টাকা এলো যেভাবে শিরোনামে আমরা জানবো আজ টাকার ইতিহাস। আজকে আমরা যে টাকা শব্দটি ব্যবহার করছি, তা আমাদের বাংলাদেশে কোথা থেকে এলো বা কিভাবেই এলো?
টাকা শব্দের আগমনের অতিত ইতিহাস জানতে হলে আগেই জানতে হবে মুদ্রা কী?
মুদ্রা হচ্ছে বিনিময়ের মাধ্যম, যা সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। যার দ্বারা সব রকম দেনা-পাওনা বা লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির হিসাব সম্পন্ন করা যায়। দেশ ভেদে মুদ্রা একেক নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা, ভারতে রুপি, আমেরিকার ডলার, জাপানের ইয়েন ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা হলো যেভাবে:
মূলত: সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভব ‘টাকা’ শব্দের। সংস্কৃত শব্দ ‘টঙ্ক’, যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই বঙ্গ রাজ্যে (বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম) ধাতব মুদ্রাকে বোঝানোর জন্য টাকা শব্দটি ব্যবহার করা হতো।
১৪ শতাব্দীতে ইবন বতুতা লক্ষ্য করেছিলেন যে, বাংলা সালতানাতের (বাংলা সালতানাত বা শাহি বাংলা ছিল মধ্যযুগের বাংলায় একটি মুসলিম স্বাধীন রাষ্ট্র। যা চতুর্দশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিলো) লোকজন সোনা এবং রূপার ধাতবকে দিনার না বলে “টাকা” বলতো। সেই টাকাই পরবর্তীতে এই অঞ্চলে মুদ্রার নাম হিসেবে রয়ে যায়।
বাংলাদেশে যেভাবে আসে টাকা:
দেশ ভাগের পূর্বেও ১৯৪৭ সাল থেকে দেশে প্রচলিত পাকিস্তানি রুপিকে এ দেশে কাগজে-কলমে টাকাও বলা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি রুপির একপাশে ‘বাংলা দেশ’ এবং অপর পাশে ইংরেজিতে ‘বাংলা দেশ’ লেখা রাবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হতো। ১৯৭১ সালের ৮ জুন পাকিস্তান সরকার এই রাবার স্ট্যাম্পযুক্ত টাকাকে অবৈধ এবং মুল্যহীন ঘোষণা করে। এর পরেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত এই রাবার-স্ট্যাম্পযুক্ত পাকিস্তানি টাকা চলেছিল সারা দেশে।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর নতুন মুদ্রা প্রচলন শুরু হয়। তাতে সময় লেগেছিল তিন মাসের মতো। তাই ওই সময়ে পাকিস্তানি রুপিই ব্যবহৃত হতো। তবে অফিশিয়ালি ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশি কারেন্সিকে ‘টাকা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে প্রথম কোষাগার মুদ্রা বের করা হয় ১ টাকার নোট। যা ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রচলন ছিল।
তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, তা হলো, বাংলাদেশে দুই ধরনের মুদ্রা প্রচলতি। একটি সরকারি টাকা বা সরকারি মুদ্রা। অপরটি ব্যাংক নোট।
১,২ এবং ৫ টাকা হচ্ছে সরকারি মুদ্রা। আর বাকি সব নোটই ব্যাংক নোট।
ব্যাংক নোটগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বের করে। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। আর বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় বের করে সরকারি নোট। তাতে স্বাক্ষর থাকে অর্থসচিবের।
এর বাইরেও কখনো কখনো বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বিকৃতীপ্রাপ্ত কোনো ঘটনা, প্রতিষ্ঠান, স্থানকে স্মরনীয় করে রাখতে বাংলাদেশ বাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ স্মারক মুদ্রা, নোট ও ফোল্ডার দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রিন্ট করে থাকে। তবে সেসব স্মারক মুদ্রা ও নোট বিনিময়যোগ্য নয়।
