সিধুকান ডহরে বিএলও এক জমায়েতের ডাক দেয়। প্রত্যেকটা কর্মসূচীতে ভাল লোক জড়ো হয়। বাংলাদেশে গেল গেল রব উঠে।

এপারের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করে খবর প্রচার করে। দেশেবিদেশেবঙ্গভূমি দাবি এবং দাবিদার নিয়েকমবেশী হৈচৈ শুরু হয়। আবার ২২ জুলাই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে বঙ্গভূমি দখলের জন্য। কালিদাস বৈদ্যের দাবি দিন এক লক্ষ লোক জমায়েত হবে। স্বাধিন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের আসল পরিচয় কি? কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? কে এই রাষ্ট্রপতিপার্থ সামন্ত? কি ভূমিকা নিচ্ছেন ভারত সরকার? এসব তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান চালাই তাদের কর্মস্থলগুলিতে। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলি ডাঃ কালিদাস বৈদ্য, সুব্রত চ্যাটার্জি, রামেশ্বর পাশোয়ার, কে পি বিশ্বাস, রাখাল মণ্ডল প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে।অনুসন্ধানের সময় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে চিত্ত ছুতোরের নাম। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি কিন্তু কিছুতেই দেখা করতে বা কথা বলতে রাজী হননি। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে, ‘স্বাধীনহিন্দুরাষ্ট্র তৈরীর চেষ্টা আজকের নয়। পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লু প্রিন্ট।

বঙ্গভূমি বঙ্গসেনাপুস্তিকায় ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বিকার করেছেন যে, ১৯৫২তে তারা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যান এবংসংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্ম তৎপরতাচালান।গোপনে স্বাধীনতা তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাওপ্রচার করেন। তিন যুবক হলেন কালিদাস বৈদ্য, চিত্তরঞ্জন ছুতোর এবং নীরদ মজুমদার (মৃত)বাংলাদেশে বেশ কিছু কাগজে লেখা হয়েছেবঙ্গভূমি আন্দোলন ভারতেরই তৈরী ৮৮ সালের জুলাই থেকেই বঙ্গভূমি আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাধতে শুরু করে। এটা কি নেহাৎই কাকতালীয়? ১৯৮২ সালে যখনস্বাধীন বঙ্গভূমি সরকারঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কাগজগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূলসুর ছিল, ইন্দিরার মদতেই এসব হচ্ছে। সাম্প্রতিকবঙ্গভূমিআন্দোলনের পেছনে নাকি ভারত সরকারের হাত আছে।

বঙ্গভুমি আন্দোলন এর প্রথম মূলহোতা ডাঃ কালিদাস বৈদ্য এবং রহস্যময় চরিত্র চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনেও ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুত ভারতীয় এজেন্ট হিসেবেই এই দুজন এবং নীরদ মজুমদার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন। চিত্তবাবু ওখানে রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য।

সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন। ডাঃ বৈদ্য এতটা পারেননি। পরবর্তীকালে দুজনের মধ্যে বিরোধও হয়। ডাঃ বৈদ্যভারত সরকারের সমর্থন হারান। কিন্তু মুজিব সরকারের ওপর প্রভাব খাটাবার জন্য চিত্ত ছুতারকে ভারত সরকার চিরকালই ব্যবহার করেছে। এখনও ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। অনেকেই বলে, তার সোভিয়েত কানেকশন নাকি প্রবল।

চিত্তবাবু ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোডের বিশাল বাড়িতে সপরিবারে অত্যন্ত বিলাসবহুল জিবনযাপন করেন। কোথা থেকে আসে টাকা? ভারত সরকার কেন তাকে জামাই আদরে পুষছেন? তার বসত বাড়িটাও দুর্ভেদ্যও। পাহারা দেন বেশ কিছু শক্ত সমর্থ যুবক। যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করত। বনগাঁ লাইনেবঙ্গভূমিসমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার যে, বাড়িটাইবঙ্গসেনা ঘাঁটি। ভারত সরকারের মদদের আরও প্রমাণ, রাজীব গান্ধীর বিবৃতি। তিনি একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে অনুপ্রবেশ। আকাশবাণী থেকেও একাধিকবার প্রচার হয়েছে। যেমন, ১৭ জানুয়ারীবঙ্গভূমিপন্থিরা বাংলাদেশ মিশন অভিযান করলে খবর আকাশবাণী প্রচার করে। ১৮ জানুয়ারী রাজীব গান্ধী অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। এছাড়াও বলা যায়, এতদিন ধরে বঙ্গভূমি জিগির চলছে, বারে বারে শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে লোক নিয়ে গিয়ে সীমান্তে গণ্ডগোল ছড়ানো হচ্ছে তীব্র সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হচ্ছে, ‘সৈন্যবাহিনীঘোষণা করছে, প্রতিবেশী দেশের এলাকা নিয়ে পাল্টা সরকার ঘোষিত হয়েছেতবুও পুলিশ তাদের কিছু বলে না কেন?

