বন্ধ হোক মহল্লার মসজিদ কমিটি নামক ’অসভ্যদের কমিটি বানিজ্য’

মহল্লার মসজিদ, খতিব, ঈমাম এবং কমিটি সমাচার- প্রসঙ্গে কিছু লিখতে কষ্ট হলেও আজ তা নিয়েই লিখতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে এজন্য যে, আমি নিতান্তই একজন মূর্খ মানুষ। বাপ দাদার ওয়ারিশসুত্রে মুসলমান। ধর্ম কর্ম অতটা বুঝিনা। বাবা মা যেটুকু শিখিয়েছেন বা স্বীয় প্রচেষ্টায় যা শিখেছি, তার উপর ভর করে আমার ধর্মের সন্মানিত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে এতো বড় একটি প্রসঙ্গে কলম চালানো নিতান্তই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই মসজিদ, আমারই ঠিকানা, এই খতিব আমারই ধর্মের প্রচারক, আর মসজিদ কমিটি আমারই ধর্মের উপাসনালয় গুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার পরিচালক, তাদের নিয়ে কিছু বলা যে ধর্মকে ছোট করে দেখা, তা বলার অবকাশ রাখেনা। কিস্তু বড়ই কষ্টের সাথে নিজের দৃষ্টিতে দেখা আর নিজের মুর্খ জ্ঞানে যা উপলীব্ধ করেছি, তা আর সংবরন করতে না পেরেই আমার এই প্রয়াস।

হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে কিছু না বললে নিজেই নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাচ্ছি । অন্যায়ের এই প্রতিবাদ আজি আমি না করলে প্রশ্ন বিদ্ধই থেকে যাবে অন্য ধর্মের লোকদের কাছে।

মসজিদের শহর ঢাকা। ৫০০০ থেকে ১০০০ মিটার দূরত্বে (এটি একটি স্বাভাবিক হিসেব) আমাদের ঢাকা শহরের প্রায় এলাকার মসজিদের অবস্থান। দৃষ্টিনন্দন সুন্দর সুন্দর এক একটি মসজিদ। যার ভিতর বাহিরে চোখ পড়লেও মন ভরে যায় দৃষ্টিনন্দন শৈলীতে। সারদিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মুসুল্লী যাই হোক না কোনো। বিশালাকৃতির এইসব মসজিদের ভিতর বাহির সকল ধর্মের মানুষদের চোখ জুড়িয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীর ঘর এই মসজিদ। আল্লাহর উপাসনার জায়গা এই মসজিদ। অথচ আজ এইসব মসজিদগুলো খতিব, ঈমাম, ময়াজ্জিন আর কমিটি গুলো সর্বোপরি উপাসনার বদলে খামচা খামছিতে রুপান্তরিত হচ্ছে এক বিতর্কিত এক উপাসনালয়ে।

সকলের উদ্দেশ্যেই আমার জোর আকুতি, ভাইয়েরা আপনারা আল্লাহর উপাসনা করার এই পবিত্রতম জায়গাটিকে বাজারে রুপান্তরিতে করবেন না। আমাদের নিজেদের এই ধর্মকে প্রশ্নব্ধি করবেন না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মে আপনারা আপনাদের নিজেদেরে সুযোগ সুবিধা, স্বার্থের লোভে একে অন্যের সাথে কামড়া কামড়ি করবেন না।

খতিব খারাপ, পেসিডেন্ট খারাপ, খতিব সাহেবের অমুক বয়ানে মুসুল্লীরা নাখোশ, প্রেসিডেন্টের অমুক ব্যবহারে খতিব, ঈমাম নাখোশ, মসজিদ কমিটি অমুক কাজ করলোনা, মাইক ঠিক করলোনা, এসির সমস্যার সমাধান করলোনা, – ইত্যাদি ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে বিশাল এক দ্বন্দ্ব- এগুলো বাদ দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এসব থেকে বের হয়ে আসেন। এগুলো আপনাদের মানায় না। আপনাদের সাথে যায়না।