টাকা ছাপা হয় যেখানে:
টাকশাল বা দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন লিমিটেড থেকে ছাপানো হয় টাকা। এই টাকশাল ঢাকার অদূরে গাজিপুরে অবস্থিত। এই টাকশাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগি একটি প্রতিষ্ঠান। টাকশালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে।
তবে এর পুর্বে ভারত, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি থেকে বাংলাদেশের নোট ছেপে আনা হতো। তবে বর্তমানেও নোট ছাপানোর যাবতীয় উপকরণ কালি, রং, কাগজ, নিরাপত্তা সুতা ইত্যাদি এখনও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
টাকার ভবিষ্যৎ:
তবে যুগের হাওয়া বদলে দিয়েছে কাগুজে এ টাকার ব্যবহার। অর্থনীতির বিবর্তনের সাথে সাথে টাকার ব্যবহারেও হয়েছে পরিবর্তন । আগের মতো মানিব্যাগ অথবা পকেট ফুলিয়ে রাখার প্রবণতা হারিয়ে গেছে মানুষের মাঝ থেকে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল কার্ড। ভিভিআইপি থেকে শুরু করে একজন শ্রমিক পর্যন্ত ঝুকছেন এই কার্ডের দিকে। আর এই কার্ডেও যা লেনদেন করে থাকেন তাও ”টাকা”।
তবে একটি কথা না বললেই নয়, এই কাগুজে বা কার্ড যাই হোক না কেনো তা দেশের সরকারের দয়ার উপরই নির্ভরশীল। সরকার যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণ প্রচলিত বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এই টাকা আর যেমুহুর্তে সরকার এর উপর থেকে অনুমোদন সরিয়ে নিবে তখুনি তা মামুলি একটি কাগজ বা কার্ডে রুপান্তরিত হবে।
আরো জানুন:
- আজান প্রচলনের ইতিহাস
- ঢাকা ‘র নাম করনের একটুসখানি ইতিহাস
- কোথা থেকে এলো এই সুস্বাদু বিরিয়ানি
- চা আবিস্কারের ইতিহাস
- জানুন জিন্স তৈরীর ইতিহাস
অনুরোধ: আমি সব সময় চেষ্টা করি ছোটো করে আর্টিকেল লিখার। আমার মতো করে লিখার, মুল তথ্যটি তুলে ধরার। পাঠকের ধৈর্যের যেন বিচ্যুতি না ঘটে।
টাকা এলো যেভাবে একটি অতি ক্ষুদ্র আর্টিকেল; আশা করি সকল পাঠকেরই ভালো লাগবে। যদি ভালো লাগে তবেই আমার কষ্ট সার্থক।
আর একটি বিষয়, টাকা এলো যেভাবে আর্টিকেল তৈরিতে আমি কিছু বানান পরিবর্তন এবং কিছু শব্দ নিজের মতো করে সংযোজন করে থাকি । যেটার দায়ভার পুরোটাই আমার নিজের। আর ব্যর্থতা ও সফলতাও আমার।
পরিশেষে, আর্টিকেল নিয়ে কোন তথ্যের ভুল ভ্রান্তি হলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। সকল ধরনের উপদেশ সাদরে গ্রহন করা হবে। এই নাম্বারে 01783989949 সরাসরি ফোন দিতে পারেন-24/7.
ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, এই দোয়ায়…
আসুন প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করি।
Leave a review

আমাদের সাইট ভালো লেগে থাকলে দয়া করে একটি রিভিউ দিন।
Rating
Reviews
Good job. Go ahead
Excellent job!
আমি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির এডমিন সেকশনে কাজ করছি বহু বছর। আমাকে প্রায়ই এমন ছুটির এপ্লিকেশন গ্রহন করতে হয় আর ষ্টাফদের ছুটির অনুমোদন দিতে হয়। ইতিপুর্বে আমি এমন ধরনেই কোন সফটওয়ার পাই নাই। যা আমার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমি ইদানিং এখান থেকেই ষ্টাফদের অনেক চিঠি তৈরি করছি। যেমন : ছুটির দরখাস্ত, অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট, বেতনের ব্রেকডাউন। যদি এই ওয়েব সাইটটি কন্টিনিউ থেকে যায় আমার মতো অনেকেই উপকৃত হবে।