সীমান্তে সমাবেশ বা ওপারে ঢোকার চেষ্টা হলে পুলিশ তুলে নিয়ে কয়েকশগজ দূরে ছেড়ে দেয়। নেতাদের গ্রেফতারও করা হয় না। ভারত সরকারের মদদ না থাকলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ না থাকলে, এটা কি সম্ভব হত? ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ডাঃ বৈদ্যও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “মদদ নয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলতে পারেন। তবে মদদ দিতেই হবে। আমরা জমি প্রস্তুত করছি তিনি বলেন, “আমি ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কিভাবে রাখছি, কার মাধ্যমে রাখছি বলব না। আমার বক্তব্য ক্রমাগতই তাদের বোঝাবার চেষ্টাকরছি। সত্যিই যদি যথেষ্ট লোকজন জড় করতে পারি, তবে ভারত সরকারকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেই হবে।

আমার একটা সরকার আছে। সৈন্যবাহিনী আছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনীবঙ্গসেনানামেই ঢুকবে বাংলাদেশে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করছি কিভাবে? বঙ্গসেনা, বিএলও, বিএলটি সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি সেটা এরকমঃবঙ্গভূমিপন্থিরা চান বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক অত্যাচার চালাক। যাতে তারা দলে দলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে। শরণার্থীদের বোঝা বইতে হবে ভারত সরকারকে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে কিছু অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আরও একটা ইচ্ছা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক, ব্যাপক হিন্দু নিধন হোক, যাতে এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সেন্টিমেন্টকে খুশী করার জন্য ভারত সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। বঙ্গভূমি ফেরিওয়ালাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ ভারত সরকারকে বেছে নিতে হবে দুটোর একটা। তারা দেড় কোটি হিন্দু শরণার্থীর দায়িত্ব নেবেন, নাকিস্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র’ ‘বঙ্গভূমিতৈরী করে দেবেন, যে বঙ্গভূমি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিকিমের মত ভারতের অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হবে?

তথ্যসূত্র :

1. কালীদাস বৈদ্যের বই এবং আমাদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে, দৈনিক ইনকিলাব, এপ্রিল, ২০১৭ঈসায়ী

2. Hindu republic ‘born’ in Bangladesh, THE TIMES OF INDIA, Feb 4, 2003

3.স্বাধীন বঙ্গভূমি, (কোলকাতার) দৈনিক আজকাল, ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ২৪শে এপ্রিল(৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট)

4. আবুল আসাদ / একশবছরের রাজনীতি [ বাংলাদেশ কোঅপারেটিভ বুক সোসাইটিমে, ২০১৪




অবাক সময়..

অবাক সময়.. সময়, ধরা যায়না, ছোয়া, যায়না, বেধে রাখা যায়না, দেখাও যায়না – মহান সৃষ্টিকর্তার তৈরি এক আজব খেলা। সময় নিয়েই এই পৃথিবি, এই জীবন, এই আমি, এই তুমি, এই আমরা। আশ্চর্যবোধক এক শব্দ – সময়। অবাক সময়।

সময়ের গহবরে হারিয়ে গেছে ক্ষমতাধর রাজা বাদশা, প্রজা, যোদ্ধা, পন্ডিত, জ্ঞানি, বিজ্ঞানি, ভিখারি, আতুর, অন্ধ, সবাই, সবাই। স্মৃতি, সবি স্মৃতি, ইতিহাস। ভালো আর মন্দের। সময়ে ভালো কর্ম করা আজ ভালোর ইতিহাসে, আর খারাপেরা কুখ্যাতের খাতায়।