মসজিদের সভাপতি পদ নিয়ে হাতাহাদি, এক পর্যায় তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কেনো এমন হবে। আল্লাহর ঘরের সেবা সকলেই তো করতে পারে। সেখানে কমিটির কি প্রয়োজন ? আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যদি কমিটির প্রয়োজনই হয়, তবে সেখানে কেনো এমন অশোভনীয় ঘটনার সুত্রপাত হবে।

যেখানে আল্লাহর ঘর সেবা করতে এমন অশোভনীয় ঘটনার সুত্রপাত হয়, সে সভপতি বা প্রেসিডেন্ট কি-ই বা আর সেবা করবে? তার ভেতরটাই তো কুৎসিত কদাকারে ভরা। হিংস্ব, লোভে পরিপূর্ন। এমনো দেখেছি, সুদখোর, ঘুষখোর, অবৈধভাবে ইন্কমা করা, নতুন পয়সা হওয়া লোকেরা এই কমিটিতে ঢুকতে মরিয়া হয়ে উঠে। এটা কিসের আলামত? মিম্বারে দা৭ড়িয়ে মাউথ স্পীস হাতে নিয়ে যিনি সুন্দর উচ্চারনে সালাম দিতে অপারগ, সেই লোক সভাপতি। আফসোস! ধর্ম সম্বন্ধে যার বিন্দুমাত্র জ্ঞান নাই, ক্ষমতার লোভে সে মসজিদ কমিটির সভাপতি। তিনি খতিব, ইমাম সাহেবকে হুকুম করে বয়ানের জন্য বলে থাকেন।

আর আমাদের সেই খতিব বা ইমাম সাহেব তা করতেই বাধ্য। তিনি এই সুদখার ঘূষখোরের বিরুদ্ধে কোনো রকম উচ্চবাচ্যও করেন না। কেননান তারও কিছু লিকেজ রয়েছে যা নিচের বয়ানে উপস্থাপন করবো।

একটা সময়ে দেখেছি প্রতিটি মসজিদে একজন ঈমাম সাহেব নামাজ পড়াতেন। প্রতিদিনকার পাঁচ ওয়াক্ত নামজসহ, জুম্মা, ঈদের নামাযে একজন ঈমাম সাহেব নেতৃতত্ব দিতেন। যুগের পরিক্রমার সেই এক জনের জায়গা আজ দখল করে নিয়েছে একের অধিক ঈমামে। একজন খতিব, একজন ঈমাম।

খতিব সাহেব শুধু জুম্মার দিনে বয়ানসহ জুম্মার নামাজ পড়াবেন। আর উনার থেকে একটু কম জানলে ওয়ালা (ক্ষমা করবেন) ঈমাম সাহেব অন্যান্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াবেন।   খতিব সাহেব শুক্তবার দিন নামী দামী কোর্তা, জোব্বা, টুপি পড়ে, গায়ে দামী আতর খুস্বু মেখে বিশাল এক বাহিনীসমেত ( যারা ঠিক আছে আছে বলে মসজিদ গরম করতে ব্যস্ত) প্রবেশ করেন। ভাব ভঙ্গিমায় মিম্বারে বয়ান শুরু করেন, এক পর্যায়ে বিশাল এক মোনাজাতের মাধ্যমে নামায সম্পূর্ন করেন। ঠিক এমনি ভাবেই ঈদের দিনেও খতিব সাহেব তার এক ওয়াক্ত নামাযের কর্ম সম্পাদন করে থাকেন।

