বুধবার , সেপ্টেম্বর ১৮ ২০২৪
জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার বিস্তারিত

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট : প্রয়োজনের তাগিদে অনেক সময় আমরা একের অধিক সদস্যদের নিয়ে যে একাউন্ট খুলে থাকি, তাই হচ্ছে জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট। হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়ে, ভাই-বোনের সমন্বয়ে কখনো বা নাবালগ সন্তানের একাউন্ট খোলার জন্য বাবা বা মায়ের সমন্বয়ে বা আইনগত অবিভাবকের সমন্বয়ে , আবার কখনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদের সমন্বয়ে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট মৃলত: একের অধিক সদস্যদের স্বাক্ষরেই ব্যাকিং লেনদেন হয়ে থাক। যদি দুয়ের সমন্বয়ে হয়ে থাকে তাহলে একজন সদস্য কোনভাবেই লেনদেন পরিচালনা করতে পারবেনা। উভয়ের স্বাক্ষরেই প্রয়োজন পড়বে চেক বা ব্যাংকরে জন্য যে কোন ডকুমেন্টস্ তৈরীতে।

যেসব ক্ষেত্রে জয়েন্ট একাউন্ট প্রয়োজন:

– ব্যবসা পরিচালনা
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানিজিং কমিটির জয়েন্ট একাউন্ট প্রয়োজন পড়ে,
– মসজিদ, মাদ্রাসা বা দাতব্য সংস্থা পরিচালনায়
– যে কোন সামাজিক সংগঠনের লেনদেন প্রক্রিয়া করনেও জয়েন্ট একাউন্টের প্রয়োজন হয়।

যৌথ অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে কিভাবে জয়েন্ট একাউন্ট ওপেন করতে হয় তা-ই বিস্তারিত তুলে ধরা হলো : আমরা একের অধিক সদস্যদের সমন্বয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকি। বা একের অধিক সদস্যদের নিয়ে ব্যবসা করার মনস্থির করে থাকি। সেক্ষেত্রে সকলে কিছু শর্তাবলীর সমন্বয়ে একটি চুক্তিনামা সম্পাদন করতে হয়। যেখানে ব্যবসাটি কিভাবে পরিচালিত হবে, মূলধন কিভাবে সমন্বয় হবে, লভ্যাংশ কিভাবে বাটোয়ারা হবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালিত হবে, ব্যাংক ট্রানজেকশন কিভাবে হবে সব কিছুই উল্লেখ করে তবেই ব্যবসা শুরু করতে হয়। আর যে বহিতে এইসব চুক্তিপত্র লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বলা হয় “রেজুলেশন”। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এই রেজুলেশন অত্যধিক কার্যকর। রেজুলেশন ছাড়াকোন ধরনের অংশীদারী ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

এ ধরনের কার্যক্রম একজন উকিলের মাধ্যমেই হয়ে থাক। কিংবা কখনো তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একজন ব্যবসায়িক ভাবে পটু ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো সমাধান করে থাকেন। যাই হোক, ব্যবসা শুরুর অন্যতম আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকে অংশীদারদের নিয়ে একটি যৌথ একাউন্ট খোলা। উক্ত একাউন্টের অংশীগনই ব্যাংক হিসেবের মালিক। সকলের সমর্থনে নির্ধারিত অংশীগনই উক্ত একাউন্ট তাদের স্বাক্ষরে অর্থ লেদনেদন করতে পারেন।

যেভাবে খুলতে হয় জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট : যেকোন সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস্, (যা ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী হয়ে থাকে) প্রথমেই তা সংগ্রহ করতে হবে। সেসব ডকুমেন্টস্ নিয়ে ব্যাংক থেকে একটি একাউন্ট ওপেনিং ফরম কালেক্ট করতে হবে। যথানিয়মে ব্যাংকের আবেদন পত্র বা ফরমটি পূরণ করে সকল আবেদনকারীর স্বাক্ষর সহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা প্রদান করে নিচের ডকুমেন্টস্ সমূহসহ জমা প্রদান করার কয়েক কার্যদিবসের মধ্যেই যৌথ ব্যাংক একাউন্ট ওপেন হয়ে যায়।

ওপেনিং ফরম পূরনে কোন রকম কনফিউশন হলে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। প্রতিটি ব্যাংকেই এখন একাউন্ট ওপেন করার জন্য একটি বিশেষ সেল কাজ করে থাকে। তাদের কাজই হচ্ছে একাউন্ট ওপেন, কার্ড রিলেটেড সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :

– আবেদনকারীদের অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া বা নিজস্ব হলে তা প্রমানে চুক্তিপত্র
– ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স
– আবেদনকারীদের তথ্য পুরানসহ স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র ব্যাংকে জমাদান।
– ব্যাংক কর্তৃক প্রধানকৃত TP (Transaction Profile) ও KYC (Know Your Customer) ফরম পূরণ।(টিপি হচ্ছে আপনাদের ব্যাংকিং কিরকম পরিমান অর্থ লেনদেন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান।