মোটা মোটা মলাটে আবদ্ধ আকিবুকিতে লিখা বইয়ের কথাগুলো আমাদের হারিয়ে যাওয়া সময়ের কথা বলে। হাসি আনন্দ, দুখ বেদনার কথা বলে, শৌর্য বির্যের কথা বলে, খ্যাতি, কুখ্যাতির কথা বলে।

সময় একটি শব্দ। সময়ের বিবর্তনে কি থেকে যে কিসের সৃষ্টির হয়, কে কখন কোথা থেকে কোথায় হারিয়ে যায় ? আমরা নিজেরাও জানিনা। এই আজকের পরে আসছে যে আগামিকাল তখন আমি কোথায় যাবো, কি হবে আমার এই অস্তিত্বের – কিছুই কি জানি ? এইতো মাত্র অল্প সময় পুর্বের কিছু ইতিহাস ..

জরাজির্ন আর কিছু লোকের সমন্বয়ে যে পোষ্ট অফিস ঘরে একটা চিঠি বা মানি অর্ডার আসার অপেক্ষায় তির্থের কাকের মত জনতা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো, সেই ঘর আজ পরিত্যাক্ত।

যেই ছেলে মহল্লার রাস্তার মোড়ে বন্ধুদের নিয়ে ফুকতো সিগারেটের পর সিগারেট, ছাড়ত অহংকারের ধোয়া, সে ছেলে এখন ক্যান্সারের রোগি হয়ে মহল্লার সবার কাছে দোয়া চায়।

মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়া দিতে না পারলে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিতেন যেই হাজিসাহেব নামের বাড়িওয়ালা তিনি আজ শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ব্যাংক নিলামের শিকার হয়ে।

যে শিক্ষক ক্লাসের সবচেয়ে অপছন্দের ছেলেটাকে অমানুষ বলে প্রতিদিন অপমান করতেন, সেই ছেলেটাই আজকে দায়িত্ব নিয়েছে শিক্ষকের সন্তানকে মানুষ বানানোর বৈশ্বিক চ্যালেন্জের।

ন্যায্যমূল্যে কেজি মোটা চাল কেনার জন্য যেই লোকটা কাঠফাটা রৌদ্রে ২০ জনের পিছনেলা ইনে দাঁড়িয়ে থাকতো দুইআড়াই ঘন্টা, আজ তার বাড়ির সামনে লোকজন লাইন ধরে বসে থাকে পেটভরে খেতে পাবে সেই আশায়

পূর্ব পুরুষ হতে প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে যারা আপনার বাড়িতে কাজ করে পেটের জ্বালা মিটাত তাদের সন্তানেরা আজ আপনার বংশধরদের ভিটে ছাড়া করার যুদ্ধে লিপ্ত।

সময় খুব নির্মম, খুব অমানবিক। অবাক সময়।

আবার মাঝে মাঝে খুব রোমান্টিক! কখন কি উপহার নিয়ে দাড়িয়ে যাবে সামনে, আপনি আমি টেরই পাাবোনা।

সময় সে কখনোই স্থির নয়। সে কখনোই আপনার আমার আমাদের নয়, সারাজীবন আপনার পক্ষেও নয় আবার বিপক্ষেও নয় ।

সুতরাং এই সময়ের সুযোগে দম্ভ, প্রতিশোধ পরায়ন, হতাশ কিংবা আনন্দিত হবার কিছুই নাই। নাই অহংকার করার মতো কিছু। এই সময় কারোরই সমান যায়না। আজ আপনি উপরে, কাল নিচে। আজ সুখে কাল দুখে। আজ বিত্ত বৈভরের আকাশ চুড়ায়, কাল পথের ভিখেরি।  আজ রাজা, কাল প্রজা। আজ শ্রেষ্ট যোদ্ধা, কাল দুর্বল অসহায় এক বৃদ্ধ।

হয়তো আপনি আমি আজ কষ্টে আছি.. এই কষ্টের সময়ও একদিন ফুরিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। শুধু ধৈর্য্য ধরে আমাদের সময়ের সৎ ব্যবহার করে যেতে হবে। সাথে গন্তব্যে পৌছানোর পরিশ্রম..




বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে আত্নত্যাগি : ক্ষুদিরাম

বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে আত্নত্যাগি ক্ষুদিরাম বসু । বৃটিশদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করা এক আত্নত্যাগির নাম। বৃটিশ বিরোধি আন্দোলেনের প্রথম এক বিপ্লবির নাম । যাকে ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে বর্বর বৃটিশরা।

ক্ষুদিরামের নামের নেপেথ্য :

জন্মস্থান মেদেনিপুর, হাবিবপুর গ্রামে। ক্ষুদিরামের জন্মের পর্বেই তার দুই ভাই মারা যায় খুব অল্প বয়সে। ক্ষুদিরাম জন্ম নিলে তৎকালিন প্রথা মোতাবেক তার জিবন রক্ষা পাবে এই বিশ্বাসে তার বাবা-মা তিন মুঠো খাদ্য শস্য বা ক্ষুদের বিনিময়ে ক্ষুদিরামের বড় বোনের কাছে ক্ষুদিরামকে দিয়ে দেন। ক্ষুদের বিনিময়ে দেয়া হয় বলে তার নাম হয় ক্ষুদিরাম।

ক্ষুদিরামের বিপ্লবি হয়ে ওঠা :

ভারতবর্ষে তখন বৃটিশদের অপশাসন চলমান । বৃটিশদের অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার জাতি। ভেতরে ভেতরে চলছে বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনের নিল নকশা । অনুশিলন সমিতি  বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনের এক গুপ্ত সংগঠন । যা দার্শনিক, সাধক ও দেশভক্ত শ্রি অরবিন্দু এবং স্বামি বিবেকানন্দ, সমাজ সংস্কারক ভগিনি নিবেদিতা’র পরিচালনায় পরিচালিত।  ১৯০২ ও ১৯০৩ সালে ক্ষুদিরাম দেশ প্রেমিক এই সব নেতাদের বক্তৃতা আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দেন “অনুশিলন সমিতি”-তে। পরবর্তিতে সাধক ও দেশভক্ত শ্রি অরবিন্দুর আপন ছোট ভাই বারিন্দ্র কুমার ঘোষের সংস্পর্শে তিনি আসেন। এবং মাত্র পনের বছর বয়সে ব্রিটিশদের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রচার পত্র বিলির অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বৃটিশদের হাতে আটক হন।  মাত্র ১৬ বছর বয়স কালে পুলিশ স্টেশন সহ চিহ্নিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনি বোমা পেতে রাখতেন।

ক্ষুদিরামের বোমা হামলা করার প্রেক্ষাপট :

সামরিক ও রাজনৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভারত খেকে ইউরোপে গিয়েছিলেন আরেক বিপ্লবি হেমচন্দ্র কানুনগো দাস। সে সময় প্যারিসে তার সাথে পরিচয় ঘটে নির্বাসনে থাকা রাশিয়ান বিপ্লবি নিকোলাস সাফ্রানস্কির।  সাফ্রানস্কি ছিলেন বোমার তৈরিতে অভিজ্ঞ।  হেমচন্দ্র তার কাছ থেকে বেমা তৈরির কৌশল আয়ত্ব করেন। এবং দেশে ফিরে এসে বারিন্দ্র ঘোষ এবং হেমচন্দ্র মিলে ঠিক করেন আলিপুর প্রেসিডেন্সি কোর্টের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ড এর উপর বোমা হামলার ।

কিংসফোর্ড ইতোমধ্যে স্বামি বিবেকানন্দের বড় ভাই, বিপ্লবি পত্রিকা ‘যুগান্তর‘-এর সম্পাদক ভুপেন্দ্র নাথ দত্তকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছিলেন। যুগান্তর পত্রিকাটি ব্রিটিশদের অপশাসন আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আরো লেখালিখি করলে ১৯০৮ সালে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আরো পাচটি গুরুতর অভিযোগ এনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বিপ্লবি সুশিল সেন সহ কিশোর বিপ্লবিদের বিরুদ্ধে কঠোর শারিরিক নির্যাতনের দণ্ডাদেশ দিয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেন।

বোমা হামলা : 