তাকে তার মসজিদেই নামায পড়তেও কম দেখা যায়। কেননা তিনি ব্যস্ত, তার একটি মাদ্রাসা আছে, তার রাজনীতির একটা আদর্শ আছে, পদ-পদবী আছে, উমরার খ্যাপ আছে, হজ্বের সময় হজ্জের খ্যাঁপ। তার ঠিক ঠিক বলে চিৎকার করার মতো বিশাল এক পেটোয়া বাহিনী আছে। আছে ফেসবুক গ্রুপে ওয়াজ নসিহত বিক্রির যুগপোযোগী এক পদ্বতি। আর শীতের সিজনে এখানে ওখানে লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করার নামে বিশ্রিরকম অঙ্গ ভঙ্গিমায় অন্যের গুটিউদ্ধ্ার করার বিশাল কর্মযজ্ঞের মতোন এক বাৎসরিক অনুষ্ঠান।

সেসব সামলাতে সামলাতে উক্ত মসজিদের উক্ত সময় ব্যতিত তার পক্ষে সময় দেয়া হয়ে উঠেনা। তিনি মসজিদে বসে মুসুল্লীদের যে কিছু শেখাবেন তা তার পক্ষে হয়ে উঠেনা। আর এটাই স্বাভাবিক। কেননা তিনি যখন এ মসজিদে খতিব পদে যোগদান করেছিলেন, তখন তার সাথে মসজিদ কমিটি বা এলাকার শ্রদ্ধেয় মুসুল্লীরা বা গুরুজনদের এমনটি কর্ম সম্পাদনের চুক্তিপত্র হযেছিলো। আর সন্মানী? তা হয় না-ই বললাম।

আবার এমনো দেখা যায়, মসজিদ কমিটি তাকে জুম্মার বয়ানে সভাপতির সাহেবের পক্ষের বয়ান ব্যতিত বেশী কথাও বলাও নিষেধ করে দেন। তাকে নির্দিষ্ট কিছু আলোচনার মাঝেই সিমাবদ্ধ থাকতে হয় মাসের পর মাস। শূধু রোজার ইতিহাস, কোরবানীর ইতিহাস, আশূরা, কারবালা, হাসান, হোসেন, ইয়াজিদ – ইত্যিাদি ইত্যাদি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে বছরের পর বছর।

সমাজ, সংসার, দেশ, জাতির পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংস্কার হলে হলো আর না হলেও খতিব সাহেবে কিছূ আসে যায় না। তিনি মিম্বারে যা বলেছেন, তা কেই মানলো কি মানলোনসা তার দেখারও আর প্রয়োজন মনে করেন না। আর তাই স্বাভাবিক।

মসজিদের সভাপতির কি সুদখোর, না ঘুষখোর তিনি কি কিরেন, তারে পেশা কি – এগুলোও তার জানার দরকার পড়েনা। তার পেশা বা ব্যবসা নিয়ে ইমাম সাহেবের কোনো মাথা ব্যথা নাই। ব্যাপারটা এমন যেন, তিনি বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। অফিসের বা মনিবের হুকুমের বাইরে যাওয়া মানেই তার চাকুরীচ্যুত। জ্বি হুজুর, জ্বি জনাব করতে করতেই তার দফা সাড়া।

আমরা কি এমনটা চাই? চাইনা। একজন খতিব হবেন স্পষ্টভাষী। ন্যায়ের সেবক। ধর্মের প্রচারক। তাকেও যেমন সৎ সাহসি হতে হবে,  এবং তার ঠিক আছে ঠিক আছে বাহিনীকে রাখতে হবে মসজিদের বাইরে। তেমনি মসজিদ কমিটির লোকজনও হবেন নমনীয়, শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক।

আমার প্রশ্ন কি দরকার এই কমিটির? আল্লাহর ঘরের খেদমত মহল্লা বা এলাকার সকলেই তো করতে চায়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সমন্বয়ে বিতর্কিত একটি প্যানেল বানিয়ে কি আদৌ কোনো ফায়দা হয়? যা হয় তা হচ্ছে,

