বৃহস্পতিবার , সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৪

হযরত উমর এর ইসলাম গ্রহণ

হযরত উমর এর ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। নবীজীর ধর্ম প্রচারের এক নতুন দ্বার উন্মোচন। উমর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন। নবীজির নবুয়তের ষষ্ঠ বর্ষে। হামযা রা: এর ইসলাম গ্রহনের তিন দিন পর। যে উমর নবিজীকে হত্যা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেই উমরই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ইসলামকে নিয়ে আসলেন অন্ধকারের গহীন থেকে দিনের উজ্জল আলোয়। ইসলাম উন্মোচিতহলো জন সম্মুখে।

উমর এর ইসলাম গ্রহণ : তরবারি কাধে ঝুলিয়ে উমর চলছেন নবীর হত্যায়। পথিমধ্যে বনি যুহরার এক ব্যক্তির (মতান্তরে নাঈম ইবন আব্দুল্লাহ’র) সাথে দেখা । তিনি  উমরের গন্তব্যের কথা জানতে চাইলেন। উমর নবীজীকে হত্যার কথা বলতেই লোকটি তার বোন আর ভগ্নিপতির ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কথা জানালেন।

একথা শুনে উমর রেগে মেগে উন্মত্ত হয়ে ছূঠলেন বোন ভগ্নীপতির বাড়ীর উদ্দেশ্যে। বাড়ির দরজায় নক করলেন উমর। ঐ মুহুর্তে তার বোন ভগ্নিপতি কোরান তেলাওয়াত শিখছিলেন খাব্বাব ইবনে আল আরাতের কাছে। (আরাত ছিলেন রাসুল সা. এর একজন অন্যতম সাহাবা। মূলনাম খাব্বাব এবং উপনাম/কুনিয়াত আবু আবদিল্লাহ । পিতার নাম আরাত। তিনি সৌদি আরবের নজদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী সদস্যের মধ্যে ৩য় মতান্তরে ৬ষ্ঠ ছিলেন । মুহাম্মদ ও তার সাহাবারা যখন দারুণ আরকামে গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তিনি মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর সবটুকু সময় ইবাদাত ও দাওয়াতি কাজে ব্যয় করতেন। মক্কায় তখনও যারা ভয়ে নিজেদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেনি, তিনি গোপনে তাদের বাড়ীতে গিয়ে কুরআন শিক্ষা দিতেন )

উমরের আভাষ পেয়ে খাব্বাব ইবন আল-আরাত অন্য ঘরে আত্ন গোপন করলেন। এবং বোন ভগ্নিপতি কোরান তেলাওয়াত থামিয়ে দিলেন। তারা তখন কোরআনের সূরা ত্বহা তেলাওয়াত করছিলেন। উমর ভগ্নিপতির উপর ঝাপিয়ে পড়লেন এবং তাকে রক্তাক্ত করলেন। বোন রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেনঃ সত্য যদি তেমার দ্বীনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসুল।