বারিন্দ্র ঘোষ এবং হেমচন্দ্র মিলে কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসু আর (বর্তমান) বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বিপ্লবি প্রফুল্ল চাকিকে। তারা তিন সপ্তাহ ধরে পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে কিংসফোর্ড এর গতিবিধির উপর নজর রাখেন। এক পর্যায়ে হামলার দিন নির্ধারন করা হয় ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ তারিখ।

এক পর্যায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এই ক্লাবে নিয়মিত আসতেন কিংসফোর্ড। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন কিংসফোর্ডের গাড়ির মত দেখতে একটা গাড়ি উপস্থিত হয় সেই ক্লাবে। সেই গাড়িতে ছিলেন ব্রিটিশ ব্যারিস্টার প্রিংগল কেনেডির স্ত্রি ও কন্যা । ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি বোমা ছুড়ে পালিয়ে যান। এতে ব্যারিস্টার প্রিংগল কেনেডির স্ত্রি ও কন্যা দুজনেরই মৃত্যু হয়।

ক্ষুদিরাম যেভাবে ধরা পড়েন :

পরবর্তিতে ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল দুজন দুদিকে রওনা দেন। ইতোমধ্যে সর্বত্র প্রচার হয়ে যায় এই ঘটনা। প্রফুল্ল চাকি সমস্তিপুর রেল স্টেশনে পৌছালে রেলওয়ে কর্মচারি ত্রিগুণ চরণ ঘোষ সব বুঝতে পেরে তাকে কলকাতা যাবার ব্যবস্থা করেন।

রেলগাড়ির কামরায় তার সাথে যাত্রি হিসেবে ওঠেন ব্রিটিশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নন্দলাল ব্যানার্জি। প্রফুল্লর আলোচনা করে তিনি টের পান তিনিই পলাতক আসামি। নন্দলাল তাকে আটকের চেষ্টা করলে প্রফুল্ল পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সাথে থাকা পিস্তলের গুলিতে আত্মাহুতি দেন।

অন্যদিকে, ক্ষুদিরাম ২৫ কিলোমিটার হেটে তৎকালিন ওয়ানি রেল স্টেশনে পৌছান। দির্ঘ পথ হেটে হাপিয়ে ওঠা ক্ষুদিরাম স্টেশনে জলের খোজ করেন। কিন্তু স্টেশনে থাকা পুলিশ তার এ অবস্থা দেখে সন্দেহ করে। তাকে আটকের চেষ্টাকালে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার সাথে থাকা পিস্তল মাটিতে পড়ে যায়। ধরা পরে যান ক্ষুদিরাম। বর্তমানে সেই রেল স্টেশনের নাম ক্ষুদিরামের নামে করা হয়েছে।

ধরা পড়ার পরবর্তি ঘটনা :
১ মে ক্ষুদিরামকে মুজাফফরপুর থেকে আনা হয় কোলকাতায় । তাকে দেখতে লোকজনের ভিড় জমে যায়। ইংরেজি পত্রিকা “স্টেটসম্যান” পরের দিন ঘটনার বর্ণনা দেয় এভাবে, “ছেলেটিকে দেখার জন্য রেল স্টেশনে ভিড় জমে গিয়েছিল। মাত্র ১৮ বা ১৯ বছরের ছেলে, অথচ তাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখাচ্ছিল। রেলগাড়ির প্রথম শ্রেনির কামরা থেকে তার জন্য রাখা ঘোড়ার গাড়ির দিকে সে ভয় ভিতিহিন উৎফুল্ল এক বালকের মত হেটে গেল। সেখানে বসে সে সজোরে স্লোগান দিল, বন্দে মাতরম ! বন্দে মাতরম !”

কোর্টে জিজ্ঞাসাবাদ :

কোর্টে উঠানো হয় ক্ষুদিরামকে। ম্যাজিস্ট্রেটের জ্ঞিসাবাদে ক্ষুদিরাম হামলার সকল দায়িত্ব নির্ভয়ে স্বিকার করেন। এমনকি প্রফুল্ল চাকির কথাও চেপে যান। যদিও পরে আদালত জানতে পারে, প্রফুল্ল চাকিও এর সাথে সম্পৃক্ত। তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষন দিলে রায় শুনে তিনি মুচকি হাসি হাসেন। বিজ্ঞ জজ সাহেব অবাক হয়ে জানতে চান, তিনি এই রায়ের অর্থ বুঝেছেন কি না ? বির নির্ভিক ক্ষুদিরাম হেসে জানান, হ্যা। বলেন, “আমাকে একটু সময় দিলে আমি সারা ভারতবাসিকে শিখিয়ে দিতাম কি করে বোমা বানাতে হয়।”।