  1. এলাকায় নিজেকে একজন খাটি ইমানদার পরিচয় দেয়ার অপচেষ্টা।
  2. ঈদে চান্দে জুম্মায় মিম্বারে দাড়িয়ে উন্নয়ন বিষয়ক ফর্দের তপশীল পাঠ।
  3. মাঝে মাঝে ইমাম সাহেবের বক্তৃতার ভুল সংশোধন
  4. কমটির রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে খুতবা প্রদানে ঈমাম সাহেবকে হুশিয়ারি প্রদান, (যা কিছুদিন আগ পর্যন্ত হয়েছিলো),
  5. শীতের দিনে অংগ ভংগিবাজ বক্তাদের দিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন এবং মজাদার মুখরোচক তোবারক বিলি।

আল্লাহর ঘর উন্নয়ন বা খেদমতে আসলে কোনো কমিটির প্রয়োজন হয়না। এলাকার বিচক্ষন মুরুব্বিদের দিয়েই তা সম্ভব। উক্ত মুরুব্বিরা কেউ পদের জন্য লালায়িত নন। কমিটি নামক উক্ত টিকটক পার্টির কারনেই ঐসব মুরুব্বিরা আজ সামনে আসতে গররাজি। তাদের ভয় (মান সম্মানের) তারা নামাজের পরে সোজা বাসায় চলে যান। আর পরের ওয়াক্ত নামাযের প্রিপারেশন নিতে থাকেন। তাই বলছিলাম,

  1. ঐসব মুরুব্বিদের ১০ জনের সমন্বয়ে একটি মজলিশ তৈরি করুন। যেখানে কোনো পদ বা পদবী থাকবেনা। পদ বা পদবী আছে বলেই আজ কমিটিতে খোচাখুচি। এটা আমার কাজ নয়, এতা তার কাজ-ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখবেন তারা মন্সজিদ উন্নয়ে এগিয়ে আসবেন। তাদের পদ বা পদবীর কোনো আকাংখা নাই। দেখবেন মসজিদের উন্নয়ন ভালো হবে। ঐ মজলিশে ১০ থেকে শুরু করে আপনি অধিক রাখতে পারেন।
  2. তাহলে বলবেন ক্যাশিয়ার বা মসজিদের টাকা পয়সার হিসেব কে  রাখবেন বা চাঁদা উত্তোলনে কেইবা এগিয়ে যাবেন। হা, এজন্য অই মুরুব্বিদের থেকেই ৫জনকে বায়তুল মালে দ্বায়িত্ব দিয়ে দেন। ব্যাস, হয়ে গেলো।

আজ পদ বা পদবী আছে বলেই সকলের তার প্রতি টার্গেট। কমিটি বাদ দিয়ে দেন, দেখবেন একটি লোকও আর অই মজলিশের সাথে থাকার জন্য মরিয়া হবে না। কেননা সে নিজেকে আর পরিচয় দিতে পারবেনা আমি অমুক মসজিদের অমুক বলে।

এটা সম্পূর্নই আমার নিজস্ব অভিমত।

About মোহাম্মদ শওকত আকবার

Showkatbd.com এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ব্লগার। চলমান ব্লগিং ল্যান্ডস্কেপকে আমি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমি শুধু একটি ব্লগ নিয়েই নয়; একটি অপরিহার্য বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছি। "Many more in one” শ্লোগানে যার পথচলা। যে ব্লগ হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বাংলা ভাষা ভাষিসহ অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রতি মুহূর্তের এক অপরিহার্য প্লাটফর্ম । তাদের অনলাইন সেবা প্রদানেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ”সম্পূর্ন একটি সেবামূলক সাইট”

Check Also

Printable wishcard maker

showkatbd wishCard বিনামূল্যে শুভেচ্ছা বার্তাসহ, চমৎকার দৃষ্টিনন্দন কার্ড তৈরির সহজ সমাধান । ব্যক্তিগত বা প্রফেশনাল …

Leave a Reply

Language »