বাংলাদেশে সরকারি প্রশাসন দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি আমলাদের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা বারবার প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের দুর্নীতির কাহিনিগুলো শুধুমাত্র প্রশাসনিক সিস্টেমের দুর্বলতাকেই সামনে আনে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকেও নষ্ট করছে।
র্নীতির ধরন ও কৌশল
সরকারি আমলাদের দুর্নীতির ঘটনাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘটে। এখানে ভুয়া প্রকল্প গ্রহণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় দেখানো, কিংবা নথিপত্রে ভুয়া তথ্য সংযোজনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ:
– একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে দেখানো হয়েছে যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে সেসব কাজের কোনো অস্তিত্ব নেই।
– নির্মাণ কাজ বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অযৌক্তিক অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হয়, যা পরবর্তীতে আত্মসাৎ করা হয়।
– আবার, প্রকল্পে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেও সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রভাব ও পরিণতি
সরকারি আমলাদের এই ধরনের দুর্নীতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
১. অর্থনৈতিক ক্ষতি: উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থ অপচয় হওয়ায় জনগণ প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
২. সমাজে আস্থার সংকট: জনগণের মধ্যে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি বিশ্বাস কমে যায়।
৩. উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা: অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পের কারণে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
৪. বৈদেশিক বিনিয়োগে সংকট: আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীরা দেশের সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যা দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করে।
দুর্নীতির কারণ সমূহ:
সরকারি আমলাদের দুর্নীতির পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়:
১. জবাবদিহিতার অভাব: অনেক ক্ষেত্রেই আমলাদের কার্যক্রমের ওপর তদারকি কম থাকে, ফলে তারা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।
২. রাজনৈতিক প্রভাব: কিছু অসৎ আমলা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেন।
৩. কঠোর শাস্তির অভাব: দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, যা অন্যদের জন্য প্রেরণা জোগায়।
৪. টেকসই সিস্টেমের অভাব: ডিজিটালাইজড ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় দুর্নীতি সহজে ঘটানো সম্ভব হয়।
সমাধান ও প্রতিরোধ:
সরকারি আমলাদের দুর্নীতি রোধে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:
১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা ও তদারকির ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।
২. কঠোর শাস্তি: দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ডিজিটাল নজরদারি: প্রকল্প বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এনে জনগণের পর্যবেক্ষণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
৪. সুশাসন প্রতিষ্ঠা: প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি আমলাদের দুর্নীতি দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং জনগণের সচেতনতা একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। এজন্য প্রয়োজন কঠোর নীতিমালা এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন।