
মা এক অভূতপূর্ব সত্তা, যার তুলনা পৃথিবীর আর কোনো সম্পর্কের সঙ্গে হয় না। তিনি শুধু একজন জন্মদাত্রী নন, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের একান্ত ভরসা। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, মা এমন একজন যিনি আমাদের সুখে-দুঃখে, আনন্দে-বেদনায়, বিপদে-আপদে সর্বদা পাশে থাকেন। মা কখনো ক্লান্ত হন না, কখনো বিরক্ত হন না। তিনি এমন এক অমূল্য ধন, যাঁকে দিয়ে জীবনের প্রতিটি সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝা যায়।
মা আমাদের প্রথম শিক্ষক। শিশুকালে জীবনের প্রথম শব্দ, প্রথম হাঁটা, এমনকি প্রথম অনুভূতিগুলোও মায়ের কাছ থেকেই শিখি। তাঁর মমতা, ভালোবাসা, এবং স্নেহের গভীরতা পরিমাপ করা অসম্ভব। মা নিজের স্বার্থের কথা ভুলে আমাদের জন্য প্রতিনিয়ত ত্যাগ করেন। তিনি যেন এক টাকা ছাড়া দাসী, যিনি বিনা স্বার্থে, বিনা বিরক্তিতে নিজের সমস্ত সময়, শ্রম, এবং শক্তি সন্তানদের সুখ-সুবিধার জন্য ব্যয় করেন।
জীবনের প্রতিটি সংকটে মা হয়ে ওঠেন আমাদের রক্ষাকর্ত্রী। সন্তান বিপদে পড়লে মা নিজেকে সব ভুলে সন্তানকে রক্ষা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। মায়ের এই আত্মত্যাগী চরিত্র সব ধর্ম, সব জাতি, সব সংস্কৃতির জন্য অভিন্ন। তিনি কোনো পারিশ্রমিক চান না, কোনো পুরস্কারের প্রত্যাশা করেন না। তাঁর জন্য সন্তানের ছোটো একটি হাসি, একটি সুখবরই যথেষ্ট।
মায়ের ভালোবাসার গভীরতা বোঝা যায় তাঁর অজস্র ত্যাগের মধ্য দিয়ে। সন্তান যখন অসুস্থ থাকে, মা রাত জেগে তার পাশে বসে থাকে। সন্তান বড় হয়ে যখন দূরে চলে যায়, তখন মা মনে মনে তাঁর মঙ্গল কামনা করে। সন্তানের কষ্ট দেখলে মায়ের মন ভেঙে যায়, কিন্তু সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তিনি সবসময় মজবুত হয়ে থাকেন।
মা কেবল একজন সেবিকা নন, তিনি একজন পথপ্রদর্শক। জীবনের যেকোনো কঠিন মুহূর্তে মায়ের পরামর্শই আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। তিনি আমাদের জীবনের প্রতিটি ভুলকে ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস জোগান। মা এমন একজন যাঁর স্নেহের স্পর্শে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়, যাঁর কণ্ঠস্বর হৃদয়ে শান্তি এনে দেয়।
তবে, বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই মায়ের এই ত্যাগ এবং ভালোবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই। আমাদের জীবনের ব্যস্ততার মাঝে আমরা প্রায়ই মাকে অবহেলা করি। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা সবসময় নিঃস্বার্থ থাকে। তিনি কখনো অভিমান করেন না, বরং আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আরও গভীর হয়।
মা এক রহস্যময় জননী, যাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। তাঁর ভালোবাসার গভীরতা, ত্যাগের নিঃস্বার্থতা, এবং সহনশীলতার সীমা এত বিশাল যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাঁর ভালোবাসা এবং ত্যাগের প্রতিদান আমরা কোনোভাবেই দিতে পারি না। তাই আমাদের উচিত মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সুন্দর করে তোলা।