হযরত উমর এর ইসলাম গ্রহণ
হযরত উমর এর ইসলাম গ্রহণ

বিশাল এক হোচট খেলেন উমর বোনের সাক্ষ্যতে। মুহূর্তে হৃদয় তাঁর সত্যে জ্যোতির উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি তার বোনকে অনুরোধ করলেন তিনি যা পড়ছিলেন তা শুনার। ভগ্নি উমরকে পাক সায় হয়ে নিতে বললেন। পাক-সাফ হয়ে বোনের হাত থেকে সূরা ত্বাহার অংশটুকু নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়া শেষ করে বললেনঃ আমাকে তোমরা মুহাম্মাদের (সা) কাছে নিয়ে চল। উমরের একথা শুনে খাব্বাব ঘরের গোপন স্থান থেকে বের হয়ে এলেন। বললেনঃ সুসংবাদ উমার! বৃহস্পতিবার রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) তোমার জন্য দোয়া করেছিলেন। আমি আশাকরি তা কবুল হয়েছে। তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহ, উমর ইবনুল খাত্তাব বা আমর ইবন হিশামের (আবু জেহেল) দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী কর। খাব্বার আরো বললেনঃ রাসুল (সা) এখন সাফার পাদদেশে ‘দারুল আরকামে’ (দারুল আরকাম এর অর্থ, আরকাম নামক ব্যক্তির বাড়ি। দার শব্দের অর্থ বাড়ি। আর আরকাম একজন সাহাবীর নাম। দারুল আরকাম অর্থ আরকামের বাড়ি। উনার পূর্ণ নাম হলো, আরকাম ইবনে আবুল আরকাম। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন ইসলামি শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র। হজরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভের পর তা প্রচার শুরু করেন। তিনি কাবাকে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহার করেন। কিছুদিন পর মক্কার মুশরিকরা নবীর ইসলাম প্রচারের সংবাদ জানতে পারে। ফলে তারা মক্কার একটি পাহাড়ে নামাজ আদায়রত মুসলিমদের উপর হামলা করে। এ ঘটনার পর হজরত মুহাম্মদ (স.) তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে ধর্মীয় শিক্ষা ও নামাজ আদায়ের স্থান হিসেবে আরকাম ইবনে আবিল আরকামের বাড়িকে নির্ধারণ করেন। এটিই ইসলামের প্রথম মাদ্রাসা বা প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে সাহাবিরা গোপনে নবীর সাথে দেখা করতেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে জেনে নিতেন। প্রায় ৩ বছর এভাবে গোপন দাওয়াত ও ইসলামের শিক্ষাদীক্ষার কাজ অব্যাহত ছিল)।

উমর চললেন দারুল আরকামের দিকে। হামজা এবং তালহার সাথে আরো কিছু সাহাবী তখন দারুণ আরকামে পাহারারত। উমরকে দেখে তাঁরা সন্ত্রস্ত হয়ে পরলেন। তবে হামজা সান্তনা দিয়ে বললেনঃ আল্লাহ উমরের কল্যান চাইলে সে নিশ্চয় ইসলাম গ্রহণ করে রাসুল (সাঃ) এর অনুসারী হবে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য খুবই সহজ হবে।

রাসুল (সা) তখন দারুল আরকামের ভিতর। তাঁর উপর তখন ওহী নাজিল হচ্ছিল। কিছু সময় পরে নবীজি বের হয়ে উমরের কাছে এলেন। উমরের কাপড় ও তরবারীর হাতল তিনি মুট করে ধরে বললেনঃ উমর তুমি কি বিরত হবে না ?………তারপর তিনি দোয়া করলেনঃ হে আল্লাহ, উমর আমার সামনে, হে আল্লাহ উমরের দ্বারা দ্বীনকে শক্তিশালী করুন। উমর বলে উঠলেনঃ আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসুল। ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি আহবান জানালেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ুন।

নবী (সা:) আল্লাহর কাছে বলতেন: “হে আল্লাহ্! উমর বিন খাত্তাব অথবা আবু জাহল বিন হিশাম এর মধ্য হতে যে তোমার নিকট অধিক প্রিয়, তার দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করে দাও ।”

উমর এর ইসলাম গ্রহণ ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। যদিও তখন পর্যন্ত ৪০/৫০জন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে হযরত হামজাও ছিলেন তথাপি মুসলমানদের পক্ষে কা’বায় গিয়ে নামাজ পড়াতো দুরে কথা নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করাও নিরাপদ ছিল না। হযরত উমরের ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন হলো। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষনা দিলেন এবং সকল নও মুসলিমদের সথে নিয়ে কাবা ঘরে নামায আদায় করা শুরু করলেন।

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

About মোহাম্মদ শওকত আকবার

Showkatbd.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ব্লগার। চলমান ব্লগিং ল্যান্ডস্কেপকে আমি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমি শুধু একটি ব্লগ নিয়েই নয়; একটি অপরিহার্য বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছি। "Many more in one” শ্লোগানে যার পথচলা। যে ব্লগ হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বাংলা ভাষা ভাষিসহ অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতি মুহূর্তের এক অপরিহার্য প্লাটফর্ম । তাদের অনলাইন সেবা প্রদানেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ”সম্পূর্ন একটি সেবামূলক সাইট”

Check Also

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় ..

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় ..

ইসলামী খেলাফতের চার অধ্যায় হচ্ছে নবী মোহাম্মদের ওফাতের পর সৃষ্ট রাজ্য শাসন ব্যবস্থা যথাক্রমে :  …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!