– একাউন্ট পরিচালনা বা লেনদেন করার দায়িত্বে কে কে থাকবে তা নিশ্চিত করন।
– আবেদনকারীদের এনআইড বা  জাতীয় পরিচয়পত্র/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্টের কপি।
– আবেদনকারীদের (ছবির পিছনের সত্যায়িতসহ) পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
– সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যে কোন চলতি (Current) বা সঞ্চয়ী (Savings) একাউন্ট ধারীর রেফারেন্স।
–  নমিনি হিসেবে যাকে নিযুক্ত করা হবে তার তথ্য ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
– ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি (গ্যাস, পানি, ইলেকট্রিক)বিলের কপি।
– TIN (Tax Identification Number) সার্টিফিকেটের কপি।
– ব্যবসা পরিচালনার রেজুলেশন (রেজুলেশন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা ও পরিচালনার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা ম্যানেজিং কমিটির একটি সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন বহিতে লিখিত ও উপস্থিত সকলের স্বাক্ষরিত হয়ে থাকে। )
– প্রাথমিকভাবে একাউন্ট ওপেনিং ফি জমাদান।

অতঃপর আবেদন ফরমে সম্পূর্ণ তথ্য পূরন ও প্রতিষ্ঠানভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা প্রদান করতে হবে। সব ঠিক ঠাক মতো হয়ে গেলে কয়েক দিনের মধ্যেই একাউন্টটি এ্যাক্টিভ হয়ে যাব। এবং ব্যাংক চেক বই প্রদান করবে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার সুবিধা :

– একাউন্টে অংশগ্রহণকারী সকলেরই তহবিলের সমান অধিকার।
– একজনের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ অর্থ উত্তোলন করতে পারে না তাই অর্থ শতভাগ নিরাপদ।
– বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একাউন্টের মালিকদের (প্রয়োজনে) প্রত্যেককে পৃথক পৃথক ডেবিট কার্ড ও চেক বই প্রদান করা হয়।
– ব্যবসায় অংশীদারি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতেও যৌথ ব্যাংক একাউন্ট কার্যকরী।
– বড় কোন আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ নেওয়া যায়।
– একজন অংশী একাউন্ট টি পরিচালনা করতে না পারলেও অন্যজন তো পরিচালনা করতে পারে।

জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট খোলার অসুবিধা:

– অংশীদারদের মতামত ভিন্ন হয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে।
– একের অধিক সিগনেটরী হলে একের অনুমতি ব্যতিত অন্যজন অর্থ উত্তোলন করতে পারে না।
– উভয় সিএনটরী মিলে (দু’জন) যদি সমস্ত অর্থ বা ফান্ড ব্যবহার করে ফেললেও অন্যদের কিছু করার থাকে না।
– একজনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে একাউন্টটি বাজেয়াপ্ত হলে অন্যদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়।
– একজন পার্টনারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সকলের উপর এর প্রভাব পড়ে।
– উভয়ের মতামত বা স্বাক্ষর ব্যতিত একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভবপর হয়না।

সতর্কতা :

একাউন্ট খোলার জন্য সকল অংশীদারদের একে অন্যের মতামত, আর্থিক অবস্থান, চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। একাউন্ট ওপেনের পূর্বেই সকলের মতামত অনুযায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত। একাউন্ট পরিচালনা ও একাউন্ট বন্ধের ব্যাপারেও সকলকে অবশ্যই পূর্ব ধারনা রাখতে হবে।

অন্যান্য প্রয়োজনে জয়েন্ট বা  যৌথ একাউন্ট:

সন্তানের জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট: কখনো বা নাবালক সন্তানের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পিতা-মাতা বা আইনগত অবিভাবকের সাথে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট,  পিতা বা মাতার এন আই ডি / জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপি একাউন্ট ওপেন ফরমের সাথে জমা দিতে হয়।

স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়ে হলে: যদি কখনো স্বামী বা স্ত্রীর সমন্বয়ে যৌথ একাউন্ট খোলার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে উভয়ের এন আই ডি / জাতীয় পরিচয় পত্র, মেরেজ সার্টিফিকেটের অনুলিপি একাউন্ট ওপেন ফরমের সাথে সাবমিট করতে হয়।

শেষকথা

জয়েন্ট বা যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে উপরের আলোচনায় যদি কারো বিন্দুমাত্রও উপকার হয়, তবেই আমার কষ্ট সার্থক। ব্যাংকিং ও অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা পেতে ভিজিট করুন আমার ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আল্লহ্ ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর সুদকে করেছেন হারাম

ব্যবসা করুন হালালভাবে। আল্লাহই আপনার ব্যবসায় বরকত ও উন্নতি দিবেন- সেই প্রার্থনায়,

আল্লাহ হাফেজ!

চেক প্রদানে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন

Fund Transfer Request Letter Generator | English Format

আরো পড়ুন:

image_printআর্টিকেল প্রিন্ট করুন
বিজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন

Check Also

এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট তৈরী করুন সহজেই

এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট বা অভিজ্ঞতা সনদ বা অভিজ্ঞতা প্রশংসা পত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানী বা কর্মস্থানের নিয়োগ কর্তা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Language »
error: Content is protected !!