আপিল :

ক্ষুদিরামের পক্ষে অনেকজন বিজ্ঞ আইনজিবি লড়েন সম্পূর্ণ বিনা খরচায়। আপিলের উদ্দেশ্য ছিল, মৃত্যুদণ্ড থেকে শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জিবন কারাদণ্ড পাওয়া। তাদের অনুরোধে ক্ষুদিরাম আপিল করার জন্য মত দেন। প্রখ্যাত বিজ্ঞ আইনজিবি নরেন্দ্র কুমার বসু নিম্ন আদালতের রায়ের বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন। যেমন :

– ক্ষুদিরামকে প্রশ্ন করা এবং তার বক্তব্য লিখে রাখার জন্য তার মাতৃভাষা ব্যবহার করা হয় নি।

– যেদিন তার বক্তব্য নেওয়া হয় সেদিন তার স্বাক্ষর নেওয়া হয় নি।

– প্রফুল্ল চাকি ছিল তাদের দুইজনের মধ্যে বেশি শক্ত সামর্থ্য, সেক্ষেত্রে সেই বোমা ছুড়েছে প্রফুল্ল চাকি এবং বোমা বানাতে সে-ই সক্ষম ছিল।

– প্রফুল্ল যেহেতু আত্মহত্যা করেছে, তাহলে সেই বোমা হত্যার জন্য ছুড়েছিল এবং শাস্তি এড়াতে নিজেকে হত্যা করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।  কিন্তু বিজ্ঞ আদালত কোন যুক্তিই আমলে নেয়নি।

অত:পর ফাসি :

ফাসির রায়ে সারা বাংলা উত্তাল হয়ে উঠল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন ঠিক করা হল ১১ অগাস্ট ১৯০৮, সকাল ৬ টা । ভোর ৫ টা থেকে লোকজন ভিড় করল। তার মৃতদেহ যখন রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল অজস্র মানুষ ফুল ছিটিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানায়।

তৎকালিন বিখ্যাত পত্রিকা ‘অমৃতবাজার পত্রিকা‘ এবং বিখ্যাত ব্রিটিশ পত্রিকা ‘এম্পায়ার‘ লিখেছিল, ক্ষুদিরাম হাসতে হাসতে ফাসির মঞ্চে উঠেছিল। মাথায় কালো কাপড় দিয়ে ঢাকার আগ পর্যন্ত সে ছিল উৎফুল্ল ও তার মুখে ছিল স্মিত হাসি।

স্মরনিয় যুগে যুগে :

বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে আত্নত্যাগি ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে কবিতা লিখেছিলেন আমাদের জাতিয় কবি কাজি নজরুল। পিতাম্বর দাস মতান্তরে মুকুন্দ দাস লিখেন বিখ্যাত গান :

“একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি….

হাসি হাসি পরবে ফাসি, দেখবে ভারতবাসি”

“… হাতে যদি থাকত ছোরা,
তোর ক্ষুদি কি পড়ত ধরা, মা গো!
রক্ত-মাংসে এক করিতাম, দেখত জগতবাসী…
একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি…”

বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে আত্নত্যাগি :

আফসোস, আজ আমরা ভূলে গেছি এই ক্ষুদিরামদের কথা। যাদের আত্নবলিদানের জন্যই আজ আমি, তুমি, আমরা, স্বাধিন দেশের মাটিতে দন্ডায়মান।  যে স্বাধিন মাটিতে দাড়িয়ে বিস্তৃত নিল আকাশের নিচে, মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় ডানা ঝাপটে উড়ছি,  মুক্ত বাতাসে নিতে পারছি নিশ্বাস, চিৎকার করে বলছি, এ আমার দেশ, এ আমার মা, আমি এদেশের সন্তান ।

হে আত্নত্যাগি, তোমার এই আত্মবলিদান যারা আজ  ভুলে গিয়েছে তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও !!