Its a digital heaven for multi faceted blooging,
offering more than just words on a screen.

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, অত:পর স্বাধীনতা ও আমরা..

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাকিস্তানের শাসনামলে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে শোষিত হয়েছে।

এই শোষণ শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রশাসনিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল সুস্পষ্ট। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামই ধাপে ধাপে রূপ নেয় স্বাধীনতার আন্দোলনে, যা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।

বৈষম্যের মূল কারণ

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই রাষ্ট্র দুটি ভৌগোলিক অংশে বিভক্ত ছিল—পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানে বাস করত, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, প্রশাসন এবং ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।

১. অর্থনৈতিক বৈষম্য:


পূর্ব পাকিস্তান দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করত, প্রধানত পাট রপ্তানির মাধ্যমে। কিন্তু উন্নয়ন বাজেটের মাত্র ২৫ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে বরাদ্দ হতো, যেখানে পশ্চিম পাকিস্তান পেত ৭৫ শতাংশ।

২. রাজনৈতিক বৈষম্য:
প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল খুবই সীমিত। এছাড়া, পূর্ব বাংলার মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ও পশ্চিম পাকিস্তান মেনে নিতে পারেনি।

৩. ভাষাগত বৈষম্য:
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে পূর্ব বাংলার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জনগোষ্ঠীর ৫৬ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত তাদের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলেছিল।

বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন

১. ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-১৯৫২):


ভাষার অধিকারের দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ছাত্ররা জীবন দেয়। এই আন্দোলন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রথম বড় পদক্ষেপ এবং বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তি স্থাপন করে।

২. ছয় দফা আন্দোলন (১৯৬৬):


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবি মূলত পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের অবসানের প্রস্তাব ছিল। এটি স্বাধীনতার আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

৩. গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯):
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়।

৪. ১৯৭০ সালের নির্বাচন:
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি বাঙালিদের ক্ষোভকে চরমে নিয়ে যায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয়

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে, যা “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পরিচিত। এর পরপরই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আসে এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।

স্বাধীনতার পর আমরা

স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আজ বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। তবে বৈষম্যের কিছু চিত্র এখনো রয়ে গেছে, যেমন—
১. আঞ্চলিক বৈষম্য: শহর এবং গ্রামের মধ্যে উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য।
২. শ্রেণী বৈষম্য: ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য।
৩. লিঙ্গ বৈষম্য: নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বেড়েছে, তবে বৈষম্য এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি।

 

বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ছিল আমাদের স্বাধীনতার মূল চালিকাশক্তি। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত সব ধরনের বৈষম্য দূর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশই হতে পারে আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত স্বপ্ন পূরণের পথ।

Ads

Start Now.. showkatbd eDocs

বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

About M.I. Ashik

Check Also

একজন আয়না বিবি ও তার জীবনের করুণ চিত্র!

আয়না বিবি ছিলেন এক সাধারণ গ্রামীণ মহিলা, যার জীবনের শুরুটা ছিল সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরপুর। তিনি ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!